দূরদর্শনের সংযুক্তাকে এখনও আমজনতা চায় তাঁকে দুর্গা রুপে দেখতে! কিন্তু কোথায় আছেন তিনি?

সেই সময় কিছুই ছিল না, না ছিল ঝাঁ চকচকে সেট না ছিল অসাধারণ মেকআপ। কিন্তু যেটুকুই ছিল, তাতেই দর্শকদের মন মাতিয়ে দিত। দূরদর্শন কেন্দ্র কলকাতার সেই সাবেক ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ চিরস্থায়ী মনে বাস করে গিয়েছে।

নয়ের দশকে সেই মহালয়ার সকালে দূরদর্শনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ এখনো সবার মনে গেঁথে রয়েছে। সেই আনন্দের অন্যতম একজন হল নৃত্যশিল্পী সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Sanjukta-Banerjee-1264x720_11zon

১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম মা দুর্গার রুপে সেজেছিলেন দূরদর্শনের মহালয়ার অনুষ্ঠানে। এখনও পর্যন্ত দূরদর্শনের মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনিই সবচেয়ে বেশি দুর্গার ভূমিকায় রেখে কাজ করেছেন। 

তবে, গত কয়েক বছর ধরে সেই বিনোদন জগতের থেকে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছেন সংযুক্তা। তবে এখনও আমজনতারা তাঁকেই মা দুর্গার রুপে দেখতে চান।

পরবর্তীকালে দূরদর্শনে ‘কথায় কথায়’ এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সংযুক্তা। সেখানে এসে তিনি বলেছিলেন মা দুর্গার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার এক্তাই কারণ ছিল নাচের প্রতি তাঁর অসম্ভব ভালবাসা। তিনি জানিয়েছেন যে খুব ছোট থেকেই নাচ শিখছেন। যখন তাঁর জ্যাঠতুতো দিদি পাড়ার স্কুলে গান শিখতে যেতেন তখন তিনিও বায়না করেই সেখানে যেতেন। শুধুমাত্র নাচ শিখবেন বলে।

প্রথমে শিখেছিলেন লোকনৃত্য, তার পর কত্থক। তারপর, চিরকালের জন্য ভরতনাট্যম নৃত্যকলায় মনে ডুবিয়ে দিলিন সংযুক্তা। বাবা মায়ের সঙ্গে যামিনী কৃষ্ণমূর্তির একটি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন সংযুক্তা। সেই শৈশবেই তাঁর মনে লেগে যায় যামিনী কৃষ্ণমূর্তির নৃত্যশৈলী। সেদিনই তিনি ঠিক করেন ভরতনাট্যমই শিখবেন।

এরপর তিনি দীর্ঘ দিন ধরে গোবিন্দন কুট্টি এবং তাঁর স্ত্রী থাঙ্কমণি কুট্টির কাছে ভরতনাট্যম, মোহিনীআট্যম এবং কথাকলির প্রশিক্ষণ নেন৷

তাঁর প্রিয় ‘কলামণ্ডলম্’ নাচের স্কুলেই পান দশভুজা ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ৷ ১৯৯৪ সালে তিনি শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন৷ তাঁর নাচের স্কুলে দূরদর্শনের উচ্চপদস্থ কয়েক জন কর্মী যান, কিছু অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পী বাছতে৷ সেখানেই তাঁকে দুর্গা হিসেবে পছন্দ করে নেন।  

তবে, এর আগে সংযুক্তা ‘চিচিং ফাঁক’-সহ দূরদর্শনের কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠানে দশভুজার ভূমিকেয় অভিনয় করার পর বুঝলেন আগের অনুষ্ঠাবের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানের প্রচুর পার্থ্ক্য রয়েছে৷ তারপরেই শুরু করে দেয় দীর্ঘ প্রশিক্ষণ৷

জানা যায়, ফাইটমাস্টারের কাছে তিনি শেখেন কীভাবে মহিষাসুরের সঙ্গে লড়াইয়ে দৃশ্যে অভিনয় করবেন৷ ওয়ার্কশপের পর হত শ্যুটিং৷ স্টুডিওর পাশাপাশি আউটডোরেও হত শ্যুটিং এবং তার জন্য চলত মানসিক প্রস্তুতিও৷ বেশ ক’দিন ধরে সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করতেন সংযুক্তা৷ মা দুর্গাকে আধ্যাত্মিকভাবে অনুভব করতেন মননে ও যাপনে৷

মাটির আট হাত শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে করতে হত দশভুজা শ্যুটিং৷ তার জন্য শরীরে কালসিটেও পড়ে যেত৷ কিন্তু সে কথা একবারের জন্যেও বোঝা যেত না শুধুমাত্র তাঁর নাচের মুদ্রায়৷ এতটাই ছিল কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা৷

তাঁর জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনে রয়েছে নাচ৷ নৃত্য ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারেন না সংয়ুক্তা৷

বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর তিনি প্রবাসী হয়ে ছিলেন৷ আমেরিকার একাধিক শহর এবং কানাডার টরন্টোতে তিনি বসবাস করেছেন৷ সেখানেও তিনি নাচ নিয়ে গবেষণা করেছেন, নাচ নিয়ে পড়িয়েছেন, নাচ শিখিয়েছেন এবং অবশ্যই নিজে নাচ পরিবেশন করেছেন৷

শারদোৎসব বা অন্যত্র এখনও সবাই আর্জি করে তাঁকে দশভুজা রূপে অবতীর্ণ হওয়ায়। বিনোদন জগৎ থেকে দূরে থেকে এখন নিজের মতো জীবনকে গুছিয়ে উপভোগ করছেন সংযুক্তা৷ তবে, এখনও তাঁর মননের সঙ্গী, নাচ পাশে রয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...