ভুলো মনের রোগ

কথা বলতে বলতে ভুলে যাওয়া অন‍্যমনস্কতার একটি লক্ষণ। অনেক সময়েই আমরা কথা বলার মাঝেই অন‍্য কথা ভাবতে থাকি। তাই সেই সময় কথার খেই হারিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মধ‍্যবয়স্ক বা বেশি বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে এই ভূলে যাওয়াটা একটা রোগ হতে পারে। সারাজীবন সুস্থ সবলভাবে বেঁচে থাকা একজন মানুষও বয়সকালে এরকম রোগের শিকার হতে পারেন। অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়া প্রভৃতি নানাপ্রকারের মস্তিষ্কজনিত রোগ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে।

কিন্তু অনেকসময় দেখা যায়, খুব অল্পবয়সীদের মধ‍্যেও এই ভূলে যাওয়ার রোগ দেখা যাচ্ছে। অনেকসময় একে অন‍্যমনস্কতা বলে মনে করা হলেও সেটি এতটা সহজ ঘটনা নাও হতে পারে। বেশ কিছু সময় ধরে করা গবেষণা থেকে জানা গেছে এই রোগ সম্পর্কে নানা কথা। জানা গেছে, অল্প বয়সে বারবার ভূলে যাওয়াটা একটি রোগও হতে পারে। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে সাইলেন্ট স্ট্রোক’। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের থেকেই অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়া এবং স্ট্রোকের জন্ম হতে পারে। চলতি কথায় একে সাইলেন্ট স্ট্রোক বলা হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে সেরিব্রাল স্মল ভেসেল ডিজিজ’  বলা হয়।

এই রোগকে সাইলেন্ট স্ট্রোক বলা হলেও সাধারণত স্ট্রোক বলতে আমরা যা বুঝি তার থেকে এটি বেশ আলাদা। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন‍্য প্রতিটি প্রাণীরই যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হল অক্সিজেন। প্রাণীর শরীরের সমস্ত কোষেরও বেঁচে থাকার মূল উপাদান হল এই অক্সিজেন। শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন না পৌঁছলে সেই কোষের মৃত‍্যু ঘটে। আর তার থেকেই তৈরি হয় নানা শারীরিক জটিলতা। প্রাণীর মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলি যখন অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হয়ে যায় তখন তারা স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ডাক্তারি ভাষায় একেই বলা হয় স্ট্রোক। কিন্তু সাইলেন্ট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ঘটনাটি আলাদা। এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে বা রক্তপ্রবাহের গতিতে পরিবর্তন ঘটলে শরীরের সকল অঙ্গের মধ‍্যে যোগাযোগ রক্ষা করা হোয়াইট ম‍্যাটার ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসা থেকে শুরু করে স্মৃতিশক্তি হ্রাস প্রভৃতি সমস‍্যার সৃষ্টি হয়।

বাইরের দেশের একদল চিকিৎসক সম্প্রতি গবেষণা করে জেনেছেন, মস্তিষ্কের এই সাদা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে এই রোগে আক্রান্তেরা মাঝে মধ‍্যেই বিভ্রান্তির শিকার হয়ে থাকেন। তবে এই রোগ সাধারণ স্ট্রোকের মতো শরীরে কোনো দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে না। এই রোগের ক্ষেত্রে যে সাময়িক ভূলে যাওয়া বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় তা সাধারণত বয়স বৃদ্ধির জন‍্য হওয়া একধরনের স্নায়বিক রোগ।

অল্পবয়সে এই সব মানসিক রোগের হাত থেকে বাঁচার জন‍্য যথাসম্ভব চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন আর রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভ‍্যেস করুন। তাহলেই মস্তিষ্ক থাকবে সুস্থ এবং দূরে থাকবে সব ধরনের মানসিক রোগ।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...