সল্টলেক এবং রাজারহাট- কলকাতার মধ্যে এই দুই অঞ্চলকে যেন কলকাতা বলে চেনাই যায়না। আন্তর্জাতিক ছোঁয়া আছে এই দুই জায়গার মধ্যে। নতুন করে গঠিত হচ্ছে নিউ টাউন (রাজারহাট) একেবারে ঝকঝকে তকতকে রূপে সেজেগুজে বিশ্বের দরবারে কলকাতাকে প্রেজেন্ট করার জন্য। সল্ট লেক যেমন অভিজাতদের এলাকা বলে পরিচিতি লাভ করেছে, রাজারহাট বা নিউ টাউন তেমনি একবিংশ শতকের বং এলাকা বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। কিন্তু এই দুই অঞ্চলে যাতায়াত করতে বেশ খানিকটা সময় ও রাস্তা অতিবাহিত করতে হয়। দু'দিকের মানুষই বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করেন। তাদের উল্টোডাঙা ঘুরে যেতে হয়। নতুন ব্রিজ হলে আর সেই সমস্যা থাকবেনা।
কেষ্টপুর খালের ওপর সল্টলেক ও রাজারহাটের মধ্যে সংযোগকারী মোটরেবল ব্রিজ তৈরী হবে। বিধাননগর পুর্নিগমের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে রাজারহাট-গোপালপুরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড। স্থানীয়দের মতে এই ব্রিজ তৈরী হলে উপকৃত হবেন দু'পাড়ের বাসিন্দারা। কেষ্টপুর খালে অনেক ফুটব্রিজ থাকলেও গাড়ি বা বাইক চলাচলের জন্য কোনও ব্রিজ এতদিন ছিলনা। সল্টলেকের বাসিন্দাদের বিমানবন্দর পৌঁছতে হলে উল্টোডাঙা বা নিউটাউন ঘুরে যেতে হত। আশপাশের এলাকায় যেতে হলেও সেই উল্টোডাঙা হয়েই ঘুরে যেতে হত। ব্রিজ তৈরী হলে সেই সমস্যা কমবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল নাগাদ প্রথম এই ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু একটি কংক্রিটের কাঠামো তৈরী হওয়ার পরেই সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরোনো জায়গাতেই নতুন করে ব্রিজ তৈরী হচ্ছে। সল্টলেকের সাত নম্বর আইল্যান্ড এবং এ কে ব্লক লাগোয়া খালপাড়ের সঙ্গে যুক্ত হবে কেষ্টপুরের সিদ্ধান্তনগর এলাকা। কেষ্টপুর খালের ওপরে প্রায় ৩৬ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে সাত মিটার চওড়া এই ব্রিজ তৈরী হচ্ছে। তৈরির খরচ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সেচমন্ত্রী সোমেন মহাপাত্র বলেন, এই কাজের পরিকল্পনা হয়েছিল ২০১৬-তে। ২০১৮-র এপ্রিল মাস নাগাদ প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরী হয়। খাল পাড় সংলগ্ন আরো কিছু কাজ হবে বলেও জানান মন্ত্রী। রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, একটা পরিকল্পনা করা এবং তা রূপায়নের মধ্যে অনেক ফারাক আছে। অতীতেও ওই এলাকায় ব্রিজ তৈরির কথা হয়েছিল। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে যা বাস্তবায়িত করা যায়নি।
এদিকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গের পথে এস এন ব্যানার্জি রোডের জানবাজারের দত্তদের ঠাকুরদালান এসে পড়েছে, যার ২৫ মিটার নিচ দিয়ে কাটা হবে সুড়ঙ্গ। এই কাজে ঠাকুরবাড়িকে অন্যতম বিপজ্জনক মনে করছে কলকাতা মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার যন্ত্র যদিও এখন অনেকটাই দূরে, তবু মাপ-জোক থেমে নেই। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, জন্য প্রায় পনেরো জন মানুষের বাস এই জায়গায়। তাদেরও চিন্তার কারন হয়ে গেছে এই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ। ঠাকুরদালান রক্ষনাবেক্ষনের ভারপ্রাপ্ত অঞ্জন দত্ত, অধীপ মিত্র, প্রদীপ মিত্রের তরফে অন্যতম ট্রাস্টি অধীপ মিত্র জানান, মেট্রোর প্রযুক্তির ওপর তাঁদের আস্থা আছে। তাঁরা যত্ন নিয়ে এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে কাজ করবেন। তবে ওই মন্দির যাঁর অর্থাৎ বলিঙ্গদেবের ওপর ভরসা আরও বেশি। মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময় যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তার জন্য প্রয়োজনে মন্দিরে ইস্পাতের কাঠামো বসিয়ে দুর্বল অংশ দৃঢ় করা হবে। তাই আশা করাযায়, মেট্রোর সুড়ঙ্গের কাজ এবং ঠাকুরদালান অক্ষত থাকা-দুটোই হবে।