গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় ছিল বাংলা গানের স্বর্ণযুগ, সে যুগের অন্যতম এক দিকপাল সুর স্রষ্টা ছিলেন নচিকেতা ঘোষ। তাঁর গানে মুগ্ধ হয়নি এমন বাঙালির দেখা ভূভারতেও মিলবে না। নচিকেতা ঘোষ এমনই দোর্দণ্ডপ্রতাপ সুরকার ছিলেন যে, ব্যতিক্রমীভাবে পেশাগত প্রতিদ্বন্ধিতা ভুলে তাঁর একটা গানের প্রথম অংশ লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্য অংশটি লিখেছিলেন গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার। ঘুম থেকে উঠেই গৌরী-পুলককে ফোন করা ছিল তাঁর ডেলি রুটিন। রাতে ঘরের কালো ফোনটা খুলে অন্যত্র সরিয়ে দিতেন। সকালে তাঁর ছেলে আবার যথাস্থানে ফোনটা রেখে দিতেন। ফোনটা রাখতেই, নচিকেতা ছেলেকে বলতেন, 'গৌরীকে (গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার) ধর' বা 'পুলককে (পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়) ধর'।
একটা গান তৈরির চিন্তা দিয়েই তাঁর অধিকাংশ দিনের শুরুয়াৎ হত। ভাল লিরিকের জন্য কী না করতেন তিনি! গানের প্রথম লাইন লিখে বাবা তিন-চার জনকে ডেকে বলতেন গান লিখতে। যাঁরটা ভাল হবে, তাঁরটা নেবেন। গীত রচয়িতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা লাগিয়ে দিতেন। যাতে সেরাটা পেতে পারেন। নিজেও মুখড়া লিখে দিয়েছেন অনেক সময়, 'যদি কাগজে লেখো নাম', 'হাজার টাকার ঝাড়বাতিটা', 'মুকুটটা তো পড়েই আছে', 'এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না'।
এই মুখড়া লেখা, লাইন জোড়ার খেলা নিয়ে এমন সব উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হত যে, বাড়িতে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একসঙ্গে থাকলে দুজনে দুঘরে বসতেন। এইভাবেই দুর্ধর্ষ সব হিট গান তৈরি হয়েছে।
ঘুম থেকে উঠেই রেওয়াজ করতে বসতেন। শ্যামবাজারের বাড়ির তিনতলায় তাঁর বিশাল গানের ঘরে হারমোনিয়াম, তবলা, তানপুরা সাজানো থাকত। মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে সংগীত পরিচালনার কাজ শুরু করেছিলেন নচিকেতা। প্রতিদিন দুবেলা স্নান সেরে পুজো করে, ধুপকাঠি হারমোনিয়ামে ছুঁইয়ে সুর করতে বসতেন তিনি। ১৯২৫ সালের ২৮শে জানুয়ারি কলকাতায় সরস্বতী পুজোর তিথিতে জন্মেছিলেন তিনি। তাই তাঁর বাড়িতে সরস্বতী পুজো হত ধুমধাম করে।
বাবা, দিদি, জামাইবাবু সবাই ডাক্তার। তাই ঘোষ বাড়ির নিয়ম মেনে বাবার ইচ্ছায় তাঁকেও ডাক্তারি পড়তে হয়েছিল! তবে ডাক্তারি পাশ করলেও গানই ছিল প্রাণ। তিনি ডাক্তারি করেননি। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন সুরের জাদুকর হবেন। ছোটবেলা থেকে বাড়িতে সংগীত আবহ দেখেছেন। গত শতকের বিশের দশক, বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীরা তাঁর বাবা ডা. সনৎ কুমার ঘোষের কাছে আসতেন। প্রতি রবিবার ডাক্তার সনৎকুমার ঘোষের শ্যামবাজারের বাড়িতে তাঁর চেম্বার বদলে যেত গানের মজলিশে।
সেই সময়ের প্রায় সব বিখ্যাত উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পীই ওই আসরে গান গেয়েছেন। রবিবারের এই মজলিশে সবচেয়ে উৎসাহী ছিলেন তাঁর বড় ছেলে নচিকেতা ঘোষ। ছোট থেকে সেই পরিবেশে বড় হয়েছেন ঘোষ বাড়ির বড় ছেলে নচিকেতা ঘোষ। ছোট থেকেই সংগীতে তিনি তালিম নিয়েছিলেন উস্তাদ দ্রাবিড় খান এবং সংগীতাচার্য অনাথ বসুর কাছ থেকে। সুর, রাগ, তান নচিকেতার রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। আড্ডা মজলিশ নিজেও ভালবাসতেন।
