ভারতীয় সংস্কৃতিতে রয়েছে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান-রীতি-নীতি, এদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও এরকম কিছু নির্দিষ্ট রীতি মেনে চলে। বহুযুগ আগে থেকেই চলে আসছে এই নিয়ম। পরবর্তী প্রজন্মের সকলে মেনেও আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে এই সমস্ত নিয়মের পিছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ যা জানার আগ্রহ অনেকেরই থাকে।
করজোড়ে নমস্কার করা হিন্দু সংস্কৃতির নিজস্ব একটা অংশ। এই সংকেত বা জেসচার হল পরম্পরাগত ভারতীয় অভিবাদন জানানোর পদ্ধতি, যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এর মাধ্যমে ভক্তি শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। যোগবিদ্যায় এটি অঞ্জলি মুদ্রা নামে পরিচিত। মানুষের হাতের প্রতিটি আঙুলের অগ্রভাগ হল দেহের প্রধান এনার্জি পয়েন্ট। প্রতিটি আঙুলের টিপ্ এক একটি নির্দিষ্ট এনার্জি পয়েন্ট, কনিষ্ঠা হল তামস বা অন্ধকার, অনামিকা হল রাজস্ বা কার্যশক্তি, মধ্যমা সত্বা বা পরিশোধন, তর্জনী হল জীবাত্মা ও বৃদ্ধাঙ্গুল পরমাত্মা। যখন হাত জড়ো করা হয় তখন এই এনার্জি পয়েন্টগুলি একত্রিত হয় এবং মস্তিষ্কের স্নায়ুবর্তনীর সাথে দেহের উপরের অংশের স্নায়ুর সংযোগ স্থাপন হয়। ফলে দেহ-মন দুইই অনেক শান্ত ও স্থির হয়। নমস্কারের পিছনের বৈজ্ঞানিক কারণ এটাই।
ট্রাডিশনাল ভারতীয় পূজা আর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ঘন্টাধ্বনি। জিংক, কপার, ব্রোঞ্জ, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি নানান রকম ধাতুর সমন্বয়ে তৈরী হয় ঘন্টা। এই প্রতিটি ধাতুর নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হিসাব নিকাশ করে করা হয়ে থাকে এই পরিমাপ। এই ঘন্টাধ্বনি মানবদেহের ব্রেনের রাইট লোব ও লেফ্ট লোবের মধ্যে সাম্যতা তৈরী করে। এই ধ্বনি শরীরে থাকে ৭ সেকেন্ড, থাকাকালীন এটি স্পর্শ করে দেহের সাতটি চক্রকে। এটি আমাদের মস্তিষ্কের একাগ্রতা বাড়িয়ে ফোকাস করতে সাহায্য করে। আর এই ঘন্টার আকৃতি সঠিক হলে তার আওয়াজ অনেকসময় 'ওম' শব্দের মতো হয়ে থাকে।
ভারতের এক একটি প্রান্তে এমন অনেক মন্দির আছে যেগুলি শুধুই তার স্থাপত্য ও কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত এমনটা নয়, সেই পবিত্র স্থানগুলি এনার্জি বা শক্তির উৎস। বিজ্ঞান বলে এই সকল মন্দিরগুলি এমন জায়গার উপরেই গড়ে তোলা হয়েছিল যেখান থেকে পাওয়া যায় পজিটিভ এনার্জি। ‘মূলস্থানা’ বা ‘গর্ভগৃহ’ এমন জায়গায় তৈরী করা হয় যেখানে সবচেয়ে বেশি পজিটিভ এনাৰ্জি পাওয়া যেত। আর এই গর্ভগৃহকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরের মূর্তি তৈরী হত। এই মূর্তির নিচেই রাখা হত তামার পাত যা এনার্জি গ্রহণ ও বর্জনে সক্ষম। আর ধাতু থেকে নিঃসৃত এনার্জি থেকেই সেই সকল মানুষেরা এনার্জি লাভ করতেন যারা ভক্ত হিসাবে মন্দিরে দেবী-দেবতা দর্শনে যেতেন। যখন মানুষ মূর্তির পরিক্রমা করত তখন ম্যাগনেটিক ফিল্ডে তারা চলে আসত যাতে তারা সেই পজিটিভ এনার্জি আত্মভূত করতে পারে। এভাবেই শুরু হয় এই মন্দির দর্শন প্রথার। তার ফলে তাদের দেহ-মন-আত্মা শুদ্ধ হত। তখন এত বৈজ্ঞানিক কারণ হয়তো লোকমুখে প্রচলিত ছিল না যার অর্থ আজ মানুষ বোঝে।
পূজার সময় অনেক মহিলা সিল্কের কাপড় পরে থাকেন, তারও রয়েছে একটি বৈজ্ঞানিক কারণ। সিল্কের কাপড় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি শোষণ করতে পারে। তাই মহারাষ্ট্রের গণেশ পূজা থেকে শুরু করে বাঙালির দুর্গাপূজা এবং গুজরাতিদের লক্ষীপূজা এই সবেতেই মহিলাদের সিল্কের শাড়ি পরার প্রবণতা দেখা যায় আজও।
হিন্দু বিবাহিত মহিলারা বিবাহের চিহ্ন হিসাবে সিঁদুর পরে থাকেন, এটা প্রচলিত রয়েছে। তবে এর পিছনেও রয়েছে একটি বৈজ্ঞানিক কারণ। এই সিঁদুর তৈরী করা হত লেবু, হলুদ এবং মার্কিউরি দিয়ে। এই মার্কিউরি শরীরের ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। এটি মহিলাদের মানসিক পীড়া ও চিন্তা কমাতে যথেষ্ট সহায়ক, তাই আগে কপাল থেকে শুরু করে সিঁথি বরাবর মাথার পিছন দিকে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড অবধি সিঁদুর পরতে বলা হত। কারণ এই পিটুইটারি গ্রন্থি হল মানুষের দেহের প্রধান এক চালক।
ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে চুড়ি পরার প্রচলন বহু যুগ থেকেই বর্তমান, তবে এটা কিন্তু নিতান্ত একটা অলংকার নয়। চুড়ি তৈরী হতো বিভিন্ন ধাতু দিয়ে। এর মধ্যে সোনা ও রুপোর নিজস্ব গুন রয়েছে, এই ধাতুগুলি বাইরে থেকে এনার্জি গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত যা পরে দেহের মধ্যে সঞ্চালিত হয়। এছাড়াও হাতের কব্জিতে থাকা নাড়ি দেহের এমন একটা জায়গা যা পরীক্ষা করে কিন্তু অনেক রোগ ধরে ফেলা যায়। চুড়ির সাথে হাতের এই অংশের ঘর্ষণের ফলে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে যা অবশ্যই শরীরের জন্য ভালো।
পায়ের আঙুলে অনেকে আংটি পরে থাকেন, এটি বিবাহিত মহিলার একটি চিহ্ন তো বটেই তার সাথে এর রয়েছে একটি বৈজ্ঞানিক যুক্তিও। এই আংটি সবসময় দ্বিতীয় আঙুলে পরা হয়ে থাকে। এই আঙুলটি থেকেই একটি শিরা যায় সোজা জরায়ুতে এবং সেখান থেকে যায় হৃৎপিণ্ডে। আর রুপো হল খুব ভালো এনার্জি বাহক। যা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে শক্তি গ্রহণ করে তা মানবদেহে পাঠিয়ে দেয়। আর এই শক্তি মানবদেহের সমস্ত প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে চলতে সাহায্য করে। মেয়েদের ঋতুচক্র এবং গর্ভধারণ স্বাভাবিক হয়।