হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে আসছে ব্যাটসম্যান। নিল সামনের দিকে শট। চার.................অভাবনীয় জয় ভারতের। টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম ও শেষ বোল্ড আউট। বল করে স্টাম্পে মারতে হবে। বোলার আনকোরা। এল এবং 'ব্যাং অন টার্গেট'। ভারত পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল বিশ্বকাপে। বাঁহাতি বোলার একদম শর্ট পিচ ডেলিভারি করল। বুক চিতিয়ে ব্যাটসম্যান হাঁকাল ছক্কা। আইপিএলে এই লোকটা কি করে যাচ্ছে! নামলেই ৪০ প্লাস ছাড়া কথা নেই। এই ছোট্ট ছোট্ট ক্লিপিংসগুলো একসঙ্গে সাজালে যে ছবিটা ফুটে উঠবে সেটা রবিন উথাপ্পার।
অনেক প্রতিভা নিয়ে এসেছিলেন ভারতীয় দলে। আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ভারতীয় ক্রিকেটে কিছু ক্লিপিংস হয়ে থেকে গিয়েছেন। চিত্র ১: স্টুয়ার্ট ব্রডকে ওভাবে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে এসে একবার স্কুপ, একবার ডাউন দ্য গ্রাউন্ড শট। ভারত ওভালে জিতল ৩১৭ তাড়া করে। চিত্র ২: ইন্দো-পাক ম্যাচ। ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ। বোল্ড আউটে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। ধোনি বল করতে দিলেন উথাপ্পাকে। হেলে দুলে এসে স্ট্যাম্পে মেরে ক্যাপ খুলে কুড়িয়ে নিলেন অভিবাদন এবং ভারতের জয়। চিত্র ৩: ২০১৪ আইপিএল, কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে তিনি করেছিলেন ৬৬০ রান। কাপ জেতে কেকেআর। রবিন উথাপ্পা ২০১৪ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ছিলেন অবিশ্বাস্য ফর্মে। ৬৬০ রান করেছিলেন আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। টানা আট ইনিংসে ৪০-এর ওপর রান করেছিলেন, এর আগে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে এই কীর্তি এর আগে ছিল না কারোরই।
আসরে মোট ১১ বার খেলেছিলেন ৪০ পেরোনো ইনিংস, যা ছিল আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াগামী ভারত ‘এ’ দলে। বাংলাদেশ সফরে ফিরেছিলেন জাতীয় দলে। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠেও জায়গা পেয়েছিলেন দলে।
সৌজন্যে রবিন ১ - কলকাতা ইডেন গার্ডেনসে ১৩ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উথাপ্পা ক্রিজে আসেন ইনিংসের ৪১ তম ওভারে৷ তার সামনে ছিল ভালো একটা ইনিংস খেলে পরের বছর বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাকা করে নেয়ার হাতছানি। উথাপ্পা যখন ক্রিজে এলেন, তখন ভারতের দলীয় স্কোর - ২৭৬/৪। রোহিত শর্মা অপরাজিত ১৩০ বলে ১৫৫ রান করে। অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যান যখন বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করছেন, তখন অপর ব্যাটসম্যানেরও হাত খুলে খেলার ইচ্ছা জাগাটা স্বাভাবিক। বিশেষ করে যখন আপনি রবিন উথাপ্পা এবং কালেভদ্রে দলে সুযোগ পান।
কিন্তু, উথাপ্পা নিজের কথা না ভেবে ভাবলেন দলের কথা, রোহিতের কথা। ৫৮ বলের জুটিতে নিজে খেললেন ১৬ বলে অপরাজিত ১৬ রানের ইনিংস। বাকি ৪৬ বলে রোহিত করলেন ১০৯। নন্দন কাননে চার-ছক্কার বৃষ্টি নন-স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখলেন উথাপ্পা। ১৬ বলের মধ্যে ১২ বলেই দৌঁড়ে এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিয়েছেন রোহিতকে। রোহিত করেছিলেন ২৬৩। এরপর কেবল চারটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন উথাপ্পা। বিশ্বকাপটা আর খেলা হয়নি। পরেও তাঁর আর সুযোগ আসেনি। আর রোহিত শর্মা হয়ে উঠেছেন মহীরূহ।
সৌজন্যে রবিন ২ - রবিন উথাপ্পা অবশ্য ফুলটাইম উইকেটরক্ষক নন, মূলত তিনি একজন ব্যাটসম্যান যিনি উইকেটকিপিংটাও দুর্দান্ত করেন। ২০০৭ এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলেও তিনি ছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবেই। তবে আইপিএলে তিনি নানা সময়ে খেলেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবেই। রবিন উথাপ্পা আইপিএল ম্যাচ খেলেছেন ১৮৯ টা, আর উইকেটরক্ষক হিসেবে তিনি ডিসমিস করেছেন ৯০টি'তে - ৫৮ ক্যাচ আর ৩২ স্টাম্প আউট।
সৌজন্যে রবিন ৩ - ভারতের ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়ের পিছনে রবিন উথাপ্পার অবদানও কম নয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি বেশ দূর্দান্ত ব্যাটিং করে থাকেন। কর্ণাটকের এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান ২৭৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। প্রায় ২৮ গড়ে ১৩৩ স্ট্রাইক রেটে ৬৮৬১ রান করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই তিনি টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেছেন। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে তিনি মোট ৩৮টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ৯২।
ক্যারিয়ারের প্রায় শেষদিকেই এসে পড়েছেন উথাপ্পা তবে এখনো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়ার আক্ষেপটা ঘুচানো হয়নি। আর এভাবেই হারিয়ে গিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। অথচ এই আইপিএলে ম্যাচের পর ম্যাচে বসে থেকে ঠিক তিনটে সুযোগ পেলেন। তাতেই চমক। রবিন উথাপ্পা এমনই।