সে যে আমার জন্মভূমি

তাঁর গান, তাঁর কবিতা তাঁর নাটক, আমরা ভুলি নি কেউ। ভুলিনি সমাজের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ। ছেলেবেলায় যখন মুখস্তর মতো ওনার গান বলে যেতাম, বইয়ের পাতায় পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে দাগিয়ে যখন পড়তাম তখন একবারও বুঝি নি তার গুরুত্ব। কেন জানি না পেন্সিলে দাগানো ওই লাইনগুলো  আবছা আবছা মনে পড়ে যায়। গুরুত্ব বোঝার মত বয়স যখন হয়, তখন গোগ্রাসে গিলতে থেকেছি তাঁর নাটক, তাঁর সাহিত্য, হয়ত আমার মত আরো অনেকে। তিনি একাধারে সুরকার, নাট্যকার,লেখক,দেশপ্রেমিক এবং এক এক প্রেমময় মানুষ। তিনি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় | 

"ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি

সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।"

তাঁর গানের প্রত্যেকটা শব্দ সতর্ক হাতে লেখা মনের গভীর থেকে লেখা। একমাত্র তিনিই পারেন এই ঐন্দ্রজালিক সৃষ্টি করতে পারে।উনিই লিখতে পারেন- 

"ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা

ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি"

 তিনি মনে করতেন সমাজ, জাতি, বর্ণ, দেশ নিয়ে ভাবাই হল একটি ব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব। সাথে সাথে মনে করতেন যদি এক ব্যক্তিকে সমাজ অস্বীকার করে তাহলে সেটা সমাজের জন্য এক মারাত্মক ক্ষতি। 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল আদর্শ মানুষ হিসেবে চলতে গেলে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধগুলিকে সমর্থন করা। একজন কবি হওয়ার দরুন তিনি বুঝেছিলেন কোন মাধ্যম দিয়ে এই মূল্যবোধগুলো মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলবে। তাঁর লেখা, গান,কবিতা, নাটক দিয়ে তিনি শুরু করেন এক সুন্দর সমাজ গড়ার কাজ। তাই এই দেশপ্রেমী, সমাজপ্রেমী মানুষ লিখে ফেলেন-

"কোথায় এমন হরিৎ ক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে

এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে।।"

আদর্শ সম্পর্ক, সাহস, সততা, দেশের জন্য নিঃস্বার্থ ভালবাসা, তাঁর সমস্ত লেখা এই মূল্যবোধগুলিতে মনোনিবেশ করে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর লেখার বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে ভারতের নাগরিকদের কর্তব্যপরায়ন ও দায়িত্ববান করে তুলতে চেয়েছেন।

 শুধু তাঁর লেখা গান বা কবিতাই আমাদের সাথে সাথে চলে নি, যত বড় হয়েছি তত পেয়েছি তাঁর লেখা নাটক। তাঁর পড়া কিন্তু পাঠ্য বইয়ের মধ্যেই শুধু বন্ধ হয়ে থাকে নি। তাঁর লেখা নাটক বিভিন্ন দলের দ্বারা মঞ্চস্থও  হয়েছে।

শেষ করা যাক তাঁর এক উল্লেখযোগ্য গানের কিছু লাইন দিয়ে -

"বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ!

কেন-গো মা তোর শুষ্ক নয়ন, কেন-গো মা তোর রুক্ষ কেশ?

কেন-গো মা তোর ধূলায় আসন, কেন-গো মা তোর মলিন বেশ?

ত্রিংশ কোটি সন্তান যার ডাকে উচ্চে- 'আমার দেশ'।"

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...