সংগীত ভবনের শতবর্ষ উদযাপনে 'শাপমোচন'

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাপমোচন রচনা করেছিলেন ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে। তারই ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে  উৎসবের আয়োজন চলছিল কলকাতায়। সেখানে অংশগ্রহণ করতে আসবেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমবাসীরা। 'নবীন' নৃত্যনাট্য পরিবেশ করতে অনুরোধ এল আশ্রমকন্যাদের কাছে।  'ঋতুরঙ্গ' ও 'নবীন' থেকে কবিগুরু নিজেই কিছু গান বেছে দিয়েছিলেন নৃত্য পরিবেশনের জন্য। তার দু-দিন পরেই আশ্রমকন্যাদের ডেকে জানালেন নতুন নাটক -এর কথা।

উত্তরায়নে আশ্রমকন্যারা দেখা করতে এলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে। তার হাতের খাতায় তখন নতুন নাটক 'শাপমোচন'। তিঁনি ওঁদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আশ্রমকন্যারা এত ভালো নৃত্যশিল্পী, সে কথা ভেবে তিনি একখানা নৃত্যনাট্য লিখে ফেলেছেন। কেমন হল নতুন রচনাখানি জানতে চেয়েছিলেন তাঁদের কাছে। একরাতে বৌদ্ধ জাতকের কাহিনী অবলম্বনে লেখা 'শাপমোচন' পড়ে শোনানো হলে কন্যাদের। এই নাটকের পরিচালনার ভারও নিয়েছিলেন নিজেই। পরে যদিও শাপমোচনের বিজ্ঞাপনে নাম ছিল দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নন্দলাল বসুর। তখনকার শ্রম কন্যাদের ভিতর ছিলেন অমিত সেন, হৈমন্তী দেব, গীতা রায়, যমুনা বসুদের অভিনীত 'শাপমোচন'-এর নৃত্যভাবনা, মঞ্চসজ্জা, পোশাক এবং অঙ্গ  সজ্জা, নৃত্যের মুদ্রা। এসবের আধারে সংগীতভবনের শতবর্ষ উদযাপনে আবারো অনুষ্ঠিত হতে চলেছে শাপমোচন। এই উৎসবে নাটিকাটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন সঙ্গীত ভবনেরই অধ্যাপিকা ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন 'শাপমোচন' রবি ঠাকুরের ৭০তম জন্ম জয়ন্তীতে সৃজন করা একটি রচনা নয় বরং এটি শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের আশ্রমের বাইরে প্রদর্শন করা প্রথম পরিবেশনা। 'শাপমোচন' নিয়ে রবি ঠাকুর ঘুরেছেন লক্ষ্নৌ, বোম্বে, শ্রীলংকা সহ বিভিন্ন স্থানে। এই পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি শুধু আশ্রমের তখনকার অবস্থার কথা সবার সামনে তুলে ধরেননি বরং আশ্রমটি চালিয়ে যাবার জন্য অর্থ সংস্থানের সুযোগও তৈরী করেছিলেন তিনি।

সঙ্গীত ভবনের শতবর্ষ উদযাপনে এর খুব কাছিকাছি ব্ল্যাক হাউজের পাশে সুসজ্জিত মঞ্চে তিনদিন ধরে চলবে উৎসব। আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি সেই উৎসবের শেষ দিন। শেষ দিনেই মঞ্চস্থ হবে সঙ্গীত ভবনের ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক-শিক্ষকদের প্রয়াসে 'শাপমোচন'। এই শাপমোচন যা ১৯৩১ সালের ১৫ই পৌষ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এবারের শাপমোচন পরিবেশনাটিতে আদিরূপের প্রযোজনার প্রতিফলন ঘটাতে চেয়েছেন সঙ্গীত ভবনের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন আর্কাইভ থেকে তাঁরা অনুপ্রেরণা নিয়েছেন সেসময়ের ছবি, নাটকের আখ্যান পত্র, বিজ্ঞাপন, পত্রিকা রিভিউ  ইত্যাদি দেখে। তারা চেষ্টা করেছেন সেসময়ের মঞ্চ সজ্জা, পোশাক সজ্জা, অঙ্গসজ্জা প্রভৃতি আত্মস্থ করে মঞ্চে তার প্রতিফলন ঘটাতে। মনিপুরী,কথাকলি,ভরতনাট্যম,কত্থক, তথা বিভিন্ন আঞ্চলিক নৃত্য কে অনুকরণ না করে শুধু মাত্র উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে নবরূপে সাজিয়ে  তুলতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।  শান্তিনিকেতনেই নৃত্যধারাটি এভাবেই স্বতন্ত্র। দেশীয় নৃত্য ধারার পাশাপাশি জাপানি ডান্স,বার্মিস পেয়ে ডান্স জাভা নাচ, ব্যালের মত নৃত্যের  মিশ্রণ লক্ষণীয় শান্তিনিকেতনের নৃত্য ধারায়। এবারের 'শাপমোচন' মঞ্চস্থ করবার জন্য নাটকের দায়িত্বে রয়েছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এবং বসন্ত মুখোপাধ্যায়।

১৯৩৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই 'শাপমোচন'-এ অভিনয় করেছিলেন। ছায়াচিত্রের ইনসেটের মতো এই নাটকে একই সঙ্গে দুটি দৃশ্যের অবতারণা করেছিলেন তিনি। প্রথম 'শাপমোচন' মঞ্চস্থ করবার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শান্তিদেব ঘোষ 'রাজা', অমিত সেন 'রানী', হৈমন্তীদেবী 'উর্বশী', নিত্যানন্দ গোস্বামী 'গন্ধর্ব সুরসেন', গীতা রায় 'মধু শ্রী', যমুনা বসু 'প্রধান সখি'। সে সময়কার তথ্য, ছবি, পেপারকাটিং থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে 'শাপমোচন' কে আদিরূপেই মঞ্চস্থ করতে চলেছে সঙ্গীত ভবন।  জানা যায়, সংগীত ভবনের শতবার্ষিকী উৎসবের তৃতীয় দিনে 'শাপমোচন'  উৎসবের মূল আকর্ষণ

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...