‘চিরন্তন পীঠ’ সোমনাথ

গুজরাট রাজ্যের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের ভেরাবলের প্রভাস ক্ষেত্রে অবস্থিত শ্রী সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির। জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। শুধু অন্যতম বললে ভুল হবে সোমনাথ দ্বাদশ  জ্যোতির্লিঙ্গের প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ।

সোমনাথ শব্দটির অর্থ চন্দ্র দেবতার রক্ষাকর্তা। সোমনাথ মন্দিরটি ‘চিরন্তন পীঠ’ নামে পরিচিত।হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দক্ষকে প্রজাপতি অভিশাপ দেন। অভিশাপমুক্ত হতে চন্দ্র প্রভাস তীর্থে শিবের আরাধনা করেন, শিব তাঁর অভিশাপ অংশত নির্মূল করেন। এই কারণে সত্যযুগে চন্দ্র সোমনাথে শিবের একটি স্বর্ণমন্দির নির্মাণ করেন।

ত্রেতা যুগে রাবণ রৌপ্য ও কৃষ্ণ চন্দনকাষ্ঠ দ্বারা মন্দিরটি পুনর্নিমাণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস। যদিও সোমনাথ মন্দির প্রথম কে তৈরী করেছিল সে বিষয়ে কোনও ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় না।  

somnath

সোমনাথ মন্দির একাধিকবার হামলার মুখে পড়েছে। গজনির শাসক মামুদ, আলাউদ্দিন খলজির সেনানায়ক আফজল খাঁ, মুজ্জাফফর শাহ, আঔরাঙ্গজেবের শাসনকালে একের পর এক লুটের ঘটনা ঘটেছে।  ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে  আঔরাঙ্গজেব পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এই মন্দির।

বারবার আক্রমণ হয়েছে সোমনাথ মন্দিরে। বারবার নতুন করে গড়া হয়েছে মন্দির। কথিত আছে সোমনাথ মন্দির খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। বারবার ধ্বংসের পর নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে তাই সোমনাথ মন্দির ‘চিরন্তন পীঠ’।

আনুমানিক ২৫০০ বছর আগে উজ্জয়নীর শাসক মহারাজ বিক্রমাদিত্য এই মন্দির পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। ৬৪৯ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটের বল্লভীর যাদব রাজারা দ্বিতীয়বার এই মন্দির নির্মাণ করে দেন। তৃতীয়বার ৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দির পুনঃনির্মাণ করেন গুজ্জর প্রতিহার রাজ দ্বিতীয় নাগভট্ট।

১৭৮৩ সালে পুণের পেশোয়া, নাগপুরের রাজা ভোঁসলে, কোলহাপুরের ছত্রপতি ভোঁসলে, ইন্দোরের রানি অহল্যাবাই হোলকর ও গোয়ালিয়রের শ্রীমন্ত পাতিলবুয়া সিন্ধের যৌথ প্রচেষ্টায় মন্দিরটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। 

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার নভেম্বর মাসে জুনাগড়ের ভারত অন্তর্ভুক্তির পর অঞ্চলতি পরিদর্শন করেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডাঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ। নতুন মন্দিরের নকশা তৈরী করেছিলেন গুজরাটের সোমপুরা পরিবার। নতুন মন্দিরটি আধুনিক ব্যবস্থায় সুসজ্জিত। বহু ভক্ত যাতে একসঙ্গে আরতি এবং পূজা দেখতে পারেন তার জন্য আছে স্ক্রিনের ব্যবস্থা।

এই মন্দিরে শিব সোমেশ্বর দেব নামে পরিচিত। তিনি চাঁদের রক্ষাকর্তা। লোকবিশ্বাস, চন্দ্রদেব শিবের প্রতি শ্রদ্ধায় প্রতি কার্তিক মাসে পূর্ণচন্দ্র রূপে এই মন্দিরে বিরাজ করেন। তাই কার্তিক পূর্ণিমা সোমনাথ মন্দিরে বিশেষভাবে পালিত হয়। এছাড়া শিবরাত্রি, দীপাবলি, নবরাত্রিতেও প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়।

আরব সাগরের তীরে গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের গির সোমনাথ জেলায়র সোমনাথ মন্দিরের নিকটতম বিমানবন্দর দিউ। ট্রেনপথে গন্তব্য সোমনাথ স্টেশন। 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...