সঙ্গে চলত খানা, শুধু খাদ্যরসিক ছিলেন না, তিনি খাওয়াতেও ভীষণ ভালবাসতেন। রান্নাও করতেন চমৎকার। একবার কোনও একটা ছবির কাজ করছেন, বাড়ি ভর্তি সংগীত জগতের লোক উপস্থিত। বিধান সরণীর নামজাদা এক হোটেলে ফোন করে বললেন, 'আজ আপনাদের দোকানে জেনারেল কাস্টমারের কাছে আর ফাউল কাটলেট বিক্রি হবে না। সব কাটলেট আমার বাড়ি পাঠিয়ে দিন।' প্রায় ৬০-৭০ পিস! বাড়িসুদ্ধ সকলে সেদিন সেই কাটলেট খেয়েছিল।
এই ভোজন বিলাস থেকে সুর এবং কালজয়ী গানও সৃষ্টি হয়েছে। নচিকেতা ঘোষের কলেজজীবনের বন্ধু গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। ঘোষ পরিবারের বড় থেকে ছোট সকলের সঙ্গে, এমনকি বাড়ির পরিচারকদের সঙ্গেও গৌরীপ্রসন্নের সম্পর্ক ছিল মধুর। ঢোলা পাজামা আর লম্বা পাঞ্জাবি পরে প্রায় প্রত্যেক দিন সকালেই শ্যামবাজারে ঘোষবাড়িতে চলে আসতেন তিনি। চলত গান লেখা, সুর দেওয়ার কাজ। তারই ফাঁকে আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া। কিন্তু সব সময়ে যে সঙ্গীতসৃষ্টি চার দেওয়ালে মধ্যে হত, তা নয়।
অতি পুরনো পরিচারক, যাঁর কোলে পিঠে চড়ে নচিকেতা মানুষ হয়েছিলেন, সেই মন্দকের পুরনো লিলি বার্লির কৌটোয় জমানো পয়সা চুরি করে দুই বন্ধু প্রায়শই চপ কাটলেট খেতেন। এমনই এক দিন পয়সা চুরি করে গোলবাড়ির পরোটা আর কষা মাংস খেতে খেতে গৌরীপ্রসন্ন এক টুকরো কাগজে লিখলেন, 'আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে'। নচিকেতা সুর করে ফেললেন। গাইলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তৈরি হয়ে গেল আরও একটি কালজয়ী গান।
বাংলা চলচ্চিত্র এবং গান দুই দুনিয়ার দুই মহারথী, উত্তমকুমার থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও তাঁর সুরে মুগ্ধ ছিলেন। শুধু কী বাংলা!
সুরকার নচিকেতা ঘোষের সুরে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং মহম্মদ রফি বিনা পারিশ্রমিকে বাংলার জন্য গান গেয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির পরিচালক ছিলেন নীরেন লাহিড়ি। উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন অভিনীত এই ছবির সবকটি গানই অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবু, তার মধ্যে একটি গান নচিকেতা ঘোষ সুর করেছিলেন মহম্মদ রফিকে ভেবেই। গানটি ছিল, 'সভি কুছ লুটাকর...'। এই গানটির সুর যখন মহম্মদ রফি শোনেন, তাঁর এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে, গানটি তিনি বিনা পারিশ্রমিকে গেয়েছিলেন। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় এবং নচিকেতা ঘোষের সুরে মহম্মদ রফি যখন কণ্ঠ দেন। আর সেই গানে পর্দায় লিপ দেন স্বয়ং উত্তমকুমার। সে গান কালজয়ী হবে না! 'ইন্দ্রানী' ছবির গান তৈরি হচ্ছে।
গীতা দত্তকে সঙ্গে নিয়ে হেমন্তর ডুয়েট 'সূর্য ডোবার পালা', 'নীড় ছোট ক্ষতি নেই'। রেকর্ডিং-এর দিন স্টুডিয়োতে রাজ কাপুর ছিলেন, নচিকেতা ঘোষ রেকর্ডিং করাচ্ছেন শুনে ফ্লোরে এসেছিলেন। অ্যারেঞ্জার লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলাল। রেকর্ডিং হল।
'ইন্দ্রাণী'র কাজ করতে করতে হঠাৎই মাঝপথে নচিকেতা ঘোষ ছবির পরিচালক নীরেন লাহিড়িকে বলে বসলেন, ''এই ছবিতে আমি একটা হিন্দি গান রাখব। আর সেটা গাওয়াব মহম্মদ রফিকে দিয়ে।''
