পূর্ববঙ্গের রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ১৮৭০ সালের তিরিশে জুলাই সতীশচন্দ্রের জন্ম হয়। তাঁর পিতা পীতাম্বর বিদ্যাবাগীশ ছিলেন বিখ্যাত জ্যোতিষবিদ। নবদ্বীপ ছিল তাঁর কর্মভূমি। তাই এখানে পাঠগ্রহণের সুযোগ পান সতীশচন্দ্র। অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। সংস্কৃত সাহিত্যের জ্যোতিষ, ন্যায়, তর্ক, কাব্য, ব্যাকরণ, অলঙ্কার, স্মৃতি, বেদ প্রভৃতি শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করে নবদ্বীপের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এম এ পাশ করেন। শুরু করেন কৃষ্ণনগর, সংস্কৃত, প্রেসিডেন্সি প্রভৃতি কলেজে অধ্যাপনা।
সতীশচন্দ্রের জ্ঞানপিপাসু মন তাঁকে প্রাচ্যবিদ্যার একটি ভাষায়, একটি সংস্কৃতির চর্চায় নিবিষ্ট থাকতে দেয়নি। তিনি অল্পদিনেই পালি ভাষা ও তিব্বতী ভাষা অধ্যয়ন করে পারদর্শিতা অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম বাঙালি, যিনি পালি ভাষায় এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। সতীশচন্দ্রের পৈতৃক পদবি ছিল 'আচার্য', 'নবদ্বীপ বিদগ্ধজননী সভা' সংস্কৃত শাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁকে 'বিদ্যাভূষণ' উপাধি দেন। এরপর থেকে পণ্ডিতমহলে ও শিক্ষাজগতে 'সতীশচন্দ্ৰ বিদ্যাভূষণ' নামেই বিখ্যাত হন।
প্রাচ্যবিদ্ হয়েও সতীশচন্দ্র ছিলেন জ্ঞানচর্চায় মুক্তমনা। নবদ্বীপের পুরাতন সংস্কৃতির চর্চার আবহে কৈশোর অতিবাহিত করেও তিনি নিজেকে সনাতনভাবনার মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। সাগ্রহে চিনা, জাপানি, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, থাই প্রভৃতি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। উনিশ শতকের শেষ আর বিশ শতকের শুরুতে বাঙালিকে তিনি বিশ্ববিদ্যার প্রতি অনুরাগের পথ দেখিয়েছিলেন।
সতীশচন্দ্র বাঙালির গর্বের সারস্বত প্রতিষ্ঠান 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ'-এর সঙ্গে যেমন যুক্ত ছিলেন, তেমনি রচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যার কষ্টিপাথরে যাচাই করে বৌদ্ধধর্ম ও তর্কবিদ্যার ওপর অমূল্য সব গ্রন্থাবলী। তবে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ বুদ্ধদেবের জীবন ও কর্মের ওপর লেখা প্রামাণ্য গ্রন্থ 'বুদ্ধদেব'। আজ একশ বছর পরেও অনুসন্ধিৎসু পাঠকের পিপাসা মেটায় এই গ্রন্থ। তাঁর আর একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ শরৎচন্দ্র দাসের সঙ্গে লেখা, 'তিব্বতী-ইংরেজি অভিধান'। আজও এই গ্রন্থ পাঠকের কাছে এক অমূল্য সংগ্রহ।
সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ। বহুভাষাবিদ ও জ্ঞানপিপাসু এই মানুষটির লোকান্তর ঘটে ১৯২০ সালের ২৫ এপ্রিল।