মহাকাশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গ্যালাক্সি থেকে শুরু করে ব্ল্যাক হোল, নানা গ্রহ নক্ষত্র প্রভৃতি। সেই মহাবিশ্বের কোনায় কোনায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলে নানা মহাজাগতিক ঘটনা। প্রতিনিয়ত জন্ম হচ্ছে কত নতুন নক্ষত্রের আবার কোথাও মৃত্যু ঘটছে এরকমই কিছু নক্ষত্রের। কিন্তু সম্প্রতি মহাকাশে খোঁজ মিলেছে এক পাগল গ্যালাক্সির। মহাকাশবিজ্ঞানীদের মতে এরকম গ্যালাক্সির খোঁজ আগে কখনো মেলেনি। তাই নতুন করে আবিষ্কৃত হওয়া এই গ্যালাক্সিগুলি বেশ চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মহাকাশে ঘটছে অবাক করা কিছু কান্ড। দেখা গেছে, মহাকাশের বেশ বয়স হয়ে যাওয়া গ্যালাক্সি থেকে জন্ম নিচ্ছে বেশ কিছু নতুন নক্ষত্র। কিন্তু এ কিভাবে সম্ভব? গ্যালাক্সির বয়স হয়ে গেছে ধীরে ধীরে তার নতুন নক্ষত্রের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কমে আসে। সেই ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নতুন নক্ষত্রের জন্ম দেওয়ায় বিস্ময়ে হতবাক মহাকাশবিজ্ঞনীরা। দেখা যাচ্ছে, মহাকাশে বার্ধক্যকে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে জন্ম দিয়ে চলেছে নতুন নতুন নক্ষত্রের। সেই নক্ষত্রের বেড়ে ওঠার সময় আবার এই গ্যালাক্সিগুলিই ধাত্রীর ভূমিকা নিয়ে থাকে।
সম্প্রতি কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যালিসন কার্কপ্যাট্রিক তাদের এই অভিনব আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন। গত ১২ই জুন আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির ২৩৪তম বৈঠকে এই আবিষ্কারের কথা প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি।এই গবেষণাদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বোস্টনের নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসী ভারতীয় অধ্যাপক স্বপ্নিল চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমবার এরকম কোনো কোল্ড কোয়াসারের খোঁজ মিললো মহাকাশে। কোয়াসার হলো সূর্যের থেকেও বহুগুন বড় আকারের একটি ব্ল্যাক হোল।জানা গেছে, এদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সময় প্রচন্ড এক আকর্ষণ বলের সম্মুখীন হয়। এর ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই ব্ল্যাক হোলের মধ্যে গিয়ে পড়ে। এইভাবে যখন বহিরাগত কোনো পদার্থ ব্ল্যাক হোলের মধ্যে প্রবেশ করে তখন তার চারপাশ দিয়ে প্রচুর ধূলিকণা ও নানা পদার্থ ছিটকে আসার ফলে প্রচুর শক্তির বিকিরণ হয়ে থাকে। এইসময় সৃষ্টি হওয়া বিকিরণ শক্তি এতটাই শক্তিশালী হয় যে তারা ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ বলকেও অগ্রাহ্য করে পারে।আর কোয়াসার হলো এই ব্ল্যাক হোলের থেকে বাইরে চলে আসা প্রচন্ড উত্তপ্ত গ্যাসের মেঘ। কিন্তু নতুন নক্ষত্রের জন্ম হওয়ার জন্য প্রয়োজন ঠান্ডা গ্যাসের মেঘের। এর আগেও কোয়াসারের পাশে গ্যাসের স্তুপ প্রতক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীগণ। কিন্তু তাতে কেউ অবাক হননি। কোনো কোয়াসারের যখন গ্যালাক্সিবিহীন হয়ে যাওয়ার সময় হয় তখন ধীরে ধীরে কোয়াসারের পাশ দিয়ে ধুলোর মেঘ চলে যায়। তখন সেই কোয়াসারের রং দেখায় লাল রঙের। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখেন এই কোয়াসারের রং আসলে নীলাভ। আর নীলাভ রঙের কোয়াসারের অর্থ হলো এই কোয়াসারের পাশে প্রচুর ঠান্ডা গ্যাসীয় উপাদান জমেছে। আর এই জমে থাকা গ্যাসীয় উপাদান থেকেই জন্ম হচ্ছে নতুন নক্ষত্রের।
বিজ্ঞানীদের মত, গ্যালাক্সির বিবর্তন প্রক্রিয়ার অন্যতম একটি ঘটনা এটি। এর আগে এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের চোখ এড়িয়ে গেলেও সম্প্রতি সেই ঘটনা প্রতক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানাচ্ছেন, এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রচুর নতুন ভারী মৌল তৈরির সম্ভাবনা তৈরী হয়।এছাড়াও এই প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া নক্ষত্রগুলিতে প্রাণের কোনো স্পন্দন রয়েছে কিনা তার খোঁজও পাওয়া যাবে এই আবিষ্কারের ফলে।