গরমকাল মানেই চড়া সূর্যের তাপে নাকাল মানুষ। আর মার্চ পেরিয়ে এপ্রিল মাস আসতেই প্রবল গরম পড়ে যায়। তাপমাত্রা ক্রমে বাড়তে বাড়তে পৌঁছে যায় প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। তার সঙ্গে সঙ্গে চলে গরম হাওয়া। আর এই অবস্থাতেই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নানান অসুখ-বিসুখ। তবে গ্রীষ্মের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল ডি-হাইড্রেশন এবং সান স্ট্রোক। এছাড়া গরমে জ্বর, পেটের সমস্যাও প্রায়ই হয়ে থাকে। এইসব সমস্যা প্রতিকারের প্রধান উপায় হল জল এবং অন্যান্য তরল খাদ্য বা পানীয় নিয়মিত গ্রহণ। শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়। তাই শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে নানা ভেষজ পানীয় বা শরবত পান করা খুবই উপকারী। এই ধরনের পানীয় শরীর কে ঠান্ডা করতে ও শরীরে জলের চাহিদা মেটাতে বেশ সাহায্য করে থাকে।
তবে এই গরমের সময় কোন ধরনের পানীয় কি ভাবে খেলে বেশি উপকার হবে চলুন তা জেনে নেওয়া যাক....
১) ডাবের জল : অত্যাধিক গরমে ডাবের জল বেশ উপকারী শরীরের জন্য। এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সফট ড্রিংকস যা সকলের জন্য উপকারী। এই পানীয়ে কোনও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না। পুষ্টিগুণও অজস্র। ডাবের জলে শরীরে আয়নের ভারসাম্য বজায় থাকে। যার ফলে হার্ট থাকে সুস্থ। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে করা সম্ভব হয়। রক্তচাপও থাকে আয়ত্তের মধ্যে।তাছাড়া এই পানীয়র মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি এজিং গুণ। ক্লান্ত দেহের ইলেকট্রোলাইটস ব্যালেন্স ফিরিয়ে আনে ডাবের জল। এছাড়া চরম ক্লান্তিতে ডাবের জল পান করলে শরীরে হারানো এনার্জি ফিরে আসে।
২) দারুচিনির শরবত: অধিক গরমে দারুচিনির শরবত বেশ উপকারী। যদি দারুচিনি পাউডার এক গ্লাস গরম জলে মিশিয়ে ঢেকে রেখে কিছুক্ষন পরে ঠান্ডা জলে ছেঁকে সামান্য মধু মিশিয়ে অথবা মধু ছাড়াই পান করা যায়। এই পানীয় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া পানীয়টি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল গুণযুক্ত। বলা হয় এই পানীয় নিয়মিত পান করলে ওজন কমে ও গরমের নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় খুব সহজে।
৩) ঘোল: গরমের সময়ে বেশ উপকারী পানীয় গুলির মধ্যে অন্যতম হল ঘোল। এই পানীয় হালকা এবং সহজপাচ্য। তাই গরমে ঘোল পান করা খুবই উপকারী। যদি ঘোলের সঙ্গে সামান্য জিরে, জোয়ান, এবং সৈন্ধব লবণ চূর্ণ মিশিয়ে পান করেন তাহলে পেটের সবরকম সমস্যায় উপকার হয়। যাঁরা পাইলস-এর সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য ঘোল বেশ উপকারী।
৪) চন্দন কেশর শরবত: বেশি গরমে যদি বাড়িতে চন্দন কেশর শরবত বানিয়ে খেতে পারেন তা শরীরের জন্য বেশ উপকারী হবে। তবে এই শরবত বানাতে হলে প্রথমে এক লিটার জলে ৫০ গ্রাম চিনি ও ১৫ মিলিলিটার লেবুর রস মিশিয়ে কম আঁচে ফুটিয়ে সিরাপ বানাতে হবে।এরপরে ঠান্ডা হলে তার মধ্যে ৩ গ্রাম চন্দন পাউডার ভালো করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন। সব শেষে সামান্য কেশর জলে মিশিয়ে ওই মিশ্রণ সিরাপে মিশিয়ে নিতে হবে। এই শরবতে ৩ গ্রাম মতো সাইট্রিক অ্যাসিড যোগ করা যায়। এই শরবত পানে শরীর ঠান্ডা হয়, ত্বক ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
৫) বার্লির শরবত: বার্লির শরবত বানাতে হলে প্রথমে একটি পাত্রে জল নিন। এরপরে জল গরম করার জন্য আঁচে বসান। এবার যতটা জল নিয়েছেন তার চারভাগের একভাগ বার্লি নিয়ে জলে মেশান ও ফোটান। সামান্য নুন যোগ করতে পারেন। পানীয়টি ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে তার মধ্যে অল্প লেবুর রস ও চিনি মিশিয়ে পান করুন। এই শরবত শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া পানীয়টি হজমের সমস্যায় উপকারী, ওজন কমায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, গরমের নানা অসুখ থেকে রক্ষা করে থাকে।
৬)তেঁতুলের শরবত : এই শরবত বানাতে হলে প্রথমে অল্প তেঁতুল নিয়ে ১ থেকে ২ ঘণ্টা সময় নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর হাত দিয়ে ঘষে ওই তেঁতুল জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। পানীয়টি ছেঁকে নিয়ে তার সঙ্গে সামান্য চিনি, নুন, অল্প জিরে এবং গোলমরিচ চূর্ণ মিশিয়ে নিতে হবে। অত্যন্ত উপকারী পানীয়টি খিদে বাড়ায়, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
৭) খর্জুরাদি মন্থ: এই বিশেষ ধরনের পানীয় তৈরি করতে প্রথমে নিতে হবে দানা ছাড়া খেজুর, বেদানা, দ্রাক্ষা, আমলকী, তেঁতুল, ফলসা ফলগুলি সমমাত্রায় নিয়ে তার চারগুণ জল মিশিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সব উপকরণ গরম হয়ে গেলে ভালো করে জলের সঙ্গে মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে হবে। প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই খর্জুরাদি মন্থ প্রবল গ্রীষ্মেও এনার্জি বজায় রাখে। পানীয়টি সহজপাচ্য। তাই খেলাধুলো করে এমন বাচ্চাদের নির্দ্বিধায় দেওয়া যায়।