বিনোদন-ই বটে। মকরসংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে পুণ্যস্নান করার জন্য প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়েছে গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতটে। সারা দেশ থেকেই ভক্তরা আসেন এখানে। এবং বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাজ্য সরকার অনেক রকম প্রকল্প নিয়েছেন এই মেলাকে সর্বাঙ্গীন সফল করার উদ্দেশ্যে। এবারের সাগরমেলার থিম হল পরিচ্ছন্নতা। বলা হচ্ছে, একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত অর্ধকূম্ভর তুলনায় গঙ্গাসাগর মেলা অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে এবারে। নেওয়া হয়েছে রাস্তাঘাট এবং যানবাহনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পদক্ষেপ, যাতে কেউ কোনো রকম সমস্যায় না পড়েন। ভেসেলের ব্যবস্থাও উন্নত করা হয়েছে। সেখানে পৌঁছেও যাতে থাকবার কোনো রকম অসুবিধে না হয়, দেখা হয়েছে সেই ব্যবস্থাও।
তবু যেন সকলের জায়গা হচ্ছেনা। আসলে প্রথম দিন(১৩ জানুয়ারি) হিসেবে যাঁরা সবে এসেছেন, তাদের একটু অসুবিধে হচ্ছে এবারে। কারন অনেকেই এ বছর আগে আগে এসে গেছেন, সাগর স্নান করে শাহীস্নান করতে কুম্ভ যাবেন বলে। তাই তাদের সঙ্গে জায়গা শেয়ার করতে হয়ত অসুবিধে হচ্ছে। তবে সরকারি তরফে জানানো হয়েছে সকলের জন্য ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যদিও ভক্তরা এ নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। তাঁদের কথায়, পুন্য করতে হলে একটু-আধটু কষ্ট করতে হয়।
এসবের মধ্যেও যা দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, তা হল- এবারের ম্যুরাল পার্ক। ভক্তদের যাতে একটু ভালো লাগে, তারা যাতে বিনোদনেরও রসদ খুঁজে পান, পুণ্য করতে এসে, সেই দিকে খেয়াল রেখেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর আছে সাধু সন্তদের বিনোদনের ব্যবস্থা। এসেছেন শাঁখ বাবা, চশমা বাবা। সুদূর হিমালয়ের কোল থেকে সংগ্রহ করে এনেছেন পাঞ্চজন্য। তাতে রয়েছে সুদর্শন চক্র, গণেশের মূর্তি। ভেতরে শেষনাগের চিহ্নও রয়েছে। মুখে তাঁর শুধুই কৃষ্ণ নাম, গলায় রয়েছে রুদ্রাক্ষের মালা। এ হেন শাঁখবাবার দেখা পাওয়া যাবে গঙ্গাসাগরের তটের এদিক-ওদিক। শাঁখবাবার মতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন এই শাঁখ বাজিয়েছিলেন আর এখন তিনি বাজাচ্ছেন- একটানা এক থেকে দেড় মিনিট কখনও বা দু মিনিট স্থায়ী হচ্ছে তাঁর শাঁখ বাজানো-যা শুনে ভীড় জমাচ্ছেন মেলায় উপস্থিত অনেকেই। তাঁর মতে আবার মহাযুদ্ধ আসন্ন। আর একটু এদিক-ওদিক তাকালেই চোখে পড়বে সানগ্লাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জটাধারী আর এক বাবা। জটায় নাকি তাঁর বেশ জোর। জটা দিয়ে চার চাকা গাড়িও চালিয়ে দিতে পারেন। তিনি দেখাচ্ছেন শরীরের নানান কসরত। পা থেকে শরীরের সমস্ত অঙ্গ দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন তিনি। একটি লাঠি দিয়ে শরীরের একটি অঙ্গকে পেঁচিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। কেদারনাথ থেকে সরাসরি এইবার প্রথম তিনি গঙ্গাসাগরে এসেছেন, ভিড় উপচে পড়ছে সেখানেও। ময়ূরের পেখম দিয়ে তিনি আশীর্বাদ বিলোচ্ছেন আর বলছেন চারপাশ প্রচন্ড দূষণে ভরে গিয়েছে যা খালি চোখে দেখা যায় না, সানগ্লাস পরে সেগুলি দেখে তিনি তা পরিশুদ্ধ করে দিচ্ছেন। তাছাড়া রয়েছেন ৩০-৪০ জন নাগা সন্ন্যাসী। এখন শুধু অপেক্ষা কয়েক ঘন্টার, তারপরেই হবে পুণ্যস্নান।