মা হওয়া প্রতি নারীর জীবনে একদিকে যেমন আশীর্বাদ সেরকমই অন্যদিকে অভিশাপ। একজন মায়ের শরীরে যখন তার ছোট্ট শিশুটি বেড়ে ওঠে তখনই মায়ের শরীরে হতে থাকে পরিবর্তন। ত্বক থেকে শুরু করে চুল পরিবর্তন আসে সবকিছুতেই। ত্বকে ব্রণ বেরোনো থেকে শুরু করে অতিরিক্ত রোমের উপস্থিতি জানান দেয় তার মাতৃত্বের। অন্যদিকে চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া সবটাই হতে থাকে। একজন মায়ের শরীরে যখন ভ্রুনের প্রতিস্থাপন হয় তখন থেকেই শরীর জুড়ে চলতে থাকে হরমোনের পরিবর্তন। হরমোন হলো এমন একটি জিনিস যার সাথে আমাদের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, শরীর সুস্থ থাকা, ত্বকের সৌন্দর্য্য সবটাই নির্ভর করে। এমনকি একজন পুরুষ বা নারীকে পরিপূর্ণ হওয়ার জন্যেও নির্ভর করতে হয় হরমোনের উপর।
মাতৃগর্ভে যদি পুত্র সন্তান আসে তাহলে তার শরীর থেকে নির্গত হতে থাকে টেস্টোটেরোন হরমোন যা সাধারণত পুরুষ হরমোন বলেই পরিচিত তার প্রভাব নারী শরীরে বেশি হয়ে যাওয়ার কারণেই নানা বিপত্তি দেখা যেতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে আবার নারী দেহের হরমোন অর্থাৎ ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পরিমানের উপর নির্ভর করেও শরীরে নানা পরিবর্তন আসতে পারে। এর জন্য প্রতি উড বি মাদার চায় বেবি আসার আগে তার সৌন্দর্য্যে যেন কোনো ভাটা না পড়ে। তাই এই সময় ত্বক ও চুলের যত্ন কিভাবে নেবেন চলুন জেনে নিই......
প্রথমেই আসা যাক চুলের কথায়, চুল এই সময় প্রচন্ড রুক্ষ হয়ে যায় তাই চুলের প্রপার যত্ন নেওয়া এই সময় অত্যন্ত জরুরি। এই সময় চুলের গোড়া ভীষণ হালকা হয়ে যায়। এটি কেন ঘটে তার পিছনে নিশ্চই কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তাই এই সময় খুব টেনে চুল না বাঁধাই ভালো। বেশি শক্ত করে চুল বাঁধলে চুলের গোড়া আরও পাতলা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। গর্ভাবস্থায় যতটা সম্ভব কমবার চুল ধোবেন। এই সময় যেহেতু চুলের গোড়া আলগা থাকে তাই বারবার চুল ধুলে তা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই রোজ শ্যাম্পু করার অভ্যেস থাকলে তার বদলে সপ্তাহে তিনদিন সালফেট বিহীন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল ধুয়ে নিতে পারেন। এতে চুলের ক্ষতি হবে না বরং ভালোই হবে। ভিটামিন সি এবং ডি চুলের জন্য খুব ভালো। তাই খাদ্যতালিকায় যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার রাখার চেষ্টা করুন। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো বায়োটিন প্রোটিন। তাই এই সময় বায়োটিনযুক্ত খাবার খেলে চুল ভালো হয়। যেমন ডিমের কুসুম। ডিমের কুসুমে বায়োটিন থাকে। এই জাতীয় খাবার খেলে চুল ভালো হয়। হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে তাও বাড়িতেই বানিয়ে নিন। ডিমের সাদা অংশ এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে বানিয়ে নিন মাস্ক। এছাড়াও সারারাত ভিজিয়ে রাখা মেথির জল দিয়েও চুল ধুতে পারেন। মেথির জলও চুলের জন্য উপকারী। এই সময় চুলে তেল দেওয়া একদমই বন্ধ করবেন না। নিজের পছন্দের তেল এই সময় মাথায় হালকা হাতে মালিশ করুন। এতে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। নিজে যদি মালিশ না করতে পারেন তাহলে কারোর সাহায্য তো নিতেই পারেন।
এবার আসা যাক ত্বকের পরিচর্যার কথায়। গর্ভাবস্থায় মুখমণ্ডলে কালো ছোপ আসতে পারে। শরীরের ভিতর হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ত্বকেও আসে নানা পরিবর্তন। সাধারণত সন্তান জন্মানোর পরেই এইসব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এই সময় ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করাই ভালো। ত্বক পরিষ্কার করার জন্য গ্লিসারিন মিশ্রিত ফেস ওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। এই সময় ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায় তাই দিনে দুবারের বেশি মুখ ধোওয়া উচিত নয়। এই সময় ত্বকের এমন পরিস্থিতি থাকে যে হালকা রোদে বেরোলেও ত্বকে ট্যান পড়ে যায়। তাই এই সময় সানস্ক্রিন না লাগিয়ে বেরোনোই উচিত নয়। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে এই সময় ব্রণর সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তাই যতটা সম্ভব কম মেকআপ করুন।
তাহলে জেনে নিলেন এই বিশেষ সময়টিতে কিভাবে ত্বক ও চুলের যত্ন নেবেন। এইসব পদ্ধতি মেনে চলুন। আর সবচেয়ে বড় কথা, মন ভালো রাখুন দেখবেন সব সমস্যা চলে যাবে আর ত্বক হয়ে উঠবে ঝলমলে।