ছোটবলা থেকে ঈশ্বরের প্রতি টান ছিল প্রবল। সেই টানকেই আজীবনের সঙ্গে করেছিলেন। জীব সেবাই হয়ে উঠেছিল শিব সেবা। সে পথেই হয়ে উঠেছিলেন সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষা। বহু মানুষের কাছে মহীরুমের ছায়া প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা। রবিবার রাত ১১ টা ২৪ মিনিটে নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে অমৃতলোকে পাড়ি দিলেন তিনি।
১৯২০ সালে জন্ম কলকাতায়। পূর্বাশ্রমের নাম ছিল কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদাশ্বরী আশ্রম ও হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে নার্সের প্রশিক্ষণ নেন। তারপর ১৯৫০ সালে টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে যোগ দেন।
১৯৫৩ সালে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা নেন। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ শিষ্য তথা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষ স্বামী বিজ্ঞানানন্দ তাঁকে দীক্ষা দেন। সন্ন্যাস গ্রহণ করেন ১৯৫৯ সালে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শংকরানন্দ সন্ন্যাস দীক্ষা দেন তাঁকে।
তারপর দীর্ঘ কর্মজীবন। বহু শাখায় বিভক্ত। ১৯৬০ সালে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য হন। ইতিমধ্যে মাতৃভবনের দায়িত্বভার রামকৃষ্ণ সারদা মিশনকে হস্তান্তর করে রামকৃষ্ণ মিশন। ১৯৬১ সালের ১৮ নভেম্বর হস্তান্তর করা হয়। তখন থেকেই প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতৃভবনের সম্পাদক হন।
মাতৃভবন হাসপাতালের উন্নতি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন পুরোপুরিভাবে।
২০০৯ সাল পর্যন্ত মাতৃভবনের উন্নতিতে একাধিক কাজ করেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সহ অধ্যক্ষা পদে নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে অধ্যক্ষ হন তিনি। টানা ১৩ বছর তিনি অধ্যক্ষা পদের দায়িত্ব সামলেছেন।
চলতি বছরের অক্টোবরেই পেরিয়ে এসেছিলেন ১০২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ৫ ডিসেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তীব্র জ্বর নিয়ে তাঁকে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তারপর থেকে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। রবিবার নশ্বর দেহ ত্যাগ করলেন।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।