শুনে পরিচালক-প্রযোজক সবারই তো মাথায় হত। বাংলা ছবিতে মহম্মদ রফি গাইবেন! রাজি হবেন? আর হলেও বা, কত টাকা চাইবেন, সে টাকা জোগাড় হবে কোত্থেকে? ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না ওঁরা। যে যাই ভাবুক, সকলে কিন্তু একটা ব্যাপারে নিশ্চিত, নচিকেতা ঘোষ গানের জন্য যা ঠিক করবেন, আদায় করেই ছাড়বেন।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নচিকেতা ঘোষকে রফির বাড়ি নিয়ে গেলেন। 'সবি কুছ লুটাকার হুয়ে হাম তুমহারে'- গান শুনে মহম্মদ রফি তো মোহিত হয়ে গেলেন। রেকর্ডিং করবেন, রাজি হয়ে গেলেন। প্রযোজকের কথামতো নচিকেতা বললেন, 'ওঁরা কিন্তু আপনাকে পাঁচশো টাকার বেশি দিতে পারবেন না।' পাঁচশো টাকায় রেকর্ডিং শুনেই চমকে উঠলেন রফি।
রফির আঁতকে ওঠা দেখে নচিকেতা ঘোষ উঠে পড়ে দরজার দিকে চলে যাচ্ছেন, পিছু ডাকলেন তিনি। বললেন, 'ছাড়ুন, ছাড়ুন। ও সব কথা ছাড়ুন। আপনার জন্য এ গানটা আমি বিনা পয়সায় গেয়ে দেব।' তৈরি হল ইতিহাস।
১৯৫৩ সালে নচিকেতার সংগীত পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র 'বৌদির বোন' মুক্তি পায়। ১৯৫৪ সালে মুক্তি পায় জয়দেব, তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। এরপর তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক চলচ্চিত্রে সুর করেছেন, রেকর্ডের জন্য গান তৈরি করেছেন। গগনচুম্বী সাফল্য, আর একের পর এক হিট গানে বাংলার সংগীতপ্রেমী মানুষকে পাগল করে দিয়েছেন। সংগীতের বেলায় তিনি ছিলেন একেবারে চূড়ান্ত রকমের পারফেকশনিস্ট।
নচিকেতা ঘোষের মতো পারফেকশনিস্ট খুবই কম এসেছেন। ধন্যি মেয়ের 'যা যা বেহায়া পাখি' গানটায় অনেক পাখির ডাক আছে। যা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লেখায় ছিল না। ওটা নচিকেতা ঘোষের উদ্ভাবনী শক্তির এক অনন্য নিদর্শন। পাখির ডাকগুলো করিয়েছিলেন হরবোলা মন্টু বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে। 'ঠাকুরমার ঝুলি' রেকর্ডিং করছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। রাক্ষসির গলায় 'মুড়মুড় খাই আগে অজিতের মুণ্ডি, কুড়মুড় পরে খাই কুসুমের পিণ্ডি।' এই কুড়মুড় আওয়াজটা তৈরি করার জন্য উপস্থিত সকলের হাতে লেড়ো বিস্কুট ধরিয়ে দিয়েছিলেন সুর স্রষ্টা।
তারপর সকলে মিলে মাইকের সামনে সেই লেড়ো খাওয়ার আওয়াজই ছিল রাক্ষসির কুড়মুড়ানি। একবার স্টার থিয়েটারে এক সংগীত সম্মেলনে রবিশঙ্করের সেতার শুনতে গিয়েছেন। ভোর তিনটে, রবিবাবু বিলম্বিত থেকে দ্রুতিতে যাবেন। নচিকেতা কানে আঙুল দিয়ে দৌড়ে স্টার থিয়েটার থেকে বাড়ি চলে এলেন। যাতে কানে আর অন্য সুর না ঢোকে। এসেই হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়লেন। ফোন করলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে। তিনি কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, 'কী করে আসব! বাস চলাই তো শুরু হয়নি!' নচিকেতা বললেন, 'বাস চলা আরম্ভ হলেই চলে আয়। না হলে গানটা অন্য কাউকে দিয়ে দেব।' তৈরি হল, 'বনে নয়, মনে মোর পাখি আজ গান গায়।' তার পর মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে বললেন, 'আয়, একটা হিট গান গাইবি।'
