কেটলবল স্পোর্ট। এই খেলার নাম অনেকের কাছেই প্রায় অচেনা। কিন্তু কেটলবল স্পোর্টসেই জোড়া সোনা জিতে চমকে দিয়েছে কলকাতার মেয়ে শিবানী আগরওয়াল। গ্রিসে অনুষ্ঠিত কেটলবল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ প্রতিযোগিতায় জোড়া সোনা জিতে দেশকে ফের গর্বিত করলেন তিনি।
পেশায় চার্টাড অ্যাকাউন্টেট আর নেশায় কেটলবল স্পোর্ট প্লেয়ার শিবানী দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের বাসিন্দা ।
এই নিয়ে চতুর্থবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে তিনি। জিতে নিয়েছেন তাঁর চতুর্থ সোনা। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই কৃতিত্ব।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে নিজের বিজয় মুহুর্ত শেয়ার করেছেন শিবানী। ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁর কোচ অর্ণব সরকারকে। জানিয়েছেন কোচ ছাড়া এই সাফল্য সফর সম্ভব ছিল না।
স্বামী মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং সাত বছরের পুত্র লোভিক তাঁর সেরা হয়ে ওঠার অক্সিজেন।
অতীতেও দেশকে বহু সাফল্য এনে দিয়েছেন এই কলকাতার সোনার মেয়ে শিবানী।
শিবানীর খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা একেবারেই অন্যরকম।
জিএসটি, ট্যাক্সের ব্যস্ত দৈনন্দিন। ২০১৫ সালে মা হওয়ার পর নিজের দিকে তাকাবার ফুরসত খুব একটা পেতেন না। শরীরের স্বাভাবিক ওজন বেশ বেড়ে যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতেই স্বামী মায়াঙ্ক আগরওয়ালের পরামর্শে জিমে ভর্তি হন। পেশা, পুত্র আর বাড়তি ওজন এই তিনে ব্যালেন্স করতে গিয়ে বেশ নাজেহল অবস্থা। তারওপর জিমের নিয়ম আর ডায়েট চার্ট। এক মাস পরেই জিম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন শিবানী। কিন্তু শরীরচর্চার অভ্যাসটা ছাড়লেন না। শুধু বদলে নিলেন। তাঁর জীবনে জুড়ে গেল নতুন শব্দ কেটলবল স্পোর্ট।
আমজনতা বেশির ভাগই এই শব্দটির সঙ্গে সেভাবে পরিচিত নন। কেটলবল স্পোর্ট একধরনের ভারত্তোলন ক্রীড়া। তাঁর পরিচয় হল কোচ অর্ণব সরকারের সঙ্গে। তারপর থেকেই শুরু হল তাঁর বদলের জার্নি। আজও শিবানী তাঁর প্রতিটি সাফল্যে কৃতিত্ব দেন তাঁর কোচকে। ট্রেনিং শুরু হয়েছিল ৮ কিলো ওজনের বল দিয়ে। সবচেয়ে কম ওজনের ভার।
দু’বছর পর ২০১৭তে তিনি কোচের অনুপ্রেরণায় মালয়শিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর সাফল্যে চমকে যায় ক্রীড়া দুনিয়া। প্রথম ভারতীয় মহিলা ক্রীড়াবিদ সেরার ট্রফি জিতে নিয়েছিলেন সেই মঞ্চে। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৮ সালে উজবেকিস্তানে, ও ২০১৯ সালে মেলবোর্নে, ২০২১-এ ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন। আর এবার ২০২২-এ গ্রিসেও অব্যাহত তাঁর সাফল্যের গতি।
আন্তর্জাতিক কেটলবল ক্রীড়ার মানচিত্রে ভারতকে বিশিষ্ট করে তুলতে এই কলকাতার মেয়ের অবদান মনে রাখবে গোটা ক্রীড়া বিশ্ব।