দশ পৃষ্ঠা বই পড়লে, পারিশ্রমিকে কনসেসন। সেলুনেই লাইব্রেরি খুলেছেন তামিলনাড়ুর কেশ শিল্পী।
সেলুনে কোনও মডেলের পোস্টার নেই। নেই ধুমধাড়াক্কা গানবাজনা। বরং চুল কাটার লাইনে বসে একটু আধটু বই পড়ে নেওয়া যেতেই পারে।
তিনি বছর আটত্রিশের পনমারিয়াপ্পান। স্কুলের চার দেওয়ালে বেশী দিন থাকা হয়নি।দৌড়েছেন ক্লাস এইট অবধি। কারণ, অর্থাভাব। নিজে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েও মনে পালন করেছেন এমন মহৎ ইচ্ছে। স্কুল থেকে বেরিয়েই নিজের ক্ষমতায় তৈরি করেছিলেন এই সেলুন।মোট বইয়ের প্রায় আশি শতাংশ নিজেই যোগাড় করেছেন।
বই পড়ায় উৎসাহ দেওয়ায় ডিসকাউন্টেরও ব্যবস্থা রেখেছেন মারিয়াপ্পান। গ্রাহকদের মধ্যে যিনি একটি বইয়ের দশ পৃষ্ঠা পড়তে পারবেন, ছাড় পাবেন তিরিশ টাকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় মারিয়াপ্পানের উদ্যোগ ভাইরাল হওয়ার পর, তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত বইপ্রেমীরা।
এই অভিনব পদক্ষেপের কারণ একটাই। মানুষকে তার পুরনো সবচেয়ে কাছের বন্ধু বইয়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।সে সঙ্গ দেয়, ঠকায় না।
তামিলনাড়ুর থুটুকুড়িতে চুল কাটেন মারিয়াপ্পান। সেখানে একদিকে চুল কাটার ব্যবস্থা, আর অন্যদিকে বই পড়ার আয়োজন করেছেন তিনি। মারিয়াপ্পানের এই ‘সেলুন লাইব্রেরি’ তে আছে প্রায় ৮০০ বই।
‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির কথা সকলেরই মনে আছে নিশ্চয়। র্যাঞ্চ অর্থে আমির খান বলেছিলেন জ্ঞান যেখান থেকেই পাওয়া যাবে, বগলদাবাই করে নিয়ে নিতে হবে। একই গল্প পনমারিয়াপ্পান এর। দোকানে লাগিয়েছেন একটি মিউজিক সেট। সেখানে গান নয়, বেজে ওঠে বিখ্যাত তামিল ব্যাক্তিদের বক্তৃতা।
‘পুথাগামে থুনাই’, বই ভালো বন্ধু। তামিল ভাষায় এই বইটিই উৎসাহ জুগিয়েছে তাঁকে এরকম উদ্যোগ নিতে।
ছয় বছর আগে শুরু করেছিলেন আড়াইশো বই নিয়ে। সেই সংখ্যা এখন আটশো ছাড়িয়েছে।তামিল ভাষার বইই তুলনামূলক বেশী। ইংরাজিতে কিছু মনীষীদের জীবনী আছে। সাড়া ভালোই পেয়েছেন। আরও বই ধারে নেওয়ার কথা ভেবেছেন।
তাঁর এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে করুণানিধি কন্যা কানিমোঝি এই সেলুন লাইব্রেরিতে পঞ্চাশটি বই উপহার দিয়েছেন।
ইন্টারনেটের দৌরাত্ম্যে বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাইদের ভিড়ে এরকম নতুন মাঝিদের বড়ই প্রয়োজন।