সতীপীঠঃ কোলাপুরের প্রাচীন মন্দিরে ভক্তের সঙ্কটমোচনের জন্য রয়েছেন দেবী ‘মা অম্বাবাঈ’

মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে রয়েছে বিখ্যাত ‘মহালক্ষ্মী মন্দির’। এই মন্দিরকে স্থানীয় মানুষের অধিকাংশই ‘অম্বাবাঈ মন্দির’ নামে অভিহিত করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মহালক্ষ্মী’ ও ‘অম্বা’ দু’জন আলাদা দেবী, তাহলে একই মন্দিরকে দুই দেবীর নামে আলাদা আলাদাভাবে নামাঙ্কিত করার কারণটা কী? আসলে, কারণ নিহিত আছে কিংবদন্তির মধ্যে। সেগুলোই একে একে বলে বিষয়টি স্পষ্ট করছিঃ

কোলাপুরের এই মন্দিরটি ‘মহালক্ষ্মী মন্দির’ নামে বিখ্যাত হলেও মন্দিরটি আসলে একান্ন সতীপীঠের অন্যতম এক পীঠ। কিংবদন্তি অনুসারে, এখানে ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শনে কর্তিত হয়ে দেবী সতীর দুই চক্ষু পতিত হয়েছিল। এই মন্দিরকে দেবী অম্বার মন্দির বলার এটাও একটা কারণ। শাস্ত্রগ্রন্থে এই পীঠস্থানকে একান্নপীঠের অন্যতম বলে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি ‘দক্ষিণ কাশী’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

কোলাপুরের এই পীঠস্থানের উদ্ভব-প্রসঙ্গে একই কিংবদন্তির দুটি উপসংহার রয়েছে। যেমন, অনেকের বিশ্বাস, এই পীঠে দেবী মহালক্ষ্মী এবং ভগবান বিষ্ণু একত্রে সর্বদা বিরাজ করেন। কেননা, কিংবদন্তি অনুসারে কোলহাসুর নামে এক দৈত্য একসময় দেবতাদেরই বরলাভ করে দারুণ বলবান হয়ে একইসঙ্গে দেব ও মানবের দারুণ ত্রাস হয়ে উঠেছিল। অসুরটি যে নারী তাকে যুদ্ধে পরাজিত করতে পারবেন, তাঁরই হাতে বধ্য হওয়ার বর পেয়েছিল। ফলে, মানব তো কোন ছার, সমস্ত দেবতারাও তার পরাক্রমের কাছে তুচ্ছ হয়ে উঠলেন। তখন দেবতা ও মানব উভয়েরই সর্বশক্তিময়ী দেবীর উদ্দেশ্যে এই সঙ্কট থেকে উদ্ধারের জন্য নিরন্তর কাতর প্রার্থনা নিবেদন করা ছাড়া উপায় রইল না। অবশেষে তাঁদের কাতর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন স্বয়ং দেবী মহালক্ষ্মী। তিনি অসুরকে নিজের হাতে হত্যা করে দেব-মানবের সঙ্কট মোচন করে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দিলেন। তখন কৃতজ্ঞ দেবতারা এই সঙ্কটমোচনী দেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের প্রয়জনীয়তা উপলব্ধি করলেন। দেবীর হাতে নিহত অসুরের দেহ যেখানে পতিত হয়েছিল, সেই স্থান তাঁরা অসুরের নামানুসারে ‘কোলহাপুর’ নামাঙ্কিত করলেন। গড়ে তুললেন তাকে প্রসিদ্ধ তীর্থ হিসেবে। তারপর দেব এবং মানব উভয়ের অনুরোধে ও আগ্রহে দেবী এই তীর্থের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হয়ে উঠলেন।

