এক সময় বাঙালির স্বপ্নের দেশ ছিল রাশিয়া। বলশেভিকদের দেশ। বিপ্লবের দেশ। প্রতিবাদের দেশ। তখনও বাঙালি এমন আমেরিকাপ্রেমী হয়ে ওঠেনি। বিদেশ বললেই তাদের ম্যাপে ভেসে উঠত রাশিয়ার নাম। তার পরেই জার্মানি।
বেশ কয়েক দশক আগের কথা। সে কলকাতার গায়ে লেগে সত্তরের উত্তাল সময়ের গন্ধ।
রাশিয়ান রূপকথা আর মস্কো থেকে আসা বইপত্রের ঘ্রাণ নিতে ভালোবাসত বাঙালি। সাধারণ বাড়িতেও বইয়ের আলমারি, তাক ঘাঁটলে বেরত সোভিয়েত রাশিয়া থেকে প্রকাশিত হওয়া বিভিন্ন বইপত্র আর ম্যাগাজিন।
ছকছকে মার্বেলে ছাপা। পাতায় পাতায় রঙ্গিন ছবি আর ফটোগ্রাফ।
লাল মলাটে ছুটন্ত ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে রাজপুত্র। হাতে ধরা ম্যাজিশিয়ন হ্যাট। তাতে লাগানো শুকনো পাতার ঝালর। বলে দেয় রাজপুত্রটি বিদেশী।
পাতা ওলটালে চোখ আটকাতে যায় বইয়ের ‘হেডে’। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘ আলোকিত মানুষ চাই’।
নিষ্ঠুর সামন্ত প্রভুর বিরুদ্ধে দাস-দাসী, গরিব চাষীদের প্রতিরোধের গল্প। উপকথার লাইনে লাইনে উঠে আসত প্রান্তিক জীবনের বেঁচে থাকার লড়াই। শেখায় নিজের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে উঠতে।
ব্যাং ও রাজকুমারী, বরফ বুড়ো, আর সামন্ত প্রভুদের দুর্গের অভ্যন্তরে নানা কাহিনি দিয়ে যেন ঐ কাঁচা বয়সেই ‘শ্রেণি বৈষম্য’ চিনতে শেখার শুরু।
সোভিয়েত ম্যাগাজিনে রূপকথার গল্পগুলো সারাদিনের সঙ্গী ময়। মোবাইল গেম তখনও জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠেনি। পুজোর ছুটিতে পুজো বার্ষিকীর পাশাপাশি নজর থাকত বিদেশি বইতে। যাতে অবধারিত ভাবে লেগে থাকবে রাশিয়ার জলছাপ।
শুধু রূপকথার বই নয়, সঙ্গে বিষয় ভিত্তিক বইও মিলত। বিশেষ করে সোভিয়েত সাহিত্য। সরাসরি রুশ ভাষার সঙ্গে ছিল অনুবাদও।
আর একটু বড়দের জন্য ‘পাভেল’- এর গল্প।
বহু কিশোরের স্বপ্নে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিল পাভেল।
ছোটবেলার সেই মুগ্ধতা আজও থেকে গিয়েছে চোখে। ২০২০- আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় থিম রাশিয়া। ইতিহাসের উল্টো পথে হেঁটে যেন সত্তর ছোঁয়া পুরনো নস্ট্যালজিয়াতেই ফিরিয়ে দিচ্ছে বাঙালিকে।