যখন শুরু করতে গিয়েছিলেন বাধা কম আসেনি। পরিবার থেকে শুরু করে বন্ধু সকলেই নিরুৎসাহ করেছিল। কিন্তু নিজের ছাড়া কারও কথা শোনেননি তিনি।একরোখা জেদকে সঙ্গী করে নিজের সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। শেষ পর্যন্ত জিতে যায় জেদ। লাদাখের খাদ্যসংস্কৃতিকে মানুষের সামনে আনেন নিলজা ওয়াঙ্গামা। আজ তাঁকে এক নামে চেনে পুরো উপত্যকা।
টুরিস্টদের কাছে লাদাখ অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও লাদাখী খাবার সেভাবে জনপ্রিয়তা কখনও পায়নি। অনেকেরই ধারনা নেই লাদাখ নিজস্ব খাবার সম্পর্কে।
হাতে গোনা কয়েকটা রেস্তোরাঁ আছে। সেখানে লাদাখের পদ বলতে শুধুই ‘মকমক’ পাওয়া যায়। মকমক অনেকটা মোমোর মতো। লাদাখবাসীরা ‘স্ন্যাক্স’ হিসেবে খেতে পছন্দ করেন।
বছর চল্লিশের নিলচা ‘আলচি কিচেন’ নামে এক রেস্তোরাঁ শুরু করেন ২০১৬-তে। লেহ থেকে ৬৬ কিলোমিটার দূরে। আলচি তে।
নিলজার রেস্তোরাঁয় শুধুমাত্র ট্র্যাডিশনাল লাদাখী খাবার পাওয়া যায়। ছোট্ট ফুড সেন্টারে প্রত্যেকদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জনের ভিড় হয়।
ছোটবেলা থেকে রান্না আর খাবার নিয়ে নিলজার প্রচন্ড প্যাশন। কিন্তু জীবন কখনও সহজ পথে ধরা দেয়নি নিলজার কাছে। প্রতিকূল পরিবেশ সর্বত্রই। তার জন্মের সময়ই বাবার মৃত্যু হয় এক দুর্ঘটনায়। বড় হয়ে ওঠা মামাবাড়িতে। নিলজার মা মেয়ের পড়াশোনা আর বড় হয়ে ওঠায় কোনও খামতি রাখতে চাননি। অকুত পরিশ্রম করতে হয়েছে তার জন্য। তার বাবার বাড়ির আত্মীয়স্বজন তাদের সব কিছু থেকে বঞ্চিত করে। প্রায় সহায় সম্বলহীন অবস্থায় কলেজের পড়া ছাড়তে হয় মাঝপথে। মা-মেয়ের অসহায় অবস্থা দেখে নিলজার দাদু তাদের একটি বাড়ি তৈরি করে দেন।
আজ সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে নিলচার রেস্তোরাঁ।
শুরুটা অবশ্যই হয়েছিল অনেক আগে। কলেজের দিনগুলোতে নিলজা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ট্যুর গাইডের কাজ করতেন। তাই লেহ-লাদখে এসে ট্যুরিস্টরা ঠিক কী খোঁজেন তার সম্পর্কে আন্দাজ ছিল। নিজের বাড়িতে ‘হোমস স্টে’ চালুর ভাবনা ছিল প্রাথমিকভাবে। অলচিতে হাজার বছরের প্রাচীন অলচি গুম্ফার কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকত।
নিত্য নতুনের সঙ্গে সঙ্গে লাদাখের হারিয়ে যাওয়া অনেক রেসিপিও পুনরুদ্ধার করতে সফল হয়েছেন নিলজা।
নিলজার কথায়, ‘রান্না সব সময় আমার খুব পছন্দের হবি’
কাঠের তৈরি উনুনে রান্না হয়। টুরিস্টরা দেখতে পান কীভাবে রান্না হচ্ছে প্রতিটা পদ।
রেস্তোরাঁর কর্মীরা সকলেই স্থানীয় মহিলা। তাদের নিজে হাতে রান্না শিখিয়েছেন নিলজা। এখন তাঁর একটাই স্বপ্ন একদিন মেন কোর্সে জায়গা করে নেবে লাদাখের খাবার। গোটা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তাঁর উপত্যকার সংস্কৃতি।