দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম হল শোর মন্দির। তামিলনাড়ু রাজ্যের সীমান্তে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরটি ৭০০ থেকে ৭২৮ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত হওয়ায়ে মন্দির থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায় তাই মন্দিরের নাম শোর দেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন পল্লব রাজা দ্বিতীয় নরসিংহবর্মণ। যদিও সেই সময় শুধু মাত্র একটি গুহা মন্দির ও রথের মতো দেখতে কিছু মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ মন্দিরটি পরবর্তীকালে রাজা রাজসিংহের শাসনকালে নির্মাণ করা হয়েছিল। মার্কো পোলো ও অন্যান্য ইউরোপীয় নাবিকরা এই স্থানটিকে সেভেন প্যাগোডাস বলে ডাকত। সেই সময় নাবিকদের কাছে জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই স্থান।
এই মন্দির নিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, ভগবান বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার নৃসিংহ এই স্থানেই হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিষ্ণু ভক্ত প্রল্লাহদের পুত্র রাজা বলী এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই স্থানে মোট তিনটি মন্দির রয়েছে যার মধ্যে দুটি মন্দিরের ভগবান শিবের পুজো করা হয় আর একটি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর পুজো করা হয়। এছাড়াও পাঁচটি রথ রয়েছে যেগুলির নামকরণ করা হয়েছে পান্ডবদের নাম অনুযায়ী। প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাস্কর্য কলার গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হল শোর মন্দির। যে কারণে ইউনেস্কোর 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট'-এর তালিকায় নাম রয়েছে এই মন্দিরের। গ্ৰানাইট পাথর দ্বারা নির্মিত শোর মন্দিরটিকে বহুবার সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়তে হয়েছে। যার ফলে মন্দিরের বহু ক্ষয়-ক্ষতিও হয়েছে। তাই ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে মন্দিরের সামনে একটি দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে।
ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শৈলীর জন্য বিখ্যাত শোর মন্দির দর্শন করতে প্রতি বছর দেশ ও বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসেন তামিলনাড়ুর মহাবলিপুরমে। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই থেকে এই মহাবালিপুরমের দূরত্ব মাত্র ৫৭ কিলোমিটার। ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে আসার জন্য।