বিশ্বায়নের যুগে বঙ্গসন্তানেরা সংস্কৃতিকে যেখানে ভুলতে বসেছে , কলকাতার বুকে বাংলা ভাষার অবস্থা যেখানে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিতদের দায়িত্বে ও অভিভাবকদের বাংলা ভাষার প্রতি অহেতুক নাক সিঁটকানি প্রবণতার যৌথ প্রয়াসে তলানিতে এসে ঠেকেছে তখন 'সংস্কৃত' তাদের কাছে প্রাচীন প্রস্তর যুগীয় কোনো ভাষার সামিল তা বলাই বাহুল্য। কেউ বা আবার খানিকটা বিব্রত হয়েই বলবে এটা কি ভাষা - এমন ভাষা ছিল না কি ? সে যাই হোক - সব কিছুরই একটা ব্যতিক্রম থাকে। এ ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। দেবনাগরী ভাষাকে আঁকড়ে ধরে আছে আজ কিছু গ্রাম । মাত্তুর ও হোসাল্লি । কর্ণাটকের তুঙ্গ নদীর তীরে শিমোগা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামের ৫,০০০ বাসিন্দারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংস্কৃত ভাষায় কথোপকথন করে। গ্রাম দুটি ‘সংস্কৃত গ্রাম’ নামেই পরিচিত।
একসময় দ্রাবিড় অধ্যুষিত এই গ্রামে আজ শিশুদের হাতে খড়ি হয় সংস্কৃততেই। ক্রিকেট, ফুটবলের ধারাভাষ্যও দেওয়া হয় এই দেবভাষাতেই । কন্নড়, তেলেগু, তামিল ভাষায় অনুপ্রবেশ ঘটলেও প্রত্যেক গ্রামবাসীই সংস্কৃত ব্যাকরণের ধাতুরূপ, শব্দরূপ মেনেই উচ্চারণ করেন। ইতিহাস, ভূগোলের মতো মূল বিষয়ের পাশাপাশি ছোট শিশুদের পাঠ্য তালিকায় থাকে বেদ, উপনিষদ।
তবে কেবল গ্রামবাসীরা একার কৃতিত্বে নয় প্রাচীন এই ভাষাকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে 'সংস্কার ভারতী' নাম এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৫০০০ শিশু সংস্কৃত শেখে। শুধু এই দুটি গ্রাম নয় ভারতের বহু গ্রামেই আজ সংস্কৃত কথোপকথন বিদ্যমান। মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলার অন্তর্গত ঝিরিতে অনর্গল সংস্কৃত ভাষায় কথা বলে শিক্ষিত নিরক্ষর সকলেই। ২০০২ সালে বিমলা তিওয়ারির উদ্যোগে ‘সংস্কৃত সংস্থান শিবির’ পরিচালনা শুরু হয় ও সেই ১ বছরে তিনি ভাষার প্রতি আগ্রহ তৈরী করে প্রধান কথ্য ভাষার রূপ দেন।
ওড়িশার গজপতি জেলার সাসানা গ্রামের প্রতি বাড়িতেই প্রাচীন পন্ডিত থাকায় প্রাচীন ভাষা চর্চা সহজ হয়, এক্ষত্রে অবশ্য সরকারি উদ্যোগ কার্যকরী ভূমিকা নেয়। রাজস্থানের গানরা গ্রামের মানুষরা আজ সংস্কৃততে সাবলীল। এমনকি মধ্যপ্রদেশের কারোলি তহসিল নরসিংহপুর জেলার বাঘুয়ার গ্রামের প্রধান ভাষা সংস্কৃত। এ’তো গেলো বেশ কিছু বিশেষ ঐতিহ্যবাহী গ্রামের কথা। তথাকথিত অত্যাধুনিক বঙ্গ সমাজের একটু হলেও লজ্জা বোধ হওয়া উচিত - নিজেদের ভাষার প্রতি অমর্যাদার জন্য, তাদের কিছুটা হলেও নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। কারণ নিজেদের সংস্কৃতি না জানা বা ভুলে যাওয়ার মধ্যে গর্ব নয় অসম্মান জড়িত।