ভোর ৫টা থেকেই শুরু ‘জওয়ান ফিভার’, কেমন ছিল সেই উত্তেজনা?

ঘড়ির কাঁটা ঠিক সওয়া চারটে কাছাকাছি। বৃষ্টি ভেজা কলকাতায় তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। সারা শহরের রাস্তা ফাঁকা, কিন্তু নিউটাউনের একটি মাল্টিপ্লেক্সের সামনে দলে দলে মানুষ প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর তাদের মুখেই একটাই স্লোগান ‘শাহরুখ! শাহরুখ!’, কারণটা নিশ্চয়ই জানেন। কলকাতা শহরে এরকম ঘটনা প্রথমই ঘটল বটে।     

PTI09_07_2023_000097B

আজ, ৭-ই সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে মুক্তি পেল শাহরুখের নতুন ছবি ‘জওয়ান’। শাহরুখের প্রতি শহর কলকাতার সেই নিঃশর্ত আবিরল ভালবাসাই প্রমাণ করে দিল আবারও। ‘পাঠান’ মুক্তির পর এই উপচে পড়া ভীড় বুঝিয়ে দিল যে ‘কিং ইজ ব্যাক!’

প্রতিটা দর্শকদের মুখে বোঝা যাচ্ছে সেই উত্তেজনাটা। মনে মনে ভাবে কখন শুরু হবে। ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ছে সবাই। তাদের মধ্যে কিছুজনের তো ঘুমের সেই রেশ না কাটায় ওখানেই ঘুমিয়ে পরবে বলে মনে হয়, তবুও শাহরুখের জন্য তারা এইটুকু করতে পারবেই। সেটাই তো স্বাভাবিক। আগামী ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট যে জগতে তারা প্রবেশ করবেন, সেখানে শুধুই শাহরুখ আর আবেগের জয়গান।

কলকাতায় ‘পাঠান’ -এর প্রথম শো ছিল সকল ৬টা ৪৫ মিনিটে। কিন্তু এবারে সেই শাহরুখের প্রথম শো ভোর ৫টায়। ‘জওয়ান’-এর অগ্রিম বুকিং শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রথম কয়েক দিনের শো-এর টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের দিকে হয়ে গেছিল বলাই যেতে পারে। ‘পাঠান’ এর অগ্রিম টিকিট বিক্রিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে ‘জওয়ান’। জানা গিয়েছে, নিউটাউনের মিরাজ সিনেমাজ প্রথম ভোর ৫টায় ‘জওয়ান’- এর শোয়ের ব্যবস্থা করেছে।

এই প্রসঙ্গে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিত শর্মা এক সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন, “জওয়ান’-এর প্রথম দিনে এখনও পর্যন্ত কলকাতায় আমাদের প্রেক্ষাগৃহে সবচেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।”

কিইন্তু এত ভোরে দর্শকদের আসতে অসুবিধে হয়নি? এই নিয়ে মেটিয়াবুরুজ থেকে আসা এক অনুরাগী সংবাদ মাধ্যমে বললেন, “এটা কোনও সমস্যাই নয়। মাঝ রাতে শো থাকলে আরও ভাল হত। প্রয়োজনে সারা রাত এখানেই থাকতাম। কিন্তু শাহরুখকে সবার আগে পর্দায় দেখতে চাই।”

অন্যদিকে দমদম থেকে আসা এক অনুরাগী জানালেন যে প্রথম দিনেই তাঁর দু'বার করে ‘জওয়ান’ দেখার পরিকল্পনা রয়েছে।  

শুধু সাধারণ মানুষেরা দর্শক হিসেবে আসেনি বরং এই ভোরবেলায় শাহরুখকে দেখতে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত হয়েছিলেন অভিনেতা নীল ভট্টাচার্য সঙ্গে তাঁর স্ত্রী তৃণা সাহা। উৎসাহিত অভিনেত্রী জানিয়েছেন, “আসতেই হত। আমরা দু’জনেই শাহরুখের ফ্যান। এ রকম একটা অভিজ্ঞতা হাতছাড়া করতে চাইনি।”

শুধু সিনেমা শুরু আগে নন, সিনেমা হলের মধ্যেও ছবি চলাকালীনও দেখা গিয়েছে দর্শকদের সেই উত্তেজনা ও উন্মাদনা। ছবির শুরুতেই দেখা গেল ব্যান্ডেজের ফাঁকে ফুটে উঠল একটি চোখ। শাহরুখ খানের সেই প্রথম ঝলক দেখেই দর্শকদের সেই চিৎকারে কাঁপতে থাকল হলের দেওয়াল। নয়নতারাকে দেখে যেমন দর্শকদের হাততালি পড়ল ঠিক তেমনি পড়ল বিজয় সেতুপতির এন্ট্রিতে। যদিও দীপিকা পাডুকোন কোন অংশেই কম যাননি। এরপর শারুখের নাচ ‘জিন্দা বান্দা’ গানে, দর্শকরা নিজেদের আসন ছেড়ে উঠে তালে তাল মিলিয়ে নাচতে শুরু করে দিয়েছিলেন।

দর্শকরা বুঝিয়ে দিল যে বড় পর্দায় সিনেমার কোনও বিকল্প হয় না, সেটা তাদের এই আবেগ দেখে বোঝা যাচ্ছে বটে। হিন্দি সিনেমায় ইতিহাস সূচনা করার জন্যে একটা বড় উদ্যোগ নিল শহর কলকাতা। বাকি সপ্তাহের দিনগুলিতে কিরকম ‘জওয়ান ফিভার’ দেবে, সেটার দিকেই তাকিয়ে সবাই।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...