বালি,পাথর, সিমেন্ট দিয়েই এতদিন কংক্রিট তৈরী হয়ে এসেছে। সঠিক মিশ্রনে এইভাবে কংক্রিট তৈরী হলে তা যুগ যুগ ধরে স্থায়ী হয় তা সকলেরই জানা। এবারে কলোরাডো ইউনিভার্সিটির এক বৈজ্ঞানিক দল একটু অন্যরকম কংক্রিট বানালেন। তাঁরা বলছেন, এই কংক্রিটগুলি জীবন্ত হবে এবং বংশবৃদ্ধি করতে পারবে।
কোনও রকম রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কংক্রিট তৈরী হচ্ছেনা, বরং কায়নোব্যাক্টেরিয়া নামে সাধারণ এক প্রকার মাইক্রোব দিয়ে এটি তৈরী হচ্ছে, যা এনার্জি ধরে রাখতে পারবে ফোটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষিত হয়। এর মাধ্যমে প্রচুর গ্রিন হাউস গ্যাস বেরোবে, যা পরিবেশের জন্য যথেষ্ট উপকারী। এটি দেখতে অনেকটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন মেটেরিয়ালের মত এবং সবুজ রঙের, জানালেন এই প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক তথা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার উইল স্রাবর।
প্রথমে কায়নোব্যাক্টেরিয়া, পরিপোষক, বালি এবং জলের মিশ্রনে দিয়ে দিতে হবে। এর ভেতরের মাইক্রোব খুব তাড়াতাড়ি আলো শুষে নিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বনেট তৈরী করবে এবং বালির কণাগুলি সিমেন্টে পরিণত হবে। তবে খুব ধীর গতিতে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী ডঃ স্রাবর জানিয়েছেন, এই মিশ্রণে শিরীষের আঠা মেশালে তা আরও মজবুত হবে। শিরীষের আঠার সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংমিশ্রনে খুব কম সময়ে জৈব কংক্রিটগুলি তৈরী হয়ে যাবে। একদিন পর ওই সংমিশ্রণ দুই ইঞ্চি কিউব, জুতোর বাক্স এবং অনেকরকম কাটআউট সহ বিভিন্ন রকম আকারের কঠিন পদার্থে পরিণত হবে। দু'ইঞ্চি মাপের কংক্রিটগুলি একজন মানুষের দাঁড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট পোক্ত তবে বাজার চলতি কংক্রিটের তুলনায় কম পোক্ত। কিন্তু জুতোর বাক্সের মাপের যে কংক্রিটগুলি তৈরি হবে, সেগুলি দিয়ে প্রফেশনাল কাজ দিব্যি করা যাবে। এই কংক্রিটের ছোট সংস্করণগুলো এত সুন্দর দেখতে, যে দেখেছে সেই একটা করে নিজের জন্য নিয়ে চেয়েছে জানালেন স্রাবর।
সাধারণ আবহাওয়ায় ওই ব্লকগুলি রাখলে তার ভেতরের ব্যাকটেরিয়া মারা যাবে কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে আবার ব্লকগুলি যথেষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায় রাখলে সেগুলি আবার প্রাণ ফিরে পাবে। এভাবে একটি ব্লকের মধ্যে অল্প ফাঁক রেখে তার পাশে গরম ব্লক রেখে যদি কংক্রিট বানানোর মেটেরিয়াল দিয়ে দেওয়া হয়, সেই ফাঁকে, তাহলে তা নিজে থেকেই কঠিন ব্লকে পরিণত হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে পরিশুদ্ধ বালিই ব্যবহার করতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ব্যবহার করা বালি দিয়ে এই জৈব কংক্রিট তৈরী হবেনা। স্রাবর-এর মতে এই জৈব কংক্রিট ব্যবহার করলে পরিবেশ যথেষ্ট পরিষ্কার হয়ে যাবে। দূষণের মাত্রা কমে যাবে এমনকি, যে কোনও পরিবেশেই এই কংক্রিট নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। এই কংক্রিট দিয়ে মঙ্গল গ্রহেও কাজ করা যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্রাবর।