সারাজীবনের সঞ্চয় ভেঙ্গে বাড়িতে বৃদ্ধাশ্রম তামিলনাড়ু দম্পতি’র

কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পড় বাকি আর পাঁচজন যা করে ঠিক সেভাবেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতেন ওঁরা। ঘুরে বেড়িয়ে বা আর্থিক সঞ্চয়ে। কিন্তু নিজেদের জীবনটা ঠিক এভাবে দেখতে চাননি ওঁরা ।

তামিলনাড়ুর তিরুনগরের আর জালাজা এবং কে জনার্দনন। ছাত্রজীবনে দুজনেই বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কর্মজীবনে প্রবেশের তাতে একটু ভাটা আসে। চাকরি, ব্যক্তিগত জীবন সামলে অন্যদিকে সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। 

ওঁদের বাড়িতে প্রায় প্রত্যেকদিন কেউ না কেউ আসত খাবার চাইতে। কেউ বা টাকা পয়সা। ভবঘুরে, ভিখারী। বয়সের ভারে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে বাধ্য হয়ে ভিক্ষার পথ। ১৫ থেকে ২০ জন। কোনও কোনও দিন ছাড়িয়ে যেত সংখ্যাটা। কাউকে ফেরাতেন না ওঁরা।

কেউ কেউ ওঁদের বয়সের কাছাকাছি।

 অসহায়তার দৃশ্যগুলো এভাবে দেখতে দেখতে একদিন দু’জনে ঠিক করলেন চাকরি ছাড়বেন। স্বেচ্ছাবসর। নিজেদের বেতনের ২৫ শতাংশ রেখে বাকি সবটা দিয়ে বৃদ্ধদের সেল তৈরির কাজ শুরু করলেন। নিজেদের বাড়িতেই শেল্টার।

আর জালজা কাস্টম অ্যান্ড শেল্টার এক্সসাইজ ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী। দু দশকের চাকরি জীবন।

কে জনার্দনন বিএসএনএল টেলিকমের অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর ছিলেন।

তাঁদের দোতলা বাড়ির একটা তলা জুড়ে তৈরি হল বৃদ্ধাশ্রম। ৬০০ স্কোয়ার ফিটে ৮-১০ জনের আশ্র্য় । একটা হলরুমে কট ফেলে বেডরুম। দুটো বাথরুম।

জালাজা রোজ রান্না করেন ওঁদের জন্য।

যেদিন প্রথম এই বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন বৃদ্ধাশ্রমের জন্য, সেদিন প্রথম আসে দু’জন।

ওঁদের কথায়, “আমাদের অঞ্চলটা এত ছোট যে খবরটা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ল। কাউকে খুঁজতে যেতে হল না আমাদের।ওঁরাই আমাদের খুঁজে নিলেন।”

রাস্তায় হেলাফেলায় ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা মানুষগুলো পেল স্বাধীন আশ্রয়। কিছু নিয়ম অবশ্য রেখেছেন ওঁরা। প্রত্যেককে ওঁরা কট, ম্যাট্রেস, আলমারি, র‍্যাক দেওয়া হয়। সেই নির্দিষ্ট জায়গাতেই নিজেদের জিনিস রাখতে হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাটা অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে এখানের আবাসিকদের।  

 বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও একটা একতলা বাড়ি কিনলেন ওঁরা। এখানের রান্নাঘরে ভাত, সম্বর, রস্ম খান ওঁরা। সবাই একী কাহবার। দুট বাড়ির রান্নাঘর। জালাজার সামলাতে বিশেষ অসুবিধা হয় না।

২০০০ সালে চাকরি ছাড়েন এই দম্পতি। বৃদ্ধাশ্রম শুরু করার ৫ বছর পর ২০১৬ সালে ট্রাস্ট তৈরি করেন। যেহেতু বৃদ্ধাশ্রম সেইজন্য বয়স্কদের স্বাস্থ্যের দিকটাও মাথায় রাখতে হত ওঁদের। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে অসুবিধায় পড়তে হত।

ট্রাস্ট গঠনের তরুণ ডাক্তারদের একটি দল নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়। সম্পূর্ণ আলাদা সেট আপ। ধীরে ধীরে আরও বড় হয় প্রতিষ্ঠান। আরও বেশি মানুষ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হয়।

এখন ওঁদের বয়স ৭৩ আর ৬৩। জীবনের সমস্ত সঞ্চয় মানুষের জন্য কাজে লাগিয়েছেন ওঁরা। কিন্তু থেমে থাকতে চান না। আগামী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চান ওঁদের মানবিক বোধ।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...