আমাদের আশপাশে নিত্য ঘটে চলেছে কত ঘটনা, কত দুর্ঘটনা। আমরা সেগুলো নিয়েই বিচার বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত। কিন্তু একটু চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটালে দেখব আমাদের এই পৃথিবীতেই রয়েছে এমন কত বিষয়, যা আমাদের বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। সেই খোঁজ আমাদের জানার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দেয়। আসুন আমরা এই রকমই কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে নিই আজকের এই নিবন্ধে।
১. গ্রামের নিজস্ব সূর্য / নিজস্ব সূর্যের গ্রাম : ইতালিতে অবস্থিত ভিগানেল্লা এমন গ্রাম যার নিজস্ব সূর্য আছে। গ্রামটি উপত্যকার একেবারে নিচের দিকে অবস্থিত হওয়ায় চারিদিকে উঁচু পর্বত বেষ্টিত। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এখানে সূর্যালোক প্রবেশ না করায় শীতকালে বেঁচে থাকা দুস্কর হয়ে ওঠে। চাষাবাদ ও দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় দিন সূর্যালোক এখানে প্রবেশ করে আর সেই খুশিতেই গ্রামের মানুষ উৎসবে একাত্ম হয়ে ওঠে। কিন্তু ২০০৬-এর আগে পর্যন্ত কোনো সমস্যার সুরাহা ছিল না। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ও গবেষক চিন্তান্বিত হয়ে উপায় বার করেন। ২০০৬ সালে কিছু ইঞ্জিনিয়ার পরিকল্পনা করে সর্বোচ্চ স্থানে আয়না লাগান - যার ক্ষেত্রফল ৪০ বর্গমিটার, গ্রাম থেকে প্রায় ৮৭০ মিটার উচ্চতায় লাগানো হয় সেই আয়না - ফলে সূর্য রশ্মি এর উপরে পড়ে ও প্রতিফলিত হয়ে ছড়িয়ে যায়। ফলে সারা বছর গ্রামের মানুষ সূর্যালোক পেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসে। তারা সোলার পাওয়ারের ব্যবস্থা করেন, পুরো প্রজেক্টে খরচ হয় ১ লক্ষ ইউরো, তবে জীবনের বিনিময়ে এ মূল্য অতি সামান্য।
২. ঘুমন্ত গ্রাম : ২০১৪ সালে কাজাকিস্তানের কালাচিতে এক অদ্ভুত রোগের উপদ্রব দেখা যায়। যেখানে মানুষরা দিনের পর দিন ঘুমোতে থাকে, আবার জাগলে তাদের স্মৃতি ভ্রংশ হয়। বৈজ্ঞানিকরা প্রাথমিক পর্যায়ে এর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পান নি। তবে এই গ্রাম এই অদ্ভুত রোগের কারণেই 'স্লিপিং হলো' নামে পরিচিত। বছর দুয়েক আগে জানা যায় নিকটবর্তী ইউরেনিয়াম খনির তীব্র বিক্রিয়ায় এই রোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে এই গ্রামের ১৪% মানুষ এই রোগাক্রান্ত, এমনকি পোষ্যরাও এর থেকে মুক্ত নয়।
৩. ভুলোমনের গ্রাম : নেদারল্যান্ডে এমন একটি গ্রাম আছে। আমস্টার্ডামের কাছে অবস্থিত এই গ্রামের মানুষের এই এক অদ্ভুত প্রবণতা আছে। এই গ্রাম ডিমনেশিয়া নামে পরিচিত। গ্রামে ১৫০ টি বাড়ি আছে। এখানকার লোকেরা জিনিস কিনে দাম দিতেও ভুলে যান। আসলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় জিনগত ভাবেই অতি অল্প বয়সে এরা আলজাইমারে ভোগে। যার চিকিৎসা থাকলেও সম্পূর্ণ মুক্তির উপায় নেই।
৪. কুং -ফু- ভিলেজ : চীন দেশের একটি গ্রাম কুং- ফুর জন্য বিখ্যাত। মধ্য চীনে অবস্থিত তিয়াং -জু পর্বতমালায় ঘেরা - নাম গানজিডং। ‘ডং’ উপজাতির মানুষরা এই মার্শাল আর্ট চৰ্চা করেন। আশ্চর্যের যে প্রত্যেকে এই গ্রামের মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে এই কৌশলে বিশেষ পারদর্শী। প্রতিটি মানুষ কৃষি কাজের পাশাপাশি এই আর্ট পছন্দ করেন। কথিত আছে যে এক সময় হিংস্র জন্তুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার্থে তারা এই কৌশল ব্যবহার করতো অস্ত্র সহযোগে, যা ঐতিহ্যগত ভাবে আজ প্রচলিত।
৫. দরজাহীন বাড়ি : মহারাষ্ট্রের গ্রাম শনি সিগনাপুর। এখানে শনি দেবের বিশাল প্রতিকৃতি আছে এবং গ্রামবাসীর ধারণা শনি দেব তাদের রক্ষা করেন। কথিত আছে প্রবল বন্যায় একটি কালো পাথরের চাঁই ভেসে আসে - লোকেরা লাঠি দিয়ে স্পর্শ করলে তাতে লাল রক্তের স্রোত ভেসে আসে, ওই দিন গ্রাম প্রধান স্বপ্নাদেশ পান ওই পাথর প্রতিষ্ঠার জন্য। এর পর ওই পাথর প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামের মাঝে। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করতে থাকেন যে তাদের রক্ষা করার জন্য শনি দেব আছে। সেই বিশ্বাস থেকেই তারা দরজায় কোনো তালা দেন না। আজও সেই বিশ্বাস কার্যকরী।
৬. যমজদের গ্রাম: কেরালার মালাপুরাম জেলার কোধিনি গ্রামে অনেক ঘরে যমজ আছে। ২০০৭ সালের হিসেবে ২০০০ জনের মধ্যে ৫৭০ জন যমজ এবং প্রতি বছর তার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই গ্রাম “টুইন টাউন বা ভিলেজ অফ টুইন্স” নামেও পরিচিত। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে এই গ্রাম এই বিচিত্র কারণে জায়গা করে নিয়েছে।
৭. রাস্তা বিহীন গ্রাম: নেদারল্যান্ডের এই গ্রাম যেখানে কোনো রাস্তাই নেই। নাম গেইটওরন - যা “নেদারল্যান্ডের ভেনিস” নামে খ্যাত। এখানে ২৬২০জনের বাস, যাতায়াতের মাধ্যম একমাত্র জলযান। জীবিকা জলনির্ভর। একাধিক ব্রিজ, ক্যানেল আছে এখানে। যানবাহন না থাকায় একপ্রকার এই ছোট্ট ভেনিস দূষণ মুক্ত, পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় ও বিস্ময়ের।
এক কথায় বলতে পারি বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকুই বা জানি - কোথায় কত আশ্চর্যজনক-স্বপ্নের দেশ আছে, ঘটনা আছে। তবে আগ্রহের শেষ নেই -বিষয়ের সমাপ্তি নেই।