দক্ষসভায় পিতৃ অপমানে প্রাণত্যাগী সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডবে মাতেন মহাদেব। শিবের রুদ্ররাগ থেকে ধরিত্রী সৃষ্টিকে রক্ষা করতে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রর দ্বারা খণ্ডিত হয়ে যায় সেই দেহ।
দেবীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। এইসব জায়গাকেই সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ বলা হয়। সতীর ৫১ পীঠ হিন্দু ধর্মে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পরম পবিত্র জায়গা বলে বিবেচিত হয়। ভারত সহ বাংলাদেশ,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় এই ৫১ সতীপীঠ অবস্থিত।
ভারতে রয়েছে মোট ৫১টি সতীপীঠ। সারা বছরই সেসব মন্দিরে লেগে থাকে ভিড়। বাংলায় আছে ১২টি সতীপীঠ মন্দির।মতভেদে ১৩টি। তার মধ্যে বীরভূম জেলায় আছে সর্বাধিক।
বীরভূম জেলায় রয়েছে ৫টি সতীপীঠ-
লাভপুরের অট্টহাস ফুল্লরা- সতীর ওষ্ঠ পড়ায় এই জায়গার নাম অট্টহাস। লাভপুরের দক্ষিণদিহি গ্রামে অবস্থিত। শক্তিধামে দেবীর দুর্গরা নাম ফুল্লরা। মহাদেব এখানে বিশ্বেশ।
বক্রেশ্বর- দেবীর ভ্রুযুগলের মাঝের অংশ পতিত হয় এখানে। দুবরাজপুর স্টেশন থেকে ১১ কিমি দূরে অবস্থিত। শক্তিধামে দেবীর দুর্গার নাম মহিষমর্দিনী। মহাদেব এখানে বক্রনাথ।
বোলপুরের কঙ্কালীতলা- বোলপুর স্টেশন থেকে ১০ কিমি উত্তর-পূর্বে কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত কঙ্কালীতলা। বিশ্বাস অনুসারে, সতীর কঙ্কাল পড়েছে এখানে। দেবীর নাম এখানে দেবগর্ভা ও ভৈরব রুরু নামে প্রসিদ্ধ।
সাঁইথিয়ার নন্দকিশোরী তলা- সাঁইথিয়া স্টেশন থেকে ১.৫ কিমি দূরে এক বটবৃক্ষের তলে প্রচীরঘেরা জায়গা। এখানে পড়েছিল সতীর কণ্ঠহার। দেবীর নাম নন্দিনী। আর ভৈরবের নাম নন্দিকেশ্বর।
নলহাটির নলাটেশ্বরী মন্দির- নলহাটি স্টেশন থেকে ২ কিমি পশ্চিমে একটি টিলার ধারে অবস্থিত এই মন্দির। সতীর নলা পড়েছিল এখানে। শক্তিধামে দেবীর দুর্গরা নাম কালিকা দেবী। মহাদেব এখানে যোগেশ।
বর্ধমানে রয়েছে ৩টি সতীপীঠ-
কেতুগ্রামের বাহুলা মন্দির- কাটোয়া থেকে ৮ কিমি দূরে কেতুগ্রামে অজয় নদীর ধারে অবস্থিত বহুলা। সতীর বামবাহু পড়ে এখানে। দেবীর নাম বহুলা। ভৈরবের নাম ভীরুক।
মঙ্গলকোটের মা মঙ্গলচণ্ডী- গুসকরা স্টেশন থেকে ১৬কিমি দূরে উজানী বা কোগ্রাম। সতীর ডান কনুই পড়ে এখানে। দেবীর নাম মঙ্গল চণ্ডিকা আর ভৈরবের নাম কপিলাম্বর।
যুগাদ্যা মন্দির- এটি অবস্থিত ক্ষীরগ্রামে। সতীর দক্ষিণ পাদাঙ্গুষ্ঠ পড়েছিল এখানে। দেবীর নাম যুগাদ্যা আর আর ভগবান শিব এখানে ক্ষীরখন্ডক।
সাতকুড়ায় ভামরীদেবীর মন্দির- জলপাইগুড়ির কাছে তিস্তা নদীর তীরে, বোদা অঞ্চলে শালবাড়ি গ্রামে। সতীর বামপদ পড়ে এখানে। দেবীর রাম ভ্রামরী, ভৈরবের নাম অম্বর।
নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী মন্দির- মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের লালবাগ কোর্ট রোড স্টেশন থেকে ৩ কিমি দূরে অবস্থিত। সতীর কিরীট পড়ে এখানে। দেবীর নাম বিমলা। আর ভৈরবের নাম সংবর্ত।
তমলুকের বর্গভীমা মন্দির- তমলুকে অবস্থিত এই মন্দির। দেবীর নাম ভীমরূপা। আর মহাদেব শিবের নাম সর্বানন্দ।
কলকাতা-কালীঘাট: শহর কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্দির এটি। সতীপীঠ হিসেবেও খুব জনপ্রিয়। প্রচলিত বিশ্বাস, এখানে ছিটকে পড়েছিল সতীর ডান পায়ের পাতা। শিব এখানে নকুলিশ বা নকুলেশ্বর। দেবীর নাম কালিকা।
রত্নাবলী শক্তিপীঠ- রত্নাবলী শক্তিপীঠ, স্থানীয়ভাবে মা আনন্দময়ী মন্দির নামেও পরিচিত, হুগলির খানাকুলে রত্নাকর নদীর তীরে অবস্থিত। কিংবদন্তি অনুসারে, এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই পবিত্র স্থানে দেবী সতীর ডান কাঁধ (দক্ষিণা স্কন্ধ) পড়েছিল।