কোলহাসুরের বধ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় একটি মত রয়েছে। এই দ্বিতীয় মতে অসুরকে বধকারিণী দেবী মহালক্ষ্মী নন, দেবী পার্বতী স্বয়ং। যিনি অত্যাচারী মহিষাসুরের হাত থেকে জগতকে রক্ষা করেছিলেন, সেই আদ্যাশক্তি মহিষাসুরমর্দিনী পার্বতী-ই এই কোলহাসুরকে বধ করে জগতের সঙ্কটমোচন করেছিলেন। গর্ভগৃহে অধিষ্ঠিত দেবীর মূর্তিও এই দ্বিতীয় মতকেই স্বীকৃতি দেয়। কেননা, এই দেবীর বাহন সিংহ। দেবী মহালক্ষ্মীর বাহন কোথাও কোনভাবেই সিংহকে দেখা যায় না। তাছাড়া এই মন্দিরে নবরাত্রি উৎসব যেভাবে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়, তেমনটা অন্য কোন উৎসব পালিত হয় না। এই সব কারণেই কিছু মানুষের কাছে এই দেবীমন্দির ‘মহালক্ষ্মী মন্দির’ হলেও অন্যদের কাছে এই মন্দির ‘অম্বাবাঈ মন্দির’ নামেই খ্যাত। সঙ্গত কারণেই আমরাও এই মন্দিরকে ‘অম্বাবাঈ মন্দির’ এবং দেবীকে ‘অম্বাবাঈ’ নামেই সম্বোধন করবো।

দেবীর মন্দিরটি পবিত্র পুণ্যসলিলা পঞ্চগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। মন্দিরের চারটি বিরাট প্রবেশদ্বার রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান প্রবেশদ্বারকে বলা হয়, ‘মহাদ্বার’। এই দ্বারটি রয়েছে পশ্চিমদিকে। এই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে অসংখ্য দীপমালা পেরিয়ে প্রথমেই পৌঁছে যাওয়া যায় গরুড় মণ্ডপে। কাঠের কারুকাজ করা চৌকো স্তম্ভের ওপর এই মণ্ডপ নির্মিত। আঠেরো শতকে মারাঠাশৈলীতে এটি নির্মিত হয়েছে। এই মণ্ডপে রয়েছে গরুড়ের মূর্তি। গরুড়ের মুখ গর্ভগৃহের দিকে।

গর্ভগৃহে বেদির উপর রয়েছেন তিন দেবী। মধ্যিখানে দেবী অম্বা (অন্যমতে, মহালক্ষ্মী), তাঁর দু’পাশে রয়েছেন দেবী মহাকালী ও দেবী মহাসরস্বতী। প্রাচীনকাল থেকেই গর্ভগৃহের একটি দেওয়ালে শ্রীযন্ত্র খোদিত রয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে এই যন্ত্র খোদাই করিয়েছিলেন স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্য। মন্দির চত্বরে দেবী অম্বা (মহালক্ষ্মী) ছাড়াও নন্দীসহ শিবমন্দির যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ভেঙ্কটেশ্বরের মন্দির, কাত্যায়নীদেবীর মন্দির, গৌরীশঙ্কর মন্দির, নবগ্রহ মন্দির, সূর্য মন্দির, মহিষাসুরমর্দিনী মন্দির, ভিট্টল-রাখমাই মন্দির, তিরুপতিবালাজি মন্দির, দত্তাত্রেয় মন্দির প্রভৃতি। ভক্তজনের বিশ্বাস, ভগবান দত্তত্রেয় প্রতিদিন দুপুরে মা অম্বা (মহালক্ষ্মী)-র কাছে অন্নভিক্ষা করতে যান এবং মায়ের প্রসাদ ভিক্ষান্নরূপে গ্রহণ করেন। অনেকের আবার বিশ্বাস, মা অম্বাকে যারা মহালক্ষ্মীরূপে ভজনা করেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, দেবীকে দর্শনের পর তিরুপতিবালাজিকে অবশ্যই দর্শন করতে হয়, নইলে দেবীদর্শন পূর্ণ হয় না। যাই হোক, মহালক্ষ্মী মন্দিরের নিকটেই রয়েছে পবিত্রপুষ্করিণী, ‘মণিকর্ণিকা কুণ্ড’। এই কুণ্ডের তীরে রয়েছে বিশ্বেশ্বর মহাদেবের থান।

শ্বেত চূড়াবিশিষ্ট দেবীর মন্দিরটি অসাধারণ সুন্দর। ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন। প্রস্তর খোদাই করে নির্মিত এই মন্দিরের গায়ে পৌরাণিক দেব-দেবীদের মূর্তি, পৌরাণিক বহুবিধ কাহিনি, নৃত্যগীতরত নরনারীদের মূর্তি এবং নানান বাদ্যযন্ত্রবাদকদের মূর্তি অনন্য ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