এমন হুটহাট গান কিন্তু অনেক তৈরি হয়েছে, তখন মুম্বই থাকত ঘোষ পরিবার। দুই কন্যা শ্রাবণী ও সম্পূর্ণা আর ছেলে সুপর্ণকে নিজে ড্রাইভ করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন নচিকেতা ঘোষ। সেই রকমই একদিন ফেরার পথে তিনি সিগারেট কিনতে গিয়ে পাজামা পাঞ্জাবি পরা একজনকে লক্ষ্য করলেন। যেচে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আপনি বাঙালি?' তিনি 'হ্যাঁ' বলেই নিজের পরিচয় দিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর নাম মুকুল রায়। বিমল রায়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট। টুকটাক গানও লিখছেন। তাঁকে সন্ধ্যায় বাড়িতে ডাকলেন। মুকুলবাবু গিয়েছিলেন, তাঁর লেখা একটা গান দেখালেন, 'তার আর পর নেই, নেই কোনও ঠিকানা।' সঙ্গে সঙ্গে হেমন্তকে ফোন। বললেন, 'এসো, একটা হিট গান গাইবে।' তখনই সুর তৈরি শুরু হল। গানের মাঝে 'তার পর?' বলবে একটি মহিলা কণ্ঠ। কিন্তু তখন অত রাতে মেয়ে কোথায় পান! ঠিক হল, মুকুল রায়ের স্ত্রী, চাঁদ উসমানি ওটা বলবেন। চাঁদ সেই সময়ের নামী অভিনেত্রী। রাত প্রায় নটা, মুকুল রায় বাড়ি গিয়ে চাঁদকে নিয়ে এলেন। ওই রাতেই গান তৈরি হয়ে গেল।
আবার একবার 'ফরিয়াদ' ছবির গান তৈরি হচ্ছে, সেই সময় সুচিত্রা সেন নচিকেতাকে বলেছিলেন, তিনি রেকর্ডিংয়ের আগে গানগুলো একবার শুনতে চান। তিনি শুনলেন। ছবির একটা গান ছিল 'নাচ আছে গান আছে, রূপেরও তুফান আছে ...' আশা ভোঁসলে গানটি গাইবেন। এই গানের মাঝে হাসিও ছিল।
গান শুনে সুচিত্রা সেন নচিকেতাকে বললেন, 'আপনি এক্ষুনি হাসিটা রেকর্ড করে নিন। ওটা আমার গলায় থাকবে।' তিনিও তা-ই করলেন। রেকর্ডিংয়ের আগে মুম্বইয়ে আশাজিকে গানটা বুঝিয়ে, বলে দিলেন হাসির জন্য কতটা সময় ফাঁকা রাখতে হবে। আশা ভোঁসলে হাসিটা শুনলেন, তার পর সুরকার নচিকেতা ঘোষকে বললেন, তাঁকে একবার সুযোগ দেওয়া হোক হাসিটা হাসার জন্য। আশাজি এমন হাসি হাসলেন যে, মিসেস সেনও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নচিকেতা আশাজিকে বলেছিলেন, তুমি মিসেস সেনের মতো হাসতে পারবে না। ব্যস! তাতেই কাজ হয়েছিল।
সঙ্গীত পরিচালক নচিকেতা ঘোষের জীবনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। 'জয়দেব' ছবিতে সুর দিয়ে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। চল্লিশের দশকের শেষ থেকে ষাটের দশকের শুরু পর্যন্ত এই সংগীতকারের জীবন ছিল স্রোতের মতো। ফিল্মি গানের পাশাপাশি বেসিক গানেও সুর দিতেন। যা পুজোর সময় বা নববর্ষে প্রকাশ পেত। নচিকেতা ঘোষের সুরেই লতা মঙ্গেশকর প্রথম বাংলা গান গেয়েছিলেন।
পঞ্চাশের দশকে এমন শিল্পী কমই ছিলেন, যে নচিকেতা ঘোষের সুরে প্লেব্যাক করেননি। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, পিন্টু ভট্টাচার্য প্রমুখেরা বারবার কণ্ঠ দিয়েছিলেন তাঁর সুরে। ষাটের দশকের শেষের দিকে সাত-আট বছর মুম্বইয়ে থেকে তিনি চলে আসেন কলকাতা। ১৯৬৯ সালে 'শেষ থেকে শুরু' ছবি দিয়ে বাংলা গানের ইতিহাসে নচিকেতা ঘোষের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হল। ওই ছবিতে কিশোরকুমার গাইলেন 'বল হরি হরি বল' সারা জীবনে নচিকেতার সুরে ওই একটা গানই গেয়েছিলেন তিনি! ওই বছরই উত্তমকুমার সুপ্রিয়াদেবীর 'চিরদিনের' ছবিতে নচিকেতা ঘোষের সুরে মান্না দের কণ্ঠে 'মানুষ খুন হলে পরে' এবং 'ফুলপাখি বন্ধু আমার' সুপারহিট হল। প্রত্যাবর্তন করলেন নচিকেতা ঘোষ।