সাল ২০১১। মুম্বইয়ে এক ক্রাইম জার্নালিস্টের হত্যায় নড়ে উঠেছিল গোটা দেশ। বরফ ঠান্ডা মেজাজ। ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। হাতুর তালুর মতো চিনতেন মুম্বইয়ের অপরাধ জগতের অলিগলি, তুখোড় সোর্স হ্যান্ডেল তবু এমন আচমকা মৃত্যু ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছিল অনেকের শিরদাঁড়াতেই। প্রকাশ্য রাস্তায় দিনের আলোয় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে।
গোটা দেশ জেনেছিল মুম্বইয়ের বাঙালি সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে’র নাম। হত্যার নেপথ্যে ছোটা রাজন। ঘটনার দায় স্বীকার করেন মাফিয়া চাঁই।
ছোটা রাজনের মুখে উঠে এসেছিল আরও একটি নাম। দাবি এই মৃত্যুতে তাঁর প্ররোচনাও আছে। মুম্বইয়ের ক্রাইম রিপোর্টার জিগনা ভোরা। ২০১২ সালে জিগনাকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ। সেই মুহূর্তের ‘দ্য এশিয়ান এজ’ সংবাদপত্রের তৎকালীন ডেপুটি এডিটর।
মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন শাখার অভিযোগ অনুযায়ী, হত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসে পেশাগত রেষারেষি। তাঁর বিরুদ্ধে রাজনকে সাহায্য করা এবং অরগ্যানাইড ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
এই ঘটনাকে ভিত্তি করেই হংসল মেহতার ওয়েব সিরিজ স্কুপ। জিগনা ভোরার লেখা ‘বিহাইন্ড বারস্ ইন বাইকুল্লা: মাই ডেজ় ইন প্রিজ়ন’ বইটি অবলম্বনে তৈরি হয়েছে সিরিজ়।
২ জুন অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে সিরিজ। ক্রাইম রিপোর্টার জ্যোতির্ময় দে ওরফে জে.দে’র ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জয়দেব সেন। জিগনা ভোরা এই সিরিজে জাগ্রুতি পাঠক অভিনয়ে করিশ্মা তন্না।
প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিকের প্যাশনেট সাংবাদিক। সিঙ্গেল মাদার, উচ্চাকাঙ্খা, বিগ স্টোরি, বাইলাইন আর এক্সক্লুসিভ শব্দগুলোই অক্সিজেন তার জীবনে। সারাক্ষণ ব্রেকিংইয়ের সন্ধানে ছুটে চলা জীবনে হঠাৎই জেদ পরে। তার কেরিয়ার যখন মধ্য গগণে তখনই জয়দেব সেনের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয় সে। খবরের দুনিয়া থেকে রাতারাতি নিজেই খবর হয়ে পড়ে। জায়গা হয় বাইকুল্লার জেলের মাটিতে।
প্রতিদিন স্টোরি ব্রেকের লড়াইটা হঠাৎ বদলে যায় কারাগার থেকে মুক্তির লড়াইতে। কিন্তু হার মানে না ‘জাগু’।
জাগ্রুতি পাঠকে র ভূমিকায় চমকে দিয়েছেন করিশ্মা। তাঁর অভিনয় বহুদিন বাদে সংবাদের শিরোনামে ফিরিয়ে দিয়েছে অন্তরালে থাকা জিগনাকে। করিশ্মার অভিনয়ে মুগ্ধ তিনিয়ে। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সে কথা। মূলস্রোত থেকে দূরে সরে বর্তমানে কেমন তাঁর জীবন?
গ্রেফতারের বছরই জামিন পান। ২০১৮ সালেই নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত ঘুরে বর্তমানে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন জিগনা। কিন্তু খবরের দুনিয়া তাঁর কাছে বহুদিন প্রাক্তন। জীবনের এই পর্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেন বিহাইন্ড বারস্ ইন বাইকুল্লা: মাই ডেজ় ইন প্রিজ়ন’
শুনতে অবাক লাগলেও অতীতের জিগনার সঙ্গে তেমন কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না এই সময়ের জিগনার। যেন সম্পূর্ন ভিন্ন দুই মানুষ। এক সময় মুম্বইয়ের শোরগোল তোলা সাংবাদিক এখন জ্যোতিষচর্চা করেন। আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে পরিচিতি আছে। থাকেন মুম্বইতে। কারাগার থেকে মুক্তির পর মানসিক ক্ষত, স্থিতাবস্থা ফেরাতে লড়াই করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।
খবর সংগ্রহ, সোর্স তৈরি, নিউজরুমে প্রথম পাতার ব্যস্ততা- সাংবাদিকের ডিটেলিং অত্যন্ত জীবন্তভাবে উঠে এসেছে সিরিজে। জাগ্রুতির বস সংবাদপত্রের সম্পাদক ইমরান মহম্মদ জ়িশান আইয়ুবের অভিনয় বলিষ্ঠ। পরদায় চমকে দিয়েছেন জয়েন্ট কমিশনার অফ পুলিশ হর্ষবর্ধন শ্রফ হরমন বাওয়েজা। ৬ এপিসোডের সিরিজ টানটান উত্তেজনায় শেষ হয়। মাফিয়া জগৎ, ক্ষমতার মোহ, পেশাজগতের রেষারেষি, মধ্যবিত্ত জীবনের স্বপ্ন আর একা মেয়ের খাদের মুখ থেকে ফিরে আসার অদম্য লড়াই চোখ টেনে রাখে দর্শকদের। শেষ জানতে ইচ্ছে করে কেমন আছেন ‘জিগনা’