শৈব উপাসকদের কাছে শ্রাবণ মাস কেন বিশেষ?

হিন্দু ক্যালেন্ডারে শ্রাবণ মাস শৈব উপাসকদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসের চতুর্দশী তিথির কৃষ্ণপক্ষে পালিত হয় শ্রাবণ শিবরাত্রি। এক বছরে মোট ১২ বার শিবরাত্রি পালন করা হয়। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শ্রাবণ শিবরাত্রি বেশি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়। শ্রাবণ মাস ভগবান শিবের খুব প্রিয়। শিব ভক্তরা সারা বছর অর্থাৎ মাসিক শিবরাত্রির সময় উপবাস করেন, কিন্তু যিনি প্রতি মাসিক শিবরাত্রিতে উপবাস করতে পারেন না, তাকে অবশ্যই শ্রাবণ মাসের শিবরাত্রির সময় উপবাস করতে হবে। শ্রাবণের শিবরাত্রির দিনে শিব ভক্তকে মহা রুদ্র-অভিষেকের আয়োজন করতে হয় যাতে ভগবান শিবের আশীর্বাদে তারা সুখ, শান্তি পায়। যেহেতু পুরো শ্রাবণ মাসটি শিবের উপাসনার জন্য নিবেদিত, তাই শ্রাবণ মাসে আসা শিবরাত্রি শ্রাবণ শিবরাত্রি নামে পরিচিত।

শ্রাবণের শিবরাত্রিকে কানওয়ার যাত্রার সমাপ্তিও বলা হয়। এই সময় উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, বিশেষ করে পশ্চিম উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা এবং দিল্লি থেকে লক্ষাধিক ভক্ত কানওয়ার যাত্রায় অংশগ্রহণ করে। যাঁরা হরিদ্বার ও গৌমুখ থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং তাঁদের বাসস্থানে পবিত্র গঙ্গার জল সঙ্গে নিয়ে আসেন, তাঁরা বিশেষ করে শিবরাত্রির দিন মন্দিরে শিবলিঙ্গের জলাভিষেক করেন। উত্তর ভারতের বিখ্যাত শিব মন্দির, কাশী বিশ্বনাথ এবং কেদারনাথ মন্দিরগুলি শ্রাবণ মাসে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। শ্রাবণ মাসে হাজার হাজার শিব ভক্ত শিব মন্দিরে যান এবং গঙ্গাজল ও দুধ দিয়ে অভিষেক করেন।

উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ এবং বিহারের মতো উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে শ্রাবণ মাসের শিবরাত্রি বেশি বিখ্যাত। এই রাজ্যগুলিতে পূর্নিমান্ত চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যেমন অন্ধ্র প্রদেশ, গোয়া, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গুজরাট এবং তামিলনাড়ু। এই রাজ্যগুলিতে অমাবসন্ত চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। এই রাজ্যগুলিতে আষাঢ় মাসে শিবরাত্রি পালন করা হয়। তবে মহা শিবরাত্রি নামে পরিচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিবরাত্রি ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে পালন করা হয়।

রীতি অনুযায়ী এই বিশেষ দিনে ব্রাহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান করতে হয়। তারপর সারা ঘরে গঙ্গাজল বা পবিত্র জল ছিটিয়ে দিতে হবে। শিবলিঙ্গ অভিষেক দিয়ে পূজা শুরু করতে হবে। অভিষেকের পর ভগবান শিব বেলপত্র, কুশ, পদ্ম, নীলকমল, ধুতুরা, রাই ফুল ইত্যাদি দিয়ে প্রসন্ন হন। ভগবান শিবের নাম নিয়ে ধ্যান করা উচিত। ধ্যানের পরে, 'ওম নমঃ শিবায়' জব করতে করতে ভগবান শিবের পুজো করতে হবে। পুজোর শেষে আরতি করে প্রসাদ বিতরণ করতে হবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...