দেবীর মন্দির-নির্মাণকে কেন্দ্র করেও একটি কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে যে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মহাভারতের যুগে নাকি এই মন্দির নির্মিত হয়েছে। এই মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন স্বয়ং পাণ্ডবেরা। কিন্তু কিংবদন্তিমাত্রেই ইতিহাস নয়। ইতিহাস বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান দাবী করে। সেই অনুসন্ধান অনুসারে ঐতিহাসিকদের অনুমান, সপ্তম শতাব্দীতে কন্নড় চালুক্য সম্রাটদের আমলে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল। তাঁদের মতে, সমগ্র মন্দিরক্ষেত্র একই সময়ে সম্পূর্ণ হয়নি। কিছুটা সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল, বাকিটা তখন থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে সম্পূর্ণ হয়। এরপর কোন কারণে এই মন্দিরে পূজাপাঠ বন্ধ থাকে কয়েকশো বছর ধরে, দেবীও অন্যত্র স্থানান্তরিত হন। আঠেরো শতকের প্রথম দিকে মারাঠারা যখন বিরাট শক্তিরূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন, তখন তাঁরাই এই মন্দিরে আবার দেবীকে পুনঃস্থাপিত করে পূজা-অর্চনার নতুন ঐতিহ্য তৈরি করেন।

দেবীর মূর্তিটি অখণ্ড কষ্টিপাথরে নির্মিত। উচ্চতা তিন ফুট। এই দেবীর মূর্তিস্থাপনের ক্ষেত্রে কিন্তু সাধারণ নিয়ম মানা হয়নি। সাধারণত আমরা দেখি যে, মন্দিরের গর্ভগৃহে দেব-দেবীদের মূর্তি উত্তর, দক্ষিণ বা পুবমুখে স্থাপন করা হয়। দেবদেবীরা পশ্চিমমুখী কখনোই হন না। এই অসম্ভবকেই সম্ভব করা হয়েছে এখানে। দেবী এখানে পশ্চিমমুখী।

দেবীর চারটি হাত। ওপরের ডান হাতে রয়েছে বড় একখানা গদা। গদার মাথা নেমে এসেছে বেদিতে। নীচের ডান হাতে রয়েছে একটি লেবুজাতীয় ফল। উপরের বাম হাতে রয়েছে বর্ম; নীচের বাম হাতে রয়েছে পানপাত্র। দেবীর মূর্তিটি একটি বিশাল পাথরের বেদির উপর বসানো রয়েছে। দেবীর পিছন দিকে শরীর রেখে সামনে মুখ বের করে রয়েছে বাহন, সিংহ। বলা বাহুল্য, বাহনমূর্তিটিও পাথরের তৈরি।

দেবীর বেদি ও পিছনের চালচিত্র সুন্দর সুন্দর নকশা-শোভিত রুপোর পাতে মুড়ে রাখা হয়েছে। দেবীর ঠিক পিছনের চালচিত্রে রুপোর ওপর বিরাটাকার শেষনাগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেবীর মাথার ঠিক পিছনে লাল, সবুজ ও সাদা পশমি ঝালরদার কাপড়ের অপূর্ব বিন্যাসে অভূতপূর্ব বুননে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দৈবী আভা। দেবীর মাথায় রয়েছে বিশাল রত্নখচিত কারুকার্যশোভিত সোনার মুকুট। মুকুটের নকশাতেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শেষ অর্থাৎ অনন্ত নাগ। দেবীর কপাল ও গালপাট্টা হলুদ-চন্দনের প্রলেপে আবৃত। দুই ভুরুর মধ্যিখানে সিঁদুরের ফোঁটা। ফোঁটার ঠিক ওপরেই সিঁদুরে আঁকা গণেশের চিত্র। দেবীর দুই নয়নে ক্রোধ। দৃষ্টি সম্মুখে স্থির। চোখের দুই কোণ রক্তবর্ণ। আসলে, দেবীর অসুরদলনী রূপটিকেই এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেবী যেহেতু জগতে শান্তিস্থাপনের জন্যই এমন উগ্রা হয়েছিলেন, তাই এই মূর্তিতে দেবী শান্তিদায়িনী, স্বস্তিদায়িনী, রক্ষাকারিণী, সঙ্কটমোচনী মা। দেবীর নাসা সুচারু সরু। তাতে মারাঠি নাকফুল রয়েছে। দেবীর মুখমণ্ডলের গড়ন ডিম্বাকার। দেবীর গলায় সোনার ওজনদার হার। ফুলের মালা। কানে-কাঁধে-গলায় ফুলের সজ্জা। বুকে সোনার বর্ম। অঙ্গে রক্ত-সবুজ সিল্কের বস্ত্র। বলা বাহুল্য, দেবীর বস্ত্র ও ফুলসজ্জা নিত্যদিন পরিবর্তিত হয়।

