লাইম লাইটে তাঁকে কখনই সেভাবে দেখা যায়নি, কিন্তু আজ গোটা বাংলার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। কলকাতার মেয়ে সঞ্চারী দাস মল্লিক। ২০২৩-এর ৯৫তম একাদেমি সম্মানের মঞ্চে 'দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারারস' স্বল্পদৈঘ্যের তথ্যচিত্র পেয়েছে সেরার সম্মান। কার্তিকী গঞ্জালভেস পরিচালিত এবং গুনীত মোঙ্গা প্রযোজিত তামিলনাড়ুর মুদুমালাই জাতীয় অভয়ারণ্যের থেপ্পাকাডু ক্যাম্পের দুই অনাথ হস্তী শাবকের উপর নির্মিত এই তথ্যচিত্রের সহসম্পাদক সঞ্চারী। বর্তমানে মুম্বইয়ে বিজ্ঞাপন ও তথ্যচিত্র সম্পাদনার কাজের সঙ্গে যুক্ত সঞ্চারী।
সত্যজিৎ রায়ের অস্কার বিজয়ের ৩১ বছর পর ফের কোনও বাঙালির হাতে উঠল অস্কার সম্মান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সত্যজিৎ নিজে উপস্থিত থাকতে পারেননি অস্কারের মঞ্চে। ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। রবিবার অস্কারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এই বাঙালিকন্যা।
পাঁচ বছর ধরে পাঁচ জন ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে শুটিং হয়েছে। প্রথমে গোয়া তারপর মুম্বই মিলিয়ে প্রায় ৪৫০ ঘন্টার ফুটেজ দেখতে হয়েছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। সেই ফুটেজকে ৪০ মিনিটে দাঁড় করানো মোটেই সহজ ছিল না। সম্পাদক ডগলাস ব্লাশ, যিনি আবার এই তথ্যচিত্রের সহ প্রযোজকও, তাঁর সঙ্গে বসে সঞ্চারী প্রায় ৫০০ ঘণ্টার এই ফুটেজকে এডিট করেছিলেন।
অনাথ হস্তী শাবকের সঙ্গে ভারতীয় যুগলের মানবিক সম্পর্ক ছবির বিষয়। রঘু-আম্মু আর বোম্মান-বেল্লি ছবির কেন্দ্রে। রঘু আর আম্মু দুই অনাথ হাতির ছানা। একদিকে মানব-মানবীর জীবন, সম্পর্ক অন্যদিকে পশু শাবকের সঙ্গে তাদের আবেগ এই নিয়েই গড়ে উঠেছে তথ্যচিত্রটি।
শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন সঞ্চারী, কিন্তু একটা সময় অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন কিনা সে নিয়েই সংশয় দেখা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নেটফ্লিক্সের সহায়তায় তাঁর অস্কারের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া চূড়ান্ত হয়। এই সফরে সঞ্চারীর সঙ্গে সঙ্গী হয়েছেন তাঁর স্বামী প্রযোজক, সিনেমাটোগ্রাফার সুধাকর রেড্ডি ইকান্তি।
কলকাতার গলফগ্রিনের বাড়িতে মেয়ের সাফল্যে খুব খুশি বাবা-মা। সঞ্চারীর মা, শুভা দাস মৌলিক তাঁর মেয়ের বিষয়ে বলেন, 'আমার ছোট্ট মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেল। আমি ওকে হোয়াটসঅ্যাপে ঝট করে একটা শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি।'
বাড়িতে কেবিল সংযোগ নেই, তাই অনলাইনের আপডেটই ভরসা। আত্মীয় ও বন্ধুদের থেকেই জানতে পারেন। এক আত্মীয় অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো ক্লিপ পাঠান, এবং সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর আসে।
লোরেটো হাউস, ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স এবং এফটিআইআই-এ পড়াশোনা করা সঞ্চারীর পুরো পরিবারই বলা যায় সিনেমার মানুষ। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্রী ছিলেন তিনি। তাঁর মাও তথ্যচিত্র পরিচালক এবং সেন্ট জেভিয়ার্সের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে সত্যজিৎ রায় যে চার জন বন্ধুকে নিয়ে ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মনোজেন্দু মজুমদার, সঞ্চারীর দাদু ছিলেন তাঁদের এক জন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন শুভা দাস মল্লিক। ছবির নাম ‘ক্রসউইন্ডস ওভার ইছামতী’। ২০১২ সালে সেই ছবি মুম্বই আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রদর্শিত হয়। এই ছবির সম্পাদকও সঞ্চারী। ২০১৬ সালে তাঁর মা আরও একটি ছবি বানান। পিয়ানোর উপর নির্মিত এই ছবির নাম ‘ক্যালকাটা সোনাটা’। এই ছবির সম্পাদনা করেছেন সঞ্চারী। আরও একটি ছবির ভাবনায় আছেন তিনি।
বেশ কয়েকবার দেখেছেন 'দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারারস'। তার মধ্যে একবার এসআরএফটিআই এর প্রেক্ষাগৃহেও। এই ছবিতে কোন ও হিংসা, বিদ্বেষ নেই। বন্যপ্রাণ নিয়ে ছবিতে যা খুব একটা দেখা যায় না। এই বিষয়টিই তাঁকে বেশি টেনেছে।