...."আমার জীবন খুব ছোট। গুজবে কান দেওয়ার সময় আমার নেই"...
সত্যিই কোনো গুজবে কান দেন নি তিনি। সৃজন করে গেছেন একের পর এক সাহসী উপন্যাস। জোসেফ কনরাড, চার্লস ডিকেন্সের মতো ইংরেজি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হয়েছে বারবার। বহুবার বহু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি। তবুও তাঁরই রচনা "দ্য ম্যাজিস্টিক ম্যাসিওর" বা " আ হাউস অফ মিস্টার বিশ্বাস", "অ্যামং দ্য বিলিভার্স", "দ্য এনিগমা অফ অ্যারাইভ্যাল".. এর মতো কালজয়ী উপন্যাস। তিনি .... বিখ্যাত এবং বিতর্কিত সাহিত্যিক স্যার বিদ্যাধর সুরজপ্রসাদ নাইপল যাকে আমরা "ভি. এস. নাইপল" নামেই চিনি।
১৯৩২ সালের ১৭ই আগস্ট ব্রিটিশ শাসিত ত্রিনিদাদের ছাগুয়ানায় এক হিন্দু পরিবারে জন্ম হয়েছিল 'ভিদিয়াধর(নিজের নাম তাইই বলতেন তিনি) সুরজ প্রসাদের। বাবা শিপ্রসাদ নইপাল ছিলেন ত্রিনিদাদ গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক। মা দ্রোয়াপাতি নাইপল ছিলেন এক পড়ন্ত জমিদার পরিবারের মেয়ে। বাবার সঙ্গে এই জমিদার পরিবারের সারাক্ষণ ঝামেলা লেগেই থাকত। আর শৈশবের এই অভিজ্ঞতাই ভিত গড়ে দিয়েছিল নাইপলের বিখ্যাত উপন্যাস " আ হাউস অফ মিস্টার বিশ্বাস" এর। এই উপন্যাসকে বলা হয় তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। এটি লিখতে তাঁর তিন বছর সময় লেগেছিল।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি লেখালিখি শুরু করেন। তিনি
১৯৭১ এ "ইন আ ফ্রি স্টেট" বইটির জন্য বুকার পুরস্কার পান। ১৯৯oতে পান নাইটহুড। ২০০১ এ সাহিত্যে নোবেল জয় করেন তিনি। পঞ্চাশ বছরের সাহিত্য জীবনে তিরিশটির ও বেশি গ্ৰন্থ রচনা তাঁর।
গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নইপালের মতো দ্বিতীয় কোনো লেখক ছিলেন না যিনি একই সঙ্গে চূড়ান্ত প্রশংসিত এবং তুমুল নিন্দিত হয়েছিলেন। তাঁর লেখা এবং মন্তব্য নিয়ে বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্বদেশ-বিদ্বেষী, পরদেশ-বিদ্বেষী, বর্ণবিদ্বেষী, লিঙ্গবৈষম্যে বিশ্বাসী, নিজের সময়ের এবং নিজের আগেকার সময়ের লেখক-বিদ্বেষী, খ্রীষ্টান ধর্ম বিরোধী, ইসলাম বিরোধী... ইত্যাদি বহু অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু বিতর্ক নিয়ে কোনোদিনই তাঁর মাথাব্যথা ছিল না। উল্টে তিনি বলতেন "কোনো লেখক যদি বিতর্ক তৈরি করতে না ই পারে তাহলে ধরে নিতে হবে সেই লেখকের মৃত্যু হয়েছে"..
তারপরও তিনি প্রিয় লেখক। তাঁর রচনা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। "ইন আ ফ্রি স্টেট", "আ বেন্ড ইন দ্য রিভার", "আ হাউস অব মিস্টার বিশ্বাস" এই সবগুলো উপন্যাসের মূল বিষয় হলো অস্তিত্বের সংকট - মধ্যবিত্তের সংগ্ৰামের কথা বারবার উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। হয়তো মানুষের জীবনের প্রকৃত ছবি তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে বলেই হাজার বিতর্ক সত্বেও পাঠকরা বারবার তাঁর লেখাকে ভালোবেসেছে।
... "লেখক হতে গেলে তোমাকে পৃথিবীর পথে বেরোতে হবে, পৃথিবীতে ঝুঁকি নিতে হবে, পৃথিবীতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হবে, পৃথিবীর খোঁজে বেরোতে হবে" - ভি.এস. নাইপল
২০১৮-র ১১ই আগস্ট তিনি তাঁর এই প্রিয় পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে পাঠকের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবেন স্যার "ভিদিয়াধর সুরজপ্রসাদ নাইপল"..