বরফ কে আটকান

বরফ পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ, গাড়ি চলাচল করতে পারছে না| চারদিক সাদা বরফের চাদরে মোড়া| সেই সময় কাজ থাকলেও তা করতে যাওয়ার জো নেই| এরকম অবস্থার শিকার হতে হয় সেই সমস্ত দেশকে যেখানে শীতের সময় তুষারপাত হয়| সম্প্রতি এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গবেষণা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা| কিভাবে এই বরফ আটকানো যাবে তাই নিয়েই চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তারা| সেই সময় অ্যাডভানস জার্নালস নামক এক জার্নালে প্রকাশিত হলো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য|

সম্প্রতি এই বরফে রাস্তাঘাট আটকে যাওয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করতে দেখা যায় বিজ্ঞানীদের| তাদেরই মধ্যে তিনজন বিজ্ঞানীর করা গবেষনার অংশ প্রকাশ পায় ‘অ্যাডভানস জার্নালস’-এ| এই তিন বিজ্ঞানীর মধ্যে দুজন বিজ্ঞানী ভারতীয় এবং একজন আবার খাস কলকাতার| এনাদের তৈরী গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, তারা বাতলেছেন এমন একটি পথ যার সাহায্যে এই বরফ জমা বন্ধ করা যাবে| তারা জানাচ্ছেন, কেমিস্ট্রির পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ফেজ সুইচিং লিকুইড’ বা পিএসএল, যেসব জায়গায় বরফ জমে অসুবিধা সৃষ্টি করে সেই জায়গায় এই লিকুইডটির প্রলেপ সেখানে আর বরফ জমতে পারবে না|

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলের হিমাঙ্ক শুন্য ডিগ্রী সেলসিয়াসের একটু উপরে| তাই যেসব জায়গা খুব ঠান্ডা হয়ে থাকে সেইসব জায়গাতেই জল জমে বরফ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে| সেইসব জায়গায় থাকা রাস্তা, বাড়িঘরের জানলা, গাছপালা সবটাই সাদা চাদরে চাপা পড়ে যায়| যে জায়গা আপনি বরফের হাত থেকে বাঁচাতে চান সেইসব জায়গায় পিএসএল স্প্রে করে দিন| এই যৌগটি সেইসব জায়গায় এক কঠিন আবরণ তৈরী করে| ফলে সেই জায়গায় আর বরফ জমতে পারে না| কিন্তু কিভাবে? ব্যাপারটা ঘটবে ঠিক এইভাবে- যেই পরিবেশের তাপমাত্রা শুন্য ডিগ্রিতে পৌছাবে সেই সময় জলকণা ধীরে ধীরে বরফ হওয়া শুরু করবে| আর বরফ জমার জন্য যেই জল তাপ ছাড়তে শুরু করবে সেই তাপ শুষে নেবে এই যৌগ| ফলে সেই জল আর বরফে রুপান্তরিত হতে পারবে না|

এই গবেষনার অন্যতম গবেষক কলকাতার রুক্মাভ চট্টোপাধ্যায় জানান, এর আগে বরফের প্রলেপ আটকানোর জন্য যেসব যৌগের ব্যবহার হত তারা বেশিদিন টিকত না| বারবার সেই যৌগের প্রলেপ দিয়ে যেতে হত| কিন্তু এদের তুলনায় পিএসএল অনেক বেশি ক্ষমতাশালী| একবার এই যৌগের প্রলেপ লাগালে তা নিজে থেকেই টিকে যাবে দিনের পর দিন| আর এই যৌগের লীনতাপ শুষে নেওয়ার ক্ষমতাও অন্য যৌগের তুলনায় অনেকটাই বেশি| বরফ জমার জন্য খসখসে সারফেসের প্রয়োজন হয় কিন্তু এই যৌগটির প্রলেপ মসৃন হওয়ার কারণে বরফ সেই জায়গায় আরোই জমতে পারে না|

এই গবেষনার অন্য একজন পথিকৃত ড্যানিয়েল জানান, তিনিই এর আগে পিএসএল নিয়ে গবেষণা করছিলেন| সেখানেই তিনি দেখেন এই যৌগের উপরে পড়া হিমাঙ্কের নিচে থাকা জলকণা ইতস্ততভাবে এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে| কিছুতেই একটি জায়গায় স্থির হচ্ছে না| তার এই আবিষ্কারকে সাথে নিয়েই নতুন গবেষণা শুরু করেন রুক্মাভ, ড্যানিয়েল এবং সুশান্ত এই তিন বিজ্ঞানী| তারা জানান, পাতলা ও পুরু দুই ধরণের প্রলেপ দিয়েই তারা দেখেছেন| সবক্ষেত্রে পিএসএল-এর কার্যক্ষমতা একই থাকছে| বিজ্ঞানীরা এটাও জানান, গাড়ির উইন্ডশিল্ডে বা বিমানের ডানায় যদি এই যৌগের প্রলেপ দেওয়া হয় তাহলে সেইসব জিনিসের কর্ম ক্ষমতাও কোনভাবে কমবে না| বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, শীতপ্রধান দেশে এইভাবে বরফ জমার ফলে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমান বিপুল হয়ে থাকে| তাই সেইসব দেশকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতেই তাদের এই পদক্ষেপ| 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...