রাজপরিবারের নিয়মকানুন

রাজা রাজড়াদের বাড়ি। শুনলেই মনে হয়, যেমন ইচ্ছে তেমন এখানকার স্বাধীনতা। এক হুকুমে হাজির হয়ে যাবে যেমনটা চাওয়া।

এই যদি আপনার ধারনা হয়, তাহলে আপনার সে ধারনা বেশ ভুল। রাজবাড়িতে এমন মুড়ি মুড়কির হারে যেমন ইচ্ছে তেমন’ এর স্বাধীনতা মেলে না। যেমন ধরুন আপনার খুব ইচ্ছে হল রাতে পাস্তা খেয়ে শুয়ে পড়বেন। আপনি তাই করলেন। চটপট রান্নাঘরে পছন্দ মত পাস্তা বানিয়ে ফেললেন। কিন্তু অনেক রাজবাড়িতেই সেটি চলবে না। ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্যালেসেই দেখুন না, রাজপ্রাসাদের ডিনারে পাস্তা বারণ। ছাড়পত্র দেননি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানেই রাজবাড়ির ডিনারে পাস্তা পাওয়া যায়। 

একই নিষেধাজ্ঞা রসুনের ক্ষেত্রেও। গন্ধযুক্ত কোনও সব্জি বা মশলা ব্যবহার হয় না ব্রিটিশ রাজ প্রাসাদে। প্রকৃতপক্ষে রাজবাড়িতে খাবারের ক্ষেত্রে কড়া নজর রাখেন স্বয়ং রানী এলিজাবেথ। ভাত আর আলুর ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।      

ব্রিটিশ রাজবাড়ির ব্রেকফাস্ট ঠিক করেছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্বয়ং। সম্পূর্ণ ইংলিশ- ব্রেকফাস্ট। প্রত্যেকদিন সকালে কর্নফ্লেক্স।

কাঁটাচামচ ব্যাবহারের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের কতকগুলো নির্দিষ্ট নিয়মরীতি আছে। ফর্ক অর্থাৎ কাঁটা সব সময় বাম হাতে থাকবে। কাঁটার মুখ থাকবে নিচের দিকে।

হাতে চা বা কফির কাপ ধরার ক্ষেত্রেও রয়্যাল এটিকেট মাস্ট। চা-এর কাপ হাতে ধরার সময় কাপের হাতলে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি, তর্জনী আর মধ্যমার ব্যবহার হবে। কফির কাপটা একটু আলাদা। কাপে কোনভাবেই লিপস্টিকের দাগ লাগা চলবে না।   

বাকিংহাম প্যালেসের ব্যাঙ্কোয়েট পার্টি, লাঞ্চ, ডিনার, সর্বত্রই ড্রেসকোড আছে। সেটা রাজ পরিবারের সদস্য, আমন্ত্রিত অতিথি প্রত্যেকেই মানতে বাধ্য থাকেন। প্রত্যেককে ট্রাডিশনাল ওয়েস্টার্ন’ পোশাকে থাকতে হয়। 

রাজবাড়ির ইভেন্টে ব্যাঙ্কোয়েটে সিটিং অর্ডার অর্থাৎ অভ্যাগতরা কে কোথায় কীভাবে বসবেন সেটা অনেক আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। পদ এবং মর্যাদা, বৈদেশিক বিষয়, সম্পর্ক গুরুত্ব অনুযায়ী আসন হয়। ভাষা, বয়সের মত একাধিক বিষয় আছে। যার ভিত্তিতে বাকিংহ্যাম প্যালেসের কর্মচারীরা বিষয়টি চূড়ান্ত করে।  

রানীর পাশে কারা থাকবেন, তাদের ভূমিকা, আচরণ সবটাই নির্ধারিত। রানীর বাম পাশে যিনি থাকবেন তার সঙ্গে ডিনারের প্রথমার্ধ পর্যন্ত রানী কোনও কথাই বলবেন না। তিনি কথা বা আলোচনা যা করবেন সবটাই ডানদিকে উপবিস্তের সঙ্গে। ডিনারের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি বামদিকে ঘুরবেন।

রানি যদি তাঁর পার্স টেবিলের ওপর রাখেন তার মানে পরবর্তী ৫ মিনিটের মধ্যে সমস্ত অতিথি অভ্যাগতকে তাদের খাওয়া শেষ করতে হবে।

রানীর খাওয়া শেষ হয়ে গেলেই বাকিদেরকেও খাওয়া থামিয়ে দিতে হবে। রানীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে।

রানি এলিজাবেথের পোষ্য দুই কুর্গি কুকুর। তাদের জন্যো রাজবাড়ির হেঁশেলে বিশেষ বন্দোবস্ত থাকে। ‘বাকিংহাম প্যালেসের পোষ্যদের নিয়ে লেখা একটি বইতে লেখক ব্রায়ান হে জানিয়েছেন, রানীর প্রিয় দুই পোষ্যকে প্রায়ই চিকেন ব্রেস্ট, বিফ স্টেক আর ফ্যান্সি ফুড সার্ভ করা হয়। তাদের খাওয়ার জন্য আলাদা ‘ফুডম্যান’ নির্ধারিত রয়েছে।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...