পূর্ব বর্ধমানের নিশ্চিন্তপুরের বাড়ি থেকে লন্ডনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের মঞ্চ|
এই পথটা পেরোতে শামিমার সম্বল ছিল মেধা, অধ্যবসায়| আর ছিল হার না মানা জেদ| ছোটবেলা থেকেই জীবনে এসেছে নানা প্রতিকুলতা | এত বাধার মধ্যেও স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাননি শামিমা খাতুন| এই স্বপ্ন দেখার সাহসটুকু করতে পেরেছিলেন বলেই আজ নেচার জার্নাল আয়োজিত কনফারেন্সের মঞ্চে নিজের গবেষনাপত্র পড়ার সুযোগ এসেছে তাঁর সামনে| অর্থাভাবের কারণে ২ লক্ষ টাকার বিশেষ ট্রাভেল গ্রান্ট দিয়ে তাঁকে বিদেশের পাঠাচ্ছে নেচার জার্নাল| ২০১৯ সালে গোটা বিশ্ব থেকে যে ৩ জনকে এই ট্রাভেল গ্রান্ট দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গকন্যা শামিমা | বাকি দুজনের একজন ঘানা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা | ‘প্রোটিন লিগ্যান্ড সিস্টেম ইন থার্মোডাইনামিক এবং স্পেকট্রট্রপিক স্টাডিজ’ এই গবেষনার জন্য শামিমা মনোনীত হয়েছেন |
দুবেলা খাওয়াটুকুই জুটত বাবার ইমাম পেশার দৌলতে| সেখানে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা ছিল বিলাসিতা| ছোটবেলা থেকে মেধাবী শামিমাকে শুধু এইটুকু স্বপ্ন দেখার সাহস যুগিয়েছিলেন বাবা শেখ রহমত আলি| ইমামতি ছাড়া একটা ছোট মুদির দোকানের আয় থেকেই সংসার চালাতে হয় তাঁকে| রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক রহমত আলি মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে কোনো সমঝোতা চাননি| তাই শামিমা যখন বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চেয়েছে পাশে থেকেছেন তিনি | যত অনটনই থাকুক, মেয়ের পড়াশোনার দিকে ছিল তাঁর কড়া নজর| শামিমা বরাবরই পড়াশোনায় মেধাবী| স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছেন ভালো ফল করে| আল আমিন মিশন থেকে পড়াশোনা করেছেন শামিমা। রসায়ন নিয়ে স্নাতক আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকেই রসায়নে স্নাতকোত্তর। থেমে থাকেননি তিনি| পেয়েছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। বর্তমানে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়তেই রসায়নের অধ্যাপিকা শামিমা। অধ্যাপনার পাশাপাশি নিজের গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন| শামিমার সেই স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে খুব শীঘ্রই| আগামী কয়েকদিনের মধ্যে লন্ডনে কেমিক্যাল থার্মোডিনামিক্স সম্পর্কিত ২৬ তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন শামিমা |