আজ ১২ জুলাই রাজ্যে পালিত হচ্ছে 'সেভ ওয়াটার ডে'। বিশ্ব জুড়ে বেড়ে চলা জল সংকটের যদি মোকাবিলা না করা যায়, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম পড়বে এক ঘোর সংকটে। তাই সময় থাকতে জলের গুরুত্ব বুঝতে হবে আমাদের।
একটি ছোট পরিসংখ্যান দেব আজ আপনাদের। তার পর আমরা একটু আলোচনা করব জলের অপচয় কিভাবে রোধ করা যায়, তাই নিয়ে। আগামী ২-৩ বছরে রাজধানী দিল্লি চরম জল সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে বলে জানিয়েছে নীতি আয়োগ। শুধুমাত্র দিল্লিই নয়, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ সহ প্রায় ২১টি শহর তীব্র জলসংকটের মুখে পড়তে চলেছে আগামী কয়েক বছরে। চলতি বছরের দেরিতে আসা মনসুন এই পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখতে বাধ্য করেছে পরিবেশবিদদের। তাতেই চোখ কপালে উঠেছে সকলের। ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেকটাই নেমে যাবে ২০২১ সালে দিল্লির অন্তর্গত সংগম বিহার, নবী করিম, চিলা প্রভৃতি জায়গায় বলে খবর। শহরের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে আশংকা করে 'রামবীর তানোয়ার' নাম একজন দিল্লিবাসী নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কাজ ছেড়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নয়ডার ওই যুবক, তাঁর জায়গার ১২টি বুজে যাওয়া এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া পুকুর পুনরুদ্ধার করেছেন। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে সাথে এইভাবে যদি সাধারণ মানুষও পরিবেশের কথা ভেবে কিছু করার জন্য এগিয়ে আসে, তবেই কিছুটা হলেও লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদ ‘বিমলেন্দু ঝা’।
নীতি আয়োগের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২০২০ সালে জলস্তর অস্বাভাবিক হারে নেমে যাবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০% ভারতীয় পানীয় জল পাবেন না। প্রতি বছর দেরিতে বর্ষার আগমন এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টি, দিনদিন অরণ্য তথা জলাশয় ধ্বংস করে নগরায়নের বিকাশ এই জলস্তর নেমে যাওয়ার প্রধান কারন বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। তাই কিছুদিন আগে থেকেই বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আবাসনগুলিতে এই প্রক্রিয়াকরণের আহ্বান জানানো হয়েছে পরিবেশবিদদের তরফ থেকে। কিছু জায়গায় তা বাস্তবায়িত হয়েছে, কিছু জায়গায় আবার অল্পদিন পরে তার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। সেই কারণেই এ বছর চেন্নাইয়ে এমন অস্বাভাবিক জলকষ্ট ভোগ করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। শহরের জলের উৎস গোদাবরী-কৃষ্ণা নদী থাকা সত্ত্বেও এই অবস্থার কবলে পড়তে হল সেখানকার বাসিন্দাদের। আগে যেখানে মাত্র ৪০ ফিট নিচেই জল পাওয়া যেত, এখন তা ২,০০০ ফিট নিচে নেমে গেছে। হায়দ্রাবাদেও জলকষ্ট ভোগ করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক বছরে শহরে ১৩টি লেক বোজানো হয়েছে ফলে জলস্তর অস্বাভাবিক নেমে গেছে। তবে সেখানে জল সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তাই জলের উপযুক্ত ব্যবহার, অপচয় রোধ করা এবং জল সংরক্ষণই একমাত্র পথ আগামী দিনে জলসংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, দেশের বাইরেও এই সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই বিষয়ে আমেরিকানরা যদিও ভাগ্যবান, কিন্তু ইউনাইটেড স্টেটস-এর পশ্চিমভাগে জলের যথেষ্ট সংকট রয়েছে। তবে সেখানে জলের সংরক্ষণের ওপরেই নির্ভর করে চাষাবাদ এবং ব্যবসা চলে। পাশাপাশি সেখানকার সাধারণ মানুষ বাড়িতেও জল সংরক্ষণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। 'দ্য এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি'র একটি রিপোর্টে প্রকাশ, প্রতি ৪জন আমেরিকান পরিবার প্রতিদিন ৪০০ গ্যালন জল সংরক্ষণ করে। কিছু ইলেক্ট্রনিক মেশিন তো অবশ্যই এই কাজে সহযোগিতা করে, কিন্তু একটু গুরুত্ব সহকারে জলের ব্যবহারও কিন্তু অনেকটাই জল সংরক্ষণে কাজ দেয়। এবারে আমরা সেই বিষয়েই একটু আলোকপাত করব।
