খবরের কাগজ পড়ে স্কুল শুরু

একথা আমরা সবাই জানি, বর্তমান সমাজে নতুন প্রজন্ম নিজেদের পড়ার বই-এর বাইরে বই পড়েনা বললেই হয়। টিভি, মোবাইল, ভিডিও গেম খেলেই ওদের দিন কেটে যায়। এর মধ্যে খবরের কাগজ পড়ার তো কথাই নেই। আমরাই আজকাল ক'জন কাগজ পড়ি তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ছোটদের খবরের কাগজ পড়ার কথা তো আমরা ভাবতেই পারিনা। এই অবস্থার যদি একেবারে বিপরীত কিছু খবর দিই আপনাদের?

   অসাধ্য সাধন করেছে কাটোয়া ১নং ব্লকের ভাটিগাছা সাঁওতালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রেরা। এই স্কুলে প্রার্থনা সংগীত শেষ হওয়ার পরেই শুরু হয় খবরের কাগজ পাঠ। স্কুলের প্রার্থনা সভায় শ্রেণী অনুযায়ী লাইন দিয়ে দাঁড়ায় পড়ুয়ারা। সেই দিনের কোনো শিক্ষা বিষয়ক খবর পড়ে তাদের শোনানো হয়। এটি শোনান স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকা। এরপর প্রত্যেক ক্লাসের দু'জন করে পড়ুয়া তাদের স্কুলে আসার সময়ে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা খবরের মত করে পাঠ করে শোনায় সকলকে। এক-একদিন এক-একজন পড়ুয়ার পালা। এক মাসে মোটামুটি সকলেরই খবর বলা এবং পাঠ করা হয়ে যায়।

      ২০১৬ সাল থেকে  এই রকমই হয়ে আসছে। এক দিনও বাদ যায়নি। ২০১৬ সালে একদিন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ানোর ফাঁকে হঠাৎই খবরের কাগজের প্রসঙ্গ ওঠে। ওই ক্লাসের শিক্ষক বুঝতে পারেন যে, খবরের কাগজ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে। তাদের কৌতূহল মেটাতেই স্কুলে খবরের কাগজ নেওয়া শুরু হল। তারপর শুরু হল কাগজ থেকে খবর পাঠ করা। দিনটা সম্পর্কে জানা হয়। সরব পাঠ করা হয় খবরের কাগজ। এতে উচ্চারণের জড়তা কাটে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরে কোথায় কি হচ্ছে, তা জানা যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহ শিক্ষিকা যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে এই ব্যাপারটিকে দেখেন। কোনোদিন যাতে খবরের কাগজ পাঠ বন্ধ না হয়, সেই দিকে যথেষ্ট নজর দেন। খুশি স্কুলের সব পড়ুয়ারা। এখানে অনেকের বাড়িতেই দিন গুজরান হয়, দিনমজুরির মাধ্যমে। ফলে খবরের কাগজ রাখা বিলাসিতার নামান্তর। সেখানে স্কুলে এসে কাগজের খবর শুনে তারা বাইরের জগতের অনেক কিছু সম্বন্ধে জানতে পারছে তাই সকলেই খুশি। আর এই পঠন ব্যবস্থা শুরু করে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন এখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এরকম প্রতিটা স্কুলেই যদি করা যেত, তাহলে স্কুল থেকেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কাগজ পড়ার অভ্যাস তৈরী করতে পারত। 

  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...