ফ্যান্টাসি আর রিয়েলিটি মিশিয়ে এক আশ্চর্য ছবি ‘হীরক রাজার দেশে’

পাহাড় ঘেরা হীরের দেশ। সে দেশে হবে হীরক উৎসব। ১ আশ্বিন বর্ষ ফূর্তি উৎসব উপলক্ষ্যে হীরক রাজ্যের রাজা বার্তা পাঠান দিকে দিকে। তাঁর আমন্ত্রণে সাড়া দেয় হুন্ডি রাজার জোড়া জামাই। গুপি গায়েন আর বাঘা বায়েন। এখন অবশ্য তারা খায়দায় আর ঘুমায়। কিন্তু রাজার বাড়ির আরাম আয়েশেও তারা ভুলতে পারে না বাইরের টান, ঢোলের বাদ্যি, আর প্রাণের গান। তাই ঘরের কোণ থেকে বেরিয়ে আসে ভূতের রাজার নাগরা। জাদু জুতো পরে হাতে হাতে তালি দিয়ে পৌঁছে যায় হীরের খনির রাজ্যে।

IMG-20231219-WA0025

সেখানে চোখ ধাঁধানো আয়োজন, আতিথেয়তা, হীরক রাজের পেল্লাই মূর্তি দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় তাদের। তারা শোনে রাজ্যে উৎসবের দিন থেকে শুরু হবে হিরকাব্দ। কিন্তু সে দেশের মাঠেঘাটের মানুষ যে কথা কয় না। মজুর চাষি মরে খিদের জালায়। তারা ভয়ে ভয়ে থাকে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আছে মগজধোলাই ঘর। সেখানে মন্তর পড়ে মগজধোলাই চলে। রাজার মতের বিরুদ্ধে যে কথা বলবে তাকেই বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে যন্তরমন্তর ঘরে।

মগজ ধোলাইয়ের জন্য সভাকবিকে তিনটি মন্ত্র লিখতে বললেন- কৃষকের মন্ত্র, শ্রমিকের মন্ত্র, শিক্ষকের মন্ত্র।

‘যে করে খনিতে শ্রম, যেন তারে ডরে যম’,

‘অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ’,

‘ধন্য শ্রমিকের দান, হীরকের রাজা ভগবান’

রাজামশাই পোলাও কালিয়া খেয়ে পাঠশাল বন্ধ করে দেন। দেশছাড়া হন পাঠশালের গুরুমশাই উদয়ন পন্ডিত। একদিন বনের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় গুপি গায়েন বাঘা বায়েনের।

শেষে তাদের তিন মাথার বুদ্ধিতে খনি শ্রমিক, মজুর, কৃষকের দড়ির টানে টলে ওঠে অত্যাচারী হীরক রাজার মূর্তি। প্রজাদের সঙ্গে রাজাও টান দেন দড়িতে। খানখান হয়ে লুটিয়ে পড়ে হীরকরাজা।

ফ্যান্টাসি আর রিয়েলিটি মিশিয়ে এক আশ্চর্য ছবি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এক জোরালো প্রতিবাদ ‘হীরক রাজার দেশে’। ছড়ার আকারে ছবির সংলাপ মুখে মুখে আজও ঘোরে আগুনে স্লোগানের মতো। 

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অমর সৃষ্টি 'গুপি গাইন ও বাঘা বাইন'। ১৯৬৮ সালে সত্যজিৎ রায়ের ছোটদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্র 'গুপি গাইন বাঘা বাইন' মুক্তি পাওয়ার পরে সত্যজিৎ রায় 'হীরক রাজার দেশে' নামে একটি সিকুয়েল তৈরি করেন।

ছবিটির কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ, সুরকার ও পরিচালক সত্যজিৎ রায়। প্রযোজনা করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ছবি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্য তৈরি করেছিল।

ছবিতে অভিনয় করেন তপন চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত, প্রমোদ গাঙ্গুলী, অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কার্তিক চট্টোপাধ্যায়, হরিধন মুখোপাধ্যায়। চিত্রগ্রাহক ছিলেন সৌমেন্দু রায়। সম্পাদনা করেছেন দুলাল দত্ত। ছবিতে গান গেয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল, অমর পাল। চারণ কবির ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল বর্ষীয়ান শিল্পী রবীন মজুমদারকে। ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার একটা বড় অংশের শুটিং হয় পুরুলিয়া জেলার জয়চণ্ডী পাহাড়ে।

ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮০ সালের আজকের দিনে (১৯ ডিসেম্বর)।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...