১) অযথা আপনার জলের কল খোলা রাখবেন না। যে কোনো কিছু ধোওয়ার সময়, সে রান্নাঘরে সবজি ধোওয়া বা বাসন ধোওয়াই হোক অথবা ব্রাশ করা বা শেভ করা। যখন আপনার জল লাগছেনা, তখন কাজ করে, ঠিক জলের প্ৰয়োজনের সময় কল খুলুন। এভাবে আমরা মাসে হাজার গ্যালন জল বাঁচাতে পারি।
২) বাড়ির কোনো কলে লিকেজ আছে কি না তা সব সময় পর্যবেক্ষণে রাখুন। কল লিক থাকলে সেই কল থেকে যে জল ক্রমাগত পড়তে থাকে, তা সাধারণ চোখে অল্প অপচয় মনে হলেও দিনে প্রায় ২০ লিটার জল অপচয় হয় সাধারণ কল থেকে এবং টয়লেটের লিকেজ থেকে প্রায় ২০০ গ্যালন জল অপচয় হয়।
৩) প্রতিটা জলের বিন্দু কাজে লাগান। সবজি বা ফল অথবা চাল ধোওয়া জল জমিয়ে রাখুন, তা আপনার বাগানের গাছে দিয়ে দিন। তেমনিভাবেই গরম জল বেরোনোর জন্য যতটুকু সময় আপনি কল খুলে রাখছেন, সেই জলটাও সংরক্ষণ করে রাখুন কিছু ধোওয়ার জন্য।
৪) আপনি বাসন ধোওয়ার জন্য আর একটু স্মার্ট হতে পারেন। ডাবল ডিপ বেসিন ব্যবহার করতে পারেন। একটাতে গরম জলে সাবান দিয়ে তাতে নোংরা বাসন পরিষ্কারের কাজে লাগাতে পারেন, তার পাশে ঠান্ডা পরিষ্কার জলে সেই বাসন ধুয়ে ফেলতে পারেন। এইভাবে মোট বাসন ধোওয়ার অর্ধেক জল আপনি সংরক্ষণ করে ফেলবেন। যদি তা আপনার বাড়িতে লাগানো সম্ভব না হয়, তাহলে দুটো বড় বাটি নিয়ে সেই একইভাবে কাজ করতে পারেন।
৫) আপনার প্রয়োজনের তুলনায় বড় ডিশ ওয়াশার বা বড় ওয়াশিং মেশিন কিনবেন না। এতে করে প্রায় ১০ গ্যালন জল বাঁচিয়ে ফেলবেন আপনি। পাশাপাশি আপনার ডিটারজেন্ট বা ওয়াশিং লিকুইড ও বাঁচাতে পারবেন আপনি।
৬) টয়লেটে আমাদের সবচেয়ে বেশি জল খরচ হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিবার কল খোলার সময় কলের ফ্লো যেন ফুল স্পিডে না থাকে, সেইদিকে খেয়াল রাখুন। স্লো ফ্লো তে সব কাজ সারুন। পাশাপাশি স্নানের সময় ও শাওয়ার পুরো না খুলে কম ফ্লোতে চালান। এইভাবে প্রতিদিন আপনি ৪০ গ্যালন জল সেভ করতে পারবেন।
৭) বাড়িতে যদি পুল থাকে, তা সব সময় ঢেকে রাখার অভ্যেস করুন। তাতে করে আপনার পুল পরিষ্কার থাকবে এবং জল রিপ্লেসমেন্ট করতে যে অতিরিক্ত জল লাগত, তা ৩০-৫০% কমে যাবে।
৮) অটোমেটিক ইরিগেশন সিস্টেমে বাড়ির বাগানে জল দেওয়ার পরিবর্তে নিজে হোসপাইপ ব্যবহার করে গাছে জল দিন। ছোট গাছে নিজে হাতে করে জল ঢালুন। তাতে করে ৩৩ শতাংশ কম জল লাগবে।
৯) একটা ৫৫-৬০লিটারের ড্রাম কিনে বাড়ির বৃষ্টির জল ধরে রাখুন। বাড়ির ছাদ থেকে যে পাইপের সাহায্যে বৃষ্টির জল নিচে পড়ে, সেখানে ড্রাম রেখে দিন। সেই জল দিয়ে আপনার বাড়ির বড় বাগানে জল দেওয়া বা অতিরিক্ত জল খরচের কাজ সারতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে জলের ড্রাম অন্য সময় অবশ্যই ঢেকে রাখুন, যাতে মশার উপদ্রব না হয়।
To encourage participation of citizens for #water conservation & plantation, Harit Gaya Kosh in the #AspirationalDistrict was created.
— NITI Aayog (@NITIAayog) July 11, 2019
Govt officials are contributing their one day salary & school students are carrying out awareness drives in the district. #JanShakti4JalShakti pic.twitter.com/xbffPhiVJu