ছত্রিশগড়ের বনসৃজনের পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাংলার মাটিতে বনসৃষ্টির উদ্যোগ নিল এবার পুরুলিয়ার বনদপ্তর। ভরা আষাঢ়েও বৃষ্টির দেখা নেই পুরুলিয়ায়। পাথুরে মাটি, সাথে খরাপ্রবণ পুরুলিয়া দিনদিন হয়ে উঠছে রুক্ষশুক্ষ। গাছপালার অভাবে বৃষ্টি যেন মুখ ফিরিয়েছে তার থেকে। তাই প্রকৃতির নিজের খেয়ালেই জঙ্গল সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে রুখা জমিতেই 'সীড বল' ছড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বনদপ্তর। এই অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছে মূলত পুরুলিয়ার বনবিভাগের অধীন কোটশিলা বনাঞ্চল।
পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম বন সৃষ্টির এইরকম কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে 'অসোসিয়েটেড সাকসেশন'। কোটশিলা বনাঞ্চল তাদের দুটি সনির্ভরগোষ্ঠী- বিপত্তারিণী ও পার্বতীর সাহায্যে তৈরী করেছে প্রায় চল্লিশ হাজার সীড বল। সাধারণ মাটির সাথে চারকোলের গুঁড়ো মিশিয়ে ছোট ছোট মাটির দলা করে তার মধ্যে তিনটি বীজ দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে এই বল। আঞ্চলিক গাছ যেমন নিম, তেঁতুল, সোনাঝুরি, খেজুর, বেল, জাম বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে এই সিড বলে। এই সীড বল তারপর পড়ুয়ারাই খেলার ছলে ছড়িয়ে দেবে পতিত জমিতে। তারপর এই সীড বলগুলি মাটিতে মিশে গিয়ে তৈরী করবে গাছপালা।
সামাজিক বনসৃজনের থেকে এই পদ্ধতি অনেকাংশে আলাদা। সামাজিক বনসৃজনের ক্ষেত্রে মাটি কেটে গর্ত খুঁড়তে হয়, তারপর সমান দূরত্ব মেপে সেই অনুযায়ী গাছ লাগাতে হয়। কিন্তু এই 'অসোসিয়েটেড সাকসেশন'-এর ক্ষেত্রে এসব পরিমাপের প্রয়োজন নেই। প্রকৃতির নিয়মেই বিক্ষিপ্তভাবেই বেড়ে উঠবে গাছগুলি এবং সৃষ্টি হবে জঙ্গলের। কোটশিলা বনাঞ্চলের পাইলট প্রজেক্ট এটি। সবুজায়নের এই পদক্ষেপ মহিলাদের উপার্জনের পথ প্রশস্ত করেছে। এক একটি সীড ব্যাগে থাকছে পাঁচশোটি করে সীড বল। ব্যাগ প্রতি তারা পেয়ে যাচ্ছে পাঁচশো টাকা।
কোটশিলা বনাঞ্চলের আধিকারিক সোমা সরকার দাস বলেছেন "ছত্রিশগড়ের ফরেস্ট সম্পূর্ণভাবে ম্যান-মেড ফরেস্ট, সেখানে প্রাকৃতিক কোন বনাঞ্চল নেই. কিন্তু সেই ম্যান-মেড ফরেস্টের অবস্থা আমাদের পুরুলিয়ার থেকে অনেক ভালো। আমি ওখানেই প্রথম দেখেছিলাম এই সীড বল তৈরির মাধ্যমে বনসৃজনের ব্যাপারটি। ওখানকার মহিলারাই এই কাজ করতেন। সেখান থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি পুরুলিয়ার পাথুরে মাটিতে জঙ্গল সৃষ্টির উদ্যোগটা নিই। আমার এই কর্মযজ্ঞকে সফল রূপ দেওয়ার চেষ্টাই আমি করছি।"