বয়সে খুদে বিবেক-এ নয়

সিরিয়া যখন ধ্বংসস্তূপ-এ পরিণত হচ্ছে, সেই পরিস্থিতিতে সেই দেশেরই এক খুদে কিছু টাটকা ফুল তুলে দিচ্ছে এক সশস্ত্র সৈনিকের হাতে, ২১ শতকের ইন্টারনেটীয় পৃথিবীতে সে ছবি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। শিশুরা প্রকৃতই 'কাঁচা', 'নতুন ভোরের মতো', এবং 'দৃষ্টান্তমূলক' হয়, তাদের ভিতর চট করে অন্ধকার কিছু ঢুকে পড়তে পারেনা, তারা সবকিছুই উজ্জ্বল-চকচকে দেখে আর দৌড়ে বেড়ায় অফুরন্ত কৌতুহলের দিকে। পৃথিবীর নানা রকম গরম, বিপদজনক, অস্বচ্ছ হাওয়ায় ধৈর্য যখন ওষ্ঠাগত, তখন নরম প্রলেপে মন-জীবন জুড়িয়ে দিতে পারে নির্মল শিশুরাই।

সম্প্রতি দু'টি ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে দেওয়ালে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। সাড়া ফেলে দিয়েছে দুই খুদে।

ঘটনা ১-

মিজোরামের সাইরাঙের এক খুদে। মনের আনন্দে সাইকেল চালাচ্ছিল সে, এমন সময় পাশের বাড়িরই এক মুরগি ছানা চলে আসে সাইকেলের সামনে। হতভম্ব হয়ে পড়ে সাইকেলের গতি আটকাতে না পারায় আহত হয় সেই মুরগি ছানা টি। সময় নষ্ট না করে পাশের এক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাকে নিয়ে যায় সেই খুদে। শুধু তাই নয়, সেখানে গিয়ে বলে, "আমি ভুল করে ওকে আঘাত দিয়ে ফেলেছি, আমার কাছে জমানো ২০ টাকা আছে, তোমরা ওকে একটু সুস্থ করে দাও।" এ হেন ঘটনা ঘটিয়ে সেই খুদে এখন হয়ে উঠেছে দৃষ্টান্তমূলক।

ঘটনা ২-

কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আর এক শিশুও হয়ে উঠেছে দৃষ্টান্তমূলক। বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান সে দেশ। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের যথেষ্ট চেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। এই ঘটনার মধ্যেই 'নাঈম' নামের এক শিশুর ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত একটি পাইপের ফাটা অংশ দুই হাত ও পায়ের সাহায্যে পলিথিন পেঁচিয়ে চেপে ধরে আছে সে, চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ লেগে রয়েছে। সেই ছবি ভাইরাল হওয়ার পর জানা গিয়েছে বাংলাদেশের বৌবাজার এলাকার খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাঈম। পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া সে। অগ্নিকাণ্ডের সময় সেও অন্যান্যদের মত কৌতুহলবশত ঘটনাস্থলে আসে। তখনই তার চোখে পড়ে ফায়ার সার্ভিসের পাইপ ফেটে জল বেড়িয়ে পড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে সে একটি পলিথিন জড়িয়ে ফাটলের জল আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে। টানা ২০ মিনিট ওভাবেই বসে থাকে সে। পরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে ছোট্ট খুদে নাঈম বলেছে, 'আমি অনেক পড়াশোনা করতে চাই। বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চাই।'

নাঈমের এই ইচ্ছে পূরণ করতে এগিয়ে এসেছেন সিলেটের গোপালগঞ্জ উপজেলার বাদেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক সামি৫ হাজার ডলার পুরস্কার সঙ্গে তার পড়াশোনার খরচ যোগান দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি।

শুধুমাত্র উল্লেখ্য দুই ঘটনার শিশুদেরকেই নয়- বাহবা, উপযুক্ত শিক্ষা আর প্রবল উৎসাহে ভরিয়ে দিতে হবে পৃথিবীর প্রত্যেক শিশুকেই, কারণ এইসব চারাই একদিন পরিণত গাছ হয়ে উঠবে, ছায়া দেবে, শস্য দেবে, জীবনের কাণ্ডারি হয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করবে পরম আদর্শে। সত্যিই তো 'ছেলেমানুষ' দের এমন বিবেকের সামনে তাবড় তাবড় সমঝদার 'বড়' মানুষদেরও মাথা নুয়ে আসে। তারা বয়সে খুদে হলেও, বিবেক-এ নয়। হতে পারে শিশুদের নির্মলতার দিকে তাকিয়েই চারণ-কবি বব ডিলান গান বেঁধে ফেলেছিলেন- 'It's not dark yet...' বা 'এখনও অন্ধকার ঘনায়নি...'

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...