সকাল দশটার শহর। ব্যস্ততার রাস্তা। তার মধ্যে দিয়েই টগবগিয়ে এগিয়ে চলেছে একটা ধুলটরঙা ঘোড়া। পিঠে বছর ষোলোর সওয়ারী। কিশোরী এক মেয়ে। গায়ে তার নীল-সাদা ইস্কুল-ইউনিফর্ম। কাঁধে বইয়ের বোঝা। ঘোড়ার লাগামখানা কশে ধরে আছে। তেজি ভঙ্গি। দৃষ্টি গন্তব্যের দিকে।
গন্তব্য কেরালার থ্রিসুর জেলার একটি স্কুল। ঘোড়ার লাগাম হাতে কিশোরীটি সেই স্কুলেই চলেছে। পরীক্ষা দিতে। নাম কৃষ্ণা। ক্লাস টেন।
ঘোড়ায় চড়ে পরীক্ষা দিতে যাবার এই দৃশ্য ঝড় তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘুরছে হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জারেও।
কৃষ্ণার কথায় এই ব্যাপারে জানা গেল তার অনেকদিনের ইচ্ছের কথা। ইচ্ছে ছিল ঘোড়ায় চালিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে সে। শেষ দিন সোশ্যাল স্টাডি পরীক্ষার দিতে যাবার সময় ইচ্ছেটা এইভাবেই মিটিয়ে ফেযে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ঘোড়া নিয়ে সোজা স্কুলের দোরগোড়ায়!
সাত বছর বয়স থেকে হর্স রাইডিং শিখেছে কৃষ্ণা। পশু-পাখিদের প্রতি প্রচণ্ড টান। সেই দেখেই বাবা মেয়েকে এক জোড়া ঘোড়া উপহার দিয়েছিলেন। তিনি পেশায় পুরোহিত।
কৃষ্ণার ভিডিও টুইট করেছেন আনন্দ মাহিন্দ্রা। বর্ষীয়ান শিল্পপতি। মাহিন্দ্রা সংস্থার চেয়ারম্যান। লিখেছেন, “এই মেয়েটি তাঁর ‘হিরো’। টগবগিয়ে এগিয়ে চলুক মেয়েদের লেখাপড়া। এই ছবি ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবী জুড়ে। ভিডিও দেখে আশা জাগছে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে।”
ভিডিও সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে লাইক। হ্যাশট্যাগ গার্লপাওয়ার দিয়ে শেয়ার চলছে নেটিজেনদের দেওয়ালে দেওয়ালে।
শিশুকন্যাদের স্কুলমুখী করতে হাজার এক বাঁধার শিকল। অনেক চৌকাঠ পার হয়ে তবে স্কুলের বেঞ্চে এসে বসতে পারে তারা। দেশের প্রান্তিক গ্রামগুলোতে স্কুলছুট ভিড়ে মুখগুলো কীভাবে মিশে যায় কেউ তাদের খোঁজ রাখে না।
অনেক বেশি গুরুত্ব আর নজর থাকে পরিবারের শিশুপুত্রটির শিক্ষার দিকে। পরে আসে কন্যার পালা।
শহর কেন্দ্রিক ছবি আলাদা। প্রান্তিক পরিসর কিন্তু আমাদের চেনা-জানা হাসি হাসি মুখে স্কুল যাওয়ার ঝলমলে ছবি দেখায় না। সেই ছবিগুলো বিপন্নতায় ম্লান।
প্রতিদিন কীভাবে যুদ্ধ জিতে, কত কাঁটাতার পার হয়ে সেই মেয়েগুলো স্কুল গেট পার হয় কে তার খবর রাখে! দুরুদুরু বুক করে কাঁপতে থাকা চোখে যে কোনও দিন ‘পড়া বন্ধ’র ভয়!
এমন দেশে বীর দর্পে ঘোড়া ছুটিয়ে একটি মেয়ের স্কুল যাওয়া অনেক কিছু বলে দেয়।
Brilliant! Girls’ education is galloping ahead...A clip that deserves to go viral globally. This, too, is #IncredibleIndia https://t.co/y1A9wStf7X
— anand mahindra (@anandmahindra) April 7, 2019