মিষ্টিকুলের বিপদভঞ্জক

শীতকাল এলেই মাখা সন্দেশ, কাঁচাগোল্লার রমরমা শুরু হয়।অবশ্য শুধু শীতকাল কেন সারা বছরই এর চাহিদা থাকে।কিন্তু এই যে রসসিক্ত লোভনীয় কাঁচাগোল্লা, তার সৃষ্টি হয়েছিল এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। বলতে গেলে তাকে ‘বিপদভঞ্জক’ বললেও অত্যুক্তি হয় না। আজ সেই তথ্যই দেব।    

  সময়টা ১৭৬০ সাল, রানী ভবানীর রাজত্বকাল। তখন অবিভক্ত বাংলার নাটোরের লালবাজারে ছিল মধুসূদন পালের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান। রাজপ্রাসাদে নিয়মিতই মিষ্টি সরবরাহ করতেন লালবাজারের মধুসূদন পাল। একদিন দোকানের কুড়ি জন কারিগর অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিপদে পড়েন মধুসূদন। 

এদিকে রাজপ্রাসাদে মিষ্টি পাঠানোর কথা। কিন্তু প্রায় দুই মণ ছানা নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানাগুলো চিনির রসে ভিজিয়ে মিশিয়ে দেন। এরপর একটু চেখে দেখেন স্বাদ এক্কেবারে অন্যরকম। সেই শুরু ‘বিপদভঞ্জক কাঁচাগোল্লা’র যাত্রা।

ইতিমধ্যেই কথামতো মিষ্টি হিসেবে ওই ছানাগুলো পাঠিয়ে দেন প্রাসাদে। সেই নতুন মিষ্টি সহজেই রানী মায়ের পছন্দের তালিকাভুক্ত হল।

কিন্তু এই মিষ্টির নাম কী রাখা যায়?

 ভেবে দেখলেন, যেহেতু কাঁচা ছানা থেকে তৈরি, তাই কাঁচাগোল্লা নাম সাব্যস্ত করলেন। সেই থেকে এর নাম ‘কাঁচাগোল্লা’।

kancha

রানী মায়ের পছন্দ বলে কথা। কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে মিষ্টি রসিকরা এই মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। তখন থেকে মধুসূদন নিয়মিতই এই মিষ্টি বানাতে শুরু করলেন। কাঁচাগোল্লার চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মধুসূদন পালের দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মন ছানার কাঁচাগোল্লা তৈরী হতে লাগল।

 সে সময় ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো কাঁচাগোল্লার কথা। এই মিষ্টির সুখ্যাতি করে তৎকালীন রাজশাহী গেজেট ও কলকাতার পত্র-পত্রিকা। জানা যায় যে, ১৮৪০ সালে দিঘাপতিয়ার রাজা প্রসন্ননাথ রায় কৃষ্ণ উৎসবে  ভক্তদের কাঁচাগোল্লা দিয়েই আপ্যায়িত করেন। তখন প্রতি সের কাঁচাগোল্লার দাম ছিল তিন আনা।

 এখনও লালবাজারে জয়কালীবাড়ির কাছে জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার আছে। এখন মধুসূদন পালের বংশধর  প্রভাত পাল এটি পরিচালনা করেন। খাঁটি দুধের ছানা ও চিনি কাঁচাগোল্লা তৈরির প্রধান উপাদান। এক কেজি কাঁচাগোল্লা তৈরি করতে প্রায় এক কেজি কাঁচা ছানা লাগে। এখন এক কেজির দাম পাঁচ’শ টাকা। বয়স প্রায় ২৫০ বছর  হলেও আজও সুনাম বজায় রেখেছে কাঁচাগোল্লা। যদিও এখন প্রায় সর্বত্র তার আনাগোনা। এপার বাংলাতেও চাহিদা বিপুল। তবে নলেন গুড়ের এই মিহি  কাঁচাগোল্লা, মাখাসন্দেশ নিঃসন্দেহে আজও মিষ্টিপ্রিয় বাঙালীর শীতের এক বিশেষ আকর্ষণ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...