হালকা হলুদ পাতা। লাল শালুর জড়ানো মলাট। সরু দড়ি দিয়ে বাঁধা।
ফি বছর পয়লা বৈশাখ আর অক্ষয় তৃতীয়ার হালখাতা যেমন, এমন খাতাতেই চিত্রনাট্য লেখার কাজ করতেন সত্যজিৎ রায়। পাতায় পাতায় সিনেমার গল্প। এক একটা ছবির জন্য বেশ কয়েকটা খাতা লাগত। দৃশ্যের পর দৃশ্য স্কেচ করতেন। খাতার ছবিদের হুবহু দেখা যেত পর্দায়। চরিত্র, চিত্রনাট্য, কাহিনী, দৃশ্য, সংলাপ শুধু নয়, সত্যজিৎ এর নিজস্ব জীবন বোধের সন্ধান পাওয়া যায়।
নভেলার ঢঙে লিখে রাখতেন। গুগা বাবার কাহিনী লিখেছিলেন ইংরেজিতে।
যেভাবে ভাবনার জন্ম হত ঠিক সেভাবেই লিখে রাখতেন। তাই খাতার লিপি খানিক অবিন্যস্ত, কিছুটা এলোমেলো। লেখা দেখলে মনে হবে খুব তাড়াহুড়োয় লেখা। যেন হঠাৎ আসা ভাবনাগুলোকে হারিয়ে না যায়। লেখা কখনও সোজা, কখনও বাঁকা। চিন্তার সুতো হারিয়ে যাওয়ার আগেই। তাঁর ছবির মতোই এক একটা খেরোর খাতার এক একরকম বিশেষত্ব। তবে তাঁর সব খেরোর খাতাই সিনেমা হয়ে ওঠেনি। কেবল রয়ে গিয়েছে পাতায় লেখা কাহিনী হয়ে।mবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'দেবী চৌধুরাণী' নিয়ে ছবি তৈরি করবেন ভেবেছিলেন। নাম ভূমিকায় সুচিত্রা সেন। ছবির নামের ক্যালিগ্রাফ পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ডেট সমস্যায় তা আর হয়ে ওঠেনি।
মহাভারতের পাশাপর্ব নিয়ে ছবির পরিকল্পনা করেছিলেন। সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। লেখালেখি, গবেষণায় অনেক দূর এগিয়েও ছিলেন। খেরোর খাতার পাতায় নিজের হাতে লেখা 'মহাভারত'। তলায় তারিখ লেখা ১২.২.৫৯।
তাঁর খেরোর খাতা আজও অভিধান। লেখা শেখার, ছবি শেখার, সিনেমা শেখার।
এই খাতার সামনে দাঁড়ালে থমকে যেতে হয়। প্রতি পাণ্ডুলিপিতে অবগাহন। মন- মগজ একাকার। দ্বিতীয় জন্ম শুধু সময়ের অপেক্ষা।