বাংলা সাহিত্য এককথায় রত্ন-ভান্ডার। যতই আহরণ করা হোক না কেন কিছুতেই ফুরোয় না। শেষ হয় না সাহিত্যের রং। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সে তার হিরে,মানিক ছড়িয়ে দিতেই থাকে।
সাহিত্য বিষয়টা কেমন যেন রেলগাড়ির মত। অনবরত ছুটে চলেছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন গন্তব্য। এক পথ থেকে অন্য পথে ছুটে চলেছে সাহিত্য। এক কাল পার করে অন্য কালে সৃষ্টি হচ্ছে অক্ষরেরা।
কল্পবিজ্ঞান সেই রেলগাড়ির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা কামরা। বলা ভালো বগি।
একের পর এক লেখক সেই বগিকে সাজিয়ে দিয়েছেন। গত পর্বগুলোতে সেইসব কামরাগুলোয় বসে আমরা ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি কল্পবিজ্ঞানের দৃশ্যগুলো।
কল্পবিজ্ঞানও এগিয়ে চলেছে। অনেক নতুন নতুন পত্রিকাতেও ছাপা হচ্ছে কল্পবিজ্ঞানের গল্প।
তবু পুরনো কিছু মণিমুক্তো আজও নিজের জায়গায় অমলিন।
যেমন হেমেন্দ্রকুমার রায়ের 'মেঘদূতের মর্ত্যে আগমন'। হেমেন্দ্রকুমার রায় মূলত রহস্য-লেখক। তবে কয়েকটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী তাঁর কলম সৃষ্টি করেছে। 'মেঘদূতের মর্ত্যে আগমন', 'মানুষের প্রথম অ্যাডভেঞ্চার', 'রক্ত বাদল ঝরে', 'আবার যকের ধন'।
এছাড়াও আছেন কল্পবিজ্ঞানের এক ম্যাজিক-লেখিকা। লীলা মজুমদার। তাঁর কল্পবিজ্ঞানের গল্পগুলো অন্যান্য লেখার মতই জাদুতে ভরা। আশ্চর্য সব রহস্য। আবার কোথাও কৌতুক। মাথা,মন ভার হলেই হালকা হাওয়ার মত ঝরঝরে কথা সব ভারমুক্ত করে। কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীকে মজাদার করে তোলে।
তাঁর সৃষ্ট সমস্ত কল্পবিজ্ঞানের গল্পকে একত্রিত করে ছাপা হয়েছে ''কল্পবিজ্ঞানের গল্প'' নামে। এছাড়াও এই অলীক জগতের কিছু গল্প তিনি সম্পাদনাও করেছেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রচিত কিশোরসাহিত্যের বেশ কয়েকটি গল্পও বিজ্ঞান ও সাহিত্যের মেলবন্ধন। যেমন 'পাতালঘর' এর সেই অদ্ভুত রহস্য আজও ছেলেবেলার নস্ট্যালজিয়া।
এছাড়াও 'নবীগঞ্জের দৈত্য', 'হীরের আংটি' আরো কত টক-ঝাল-মিষ্টি সব গল্পেরা বিজ্ঞানকে ছুঁয়েছে। কিন্তু শিশুমনকে একটুও একঘেয়ে হতে দেয়নি। এইসব অতি-প্রাকৃত, অলীক গল্পেরা সব সময় আমাদের ছেলেবেলার গন্ধ বয়ে বেড়াচ্ছে।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের গল্পগুলো মূল ধারার কল্পবিজ্ঞানের থেকে আলাদা। কিন্তু কোথাও যেন কল্পনা আর বিজ্ঞানের মিশেল।
আচ্ছা প্রজাপতি এত রং কোথা থেকে পায়? কোনো দুষ্টু দৈত্য যদি সেই সব রং চুরি করে নেয়? কে বাঁচাবে তখন প্রজাপতিকে?
কল্পবিজ্ঞান। কল্পবিজ্ঞানের হাত ধরেই মিষ্টি প্রজাপতি ফিরে পায় তার রং। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিশোর কল্পবিজ্ঞান সমগ্রের গল্প এমনই নানা রঙের। মূলত কিশোরদের জন্য লেখা হলেও, রঙ ছড়িয়ে পড়ে যে কোনো পাঠকের মনে।
এমনকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত কাকাবাবুর বেশ কিছু গল্পেও আছে বিজ্ঞানের সঙ্গে অলীকের ছোঁয়া।
সাহিত্যের সঙ্গে বিজ্ঞান এভাবেই মিলে মিশে আছে কল্পবিজ্ঞান নামক এই আশ্চর্য জগতের মাধ্যমে। আমরা সমুদ্রের ধারে কিছু নুড়িপাথর ছোঁয়ার মত করে সেই রত্নের গন্ধ ও স্পর্শ নিলাম। কল্পবিজ্ঞানের ছোঁয়ায় সাহিত্য এভাবেই আরো জীবন্ত হয়ে উঠুক।