বহু মন্দিরের সেই পুরোনো রীতিনীতি কিংবা প্রথা, সব কিছুই এখন পালটে গিয়েছে। বছর আগের সেই প্রথা আজ আর দেখা যায় না। তেমনই সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দিরের প্রথা এখন অনেক পালটে গিয়েছে।
গত রবিবার অর্থাৎ কালীপুজোয় গোটা রাজ্যবাসী কালীমায়ের আরাধনায় মেতে থাকলেও, সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর বোধন হয়ে গিয়েছে ন'দিন আগেই। এখানে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে বোধন হয় মায়ের। সেখানকার বাসিন্দারা মায়ের আরাধনায় মেতে গিয়েছিলেন।
জানা গিয়েছে, ডাকাত কালীর পুজোয় বোধনের পর গত এক সপ্তাহ ধরে অষ্টমঙ্গলার উপাচার চলেছে । গ্রামের মহিলারা বাড়ি থেকে বরণডালা এনে মাকে বরণ করে নেন। এরপর পুরোহিত দূর্বা, হলুদ সহকারে দেবীমূর্তি এবং শিবের হাতে সুতো বেঁধে দেন।
কালীপুজোর পরের দিন, অর্থাৎ সুতো বাঁধার আটদিনের মাথায় ফের ডাকাত কালী মাকে বরণ করে, গ্রামের মহিলারা বরণডালা ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। গোধূলি বেলায় প্রতিমার হাত থেকে খোলা হবে সুতো এবং মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।
পরের দিন সকাল ৬টায় পুনরায় খোলা হবে মন্দির। প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের পুরনো সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর মন্দির। এখনও একাধিক প্রাচীন রীতিনীতি মেনে পুজো-অর্চনা করে আসছে বাসিন্দারা। প্রত্যেকেই নিষ্ঠাভরে ভক্তি ভরে পালন করেন কালী ভক্তরা।
বছরে একবার, আজকের দিনেই মায়ের ঘটে মালিক বাড়ির আনা গঙ্গা জল ঢালা হয়। সেই সময় বন্ধ থাকে মায়ের গর্ভগৃহের দরজা।
পুজোর সকালেই মাকে ফল, মিষ্টি,লুচির সঙ্গে চালকড়াই ভাজা ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়েছে। এছাড়া দেওয়া হয়েছে খিচুড়ি ও পায়েসের ভোগ।
ডাকাত কালী মায়ের অমবস্যার তিথি ধরে চার প্রহর বিশেষ পুজো হয়।
ডাকাত কালী মা পূজিত হন বলে পুরুষোত্তমপুর, মল্লিকপুর এবং জামিন বেড়িয়া গ্রামে আর কোনও কালীপুজো হয় না। বাড়িতে রাখা যায় না অন্য কোনও দেবীর ছবি। তাই এলাকার সমস্ত মানুষ বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠানের আগে মায়ের কাছে পুজো নিবেদন করেন ।
রবিবার কালীপুজোর দিন পুরোহিত ভোরবেলায় মাকে স্নান করিয়ে বেনারসি শাড়ি পরিয়েছেন। মাথায় মুকুট পরিয়ে কপালে টিপ আঁকা হয়েছিল। কানে দুল, পায়ে নূপুর-সহ অলঙ্কারে সুন্দর করে সাজানো হয় মাকে।
সেদিন সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্তদের ঢল নেমে গিয়েছে। তাঁরা পুজো-অঞ্জলি দিয়ে দেবীর কাছে নিজেদের মনের কথা মাকে জানিয়ে পুজো দেন। পুজো দেওয়ার পাশাপাশি, প্রদীপ, ধূপ জ্বেলে মাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মনোবাঞ্ছা পুরণের আশায় রয়েছেন ভক্তরা।