গর্ভগৃহে বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে আলোর খেলা দেখা যায়। পশ্চিম দেওয়ালে ছোট্ট একটি ঘুলঘুলি রয়েছে। স্থাপত্যবিদরা এমন নিখুঁত অঙ্ক কষে সেটি নির্মাণ করেছেন যে, সূর্যের শেষ রক্তিম-সোনালি আলো বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে দেবীর বিশেষ বিশেষ অঙ্গে বা সর্বাঙ্গে এসে পড়ে। ৯ নভেম্বর ও ৩১ জানুয়ারি সূর্যের আলো দেবীর পায়ে এসে পড়ে। ১০ নভেম্বর ও ১ ফেব্রুয়ারি সূর্যের আলো দেবীর বুকে এসে পড়ে। ১১ নভেম্বর ও ২ ফেব্রুয়ারি সূর্যের আলো দেবীর সর্বাঙ্গে এসে পড়ে। বছরের এই বিশেষ দিনে বিশেষভাবে দেবীর অঙ্গে সূর্যের আলো পতনের এই আয়োজনকে ‘কিরণোৎসব’ বলা হয়। গর্ভগৃহের আধো আলো আধো অন্ধকারে দেবীর সুশোভিত অঙ্গে বিশেষ আলো পতনের এই দৃশ্যটি একটি স্বর্গীয় পরিবেশ রচনা করে, যারা এই দৃশ্যের সাক্ষী হবার সুযোগ পান, তাঁরা একইসঙ্গে ধন্য হয়ে তৃপ্ত হয়ে এক স্বর্গীয় উপলব্ধি সঞ্চয় করেন।

প্রতিদিন দেবীর পাঁচ বার পূজা হয়। ভোর সাড়ে চারটের সময় মন্দিরের দরজা খুলে যায়। সকাল পাঁচটায় গীতবাদ্য ও স্তোত্রসহযোগে দেবীর ঘুম ভাঙানো হয়। সকাল আটটার সময় দ্বিতীয়বার পূজা হয়। এই পূজা ষোড়শোপচারে সম্পন্ন হয়। তৃতীয়বার পূজা হয় দ্বিপ্রহরে। সন্ধ্যের সময় চতুর্থবার। পঞ্চমবারের পূজা সম্পন্ন হয় রাত্রি দশটায়, একে বলা হয় ‘সেজারতি’। রাত্রি সাড়ে দশটায় মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

প্রতি শুক্রবার ও পূর্ণিমা তিথিতে দেবীর ছলনমূর্তি পালকিতে বসিয়ে মন্দিরপ্রাঙ্গণে শোভাযাত্রা বের করা হয়। প্রাঙ্গণে অসংখ্য ভক্তজনের ভিড়, দেবীর নামে সমবেত জয়ধ্বনি, বাদ্যযন্ত্রের মধুর কলতান, স্তোত্রের অপূর্ব নিনাদ এক অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই সময় ছাড়াও এই ছলনমূর্তিতে দেবী পালকিতে চড়েন নবরাত্রির উৎসবের সময়কালেও। নবরাত্রি এই মন্দিরের প্রধান উৎসব। স্বভাবতই খুব ধুমধামের সঙ্গে এই উৎসব উদযাপিত হয়। এই সময় পুষ্প ও দীপমালায় সেজে ওঠে মন্দির ও সমগ্র মন্দিরপ্রাঙ্গণ। ন’দিন ধরে এই উৎসব চলে। এই সময় মন্দিরে স্থানীয় ছাড়াও সারা ভারত থেকে প্রায় তেরো থেকে পনেরো লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়। প্রচুর ভক্তজন উৎসবকালে  উপবাস ও নানান কৃচ্ছ্রসাধনার মধ্য দিয়ে দেবীর কৃপালাভের প্রয়াস করে পুজো দিয়ে ধন্য হন।...

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...