টান ও টার্ন দুটোই তাঁর নেশা। একটা মাঠের বাইরের অপরটি মাঠের মধ্যে। তিনি চেইন স্মোকার আবার চেইন উইকেট টেকার। মাঠ ও মাঠের বাইরে, উভয়ক্ষেত্রেই তিনি সুপারস্টার। তাই তো তাকে অনেকে 'হলিউড' বলে ডাকতেন। ভুল নেই। তিনি সারা ক্রিকেট কেরিয়ার এমনকি তারপরে অবসর জীবনেও তার সেই ডাক নাম যে কতটা সত্য তা প্রমাণ করে গিয়েছেন। তিনি শেন ওয়ার্ন।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই লেগ স্পিন হারিয়ে যেতে বসেছিল। বাঁচিয়ে তুলেছিলেন ওয়ার্ন। লেগ স্পিন বোলিংকে পুনর্জীবন দেওয়ার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ তাঁর। তাঁর হাঁটাচলা, বোলিং, আগ্রাসন, জীবনযাপন, সবকিছু মিলিয়েই শেন ওয়ার্ন ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন। ব্লন্ড চুলের শেনকে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই সতীর্থরা নিক-নেম দিয়েছিল 'হলিউড’। পরে তা হারিয়ে যায়। কিন্তু ওয়ার্ন সেটা হারিয়ে যেতে দেননি। তিনি বারবার প্রমাণ করেন, তিনি হলিউডের কোনও সুপারস্টারের চেয়ে কম কিছু নন।
'এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ'-এর জন্য আর কোনও ক্রিকেটারের এতবার সংবাদ শিরোনাম আসার ঘটনা নেই বললেই চলে। যৌন কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে ডোপিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হওয়া, এমনকি বুকিকে পিচ নিয়ে তথ্য দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। অবসরের পরেও এসব কীর্তি কমেনি বরং বেড়েছে। এই তো গত অ্যাশেজে মাঠ কাঁপাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড। আর ধারাভাষ্যকার ওয়ার্ন চার বান্ধবীকে একসঙ্গে নিয়ে এমন রাসলীলা করলেন যে তা এলাকার মানুষকে অতিষ্ট করে তুলল এবং খবরের শিরোনামে আবার চলে এলেন 'হলিউড'।
এই ঘটনা তিনি বারবার ঘটিয়েছেন এবং সেই সব ভিডিও সংবাদমাধ্যমের হাতেও এসেছে। ২০০৩ বিশ্বকাপ। ডোপ টেস্টে ধরা পড়লেন ওয়ার্ন। খেলা হল না বিশ্বকাপ। তাতে কী? ফিরে এসে মাঠ কাঁপিয়ে দিলেন। ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে, এমন ওষুধ প্রস্তুতকারক এক কোম্পানির সঙ্গে বড় অঙ্কের অর্থের চুক্তি হয়েছিল—অন্তত এক বছর ধূমপান করবেন না, আর তাঁরা ওয়ার্নকে ব্যবহার করবেন বিজ্ঞাপনে। গোপনে করেছেন কি না কে জানে, তবে জনসমক্ষে অনেক দিন করেননি। চুক্তির শেষ পর্যায়ে গিয়ে আর পারলেন না, নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে মাঠেই সিগারেট ধরিয়ে ফেললেন, আর এক কিশোর সেই ছবি তুলে ফেলল।
ওয়ার্ন তাঁর ক্যামেরা ট্যামেরা কেড়ে নিয়ে এমনই হুলস্থুল বাঁধিয়ে দিলেন যে, চুক্তি গেলই, খবরও হয়ে গেলেন আরেকবার। স্টিভ ওয়া তো বলেইছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ওয়ার্নের কিন্তু এত বিতর্কিত একজন কী করে ক্যাপ্টেন হবেন। তাই নিজেকে সংযত করতে পেরে পন্টিং হয়েছিলেন ওয়া-র উত্তরসূরি। তাতে কী এসে যায়? ওয়ার্ন তো আপন মাঠের অধিনায়ক। শেন দ্য সুপারস্টার।
এই যেমন বল অফ দ্য সেঞ্চুরি। ১৯৯৩ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিজের প্রথম অ্যাশেজ খেলতে নেমেছিলেন ওয়ার্ন। শুরুতেই ইতিহাস। ওয়ার্নের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে পড়া বলটা এক হাতের মতো টার্ন করে ভেঙে দেয় গ্যাটিংয়ের অফ স্টাম্প। কী ঘটে গেল বুঝে উঠতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্যাটিং। অস্ট্রেলিয়ানদের উল্লাস দেখে বুঝে নিতে হয়েছিল বোল্ড তিনি! ঐতিহাসিক বলে লেগ স্পিনের পুনরুত্থান হয়েছিল।
২০০৩ সালে ডোপ কেলেঙ্কারির পর শেন ওয়ার্নের একদিনের ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়। বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার পর তাঁকে আর একদিনের ক্রিকেট দলে সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। ১৪৫টি টেস্ট ম্যাচে তিনি ৭০৮টি উইকেট শিকার করেছেন। পাশাপাশি ১৯৪টি একদিনের ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ২৯৩টি উইকেট শিকার করেন। কেলেঙ্কারি না করে বসলে ওই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারত। গোটা কেরিয়ার জুড়েই বিভিন্ন বিতর্ক তবু ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সুপারস্টার।