রবিন সিং: হাল না ছাড়া দলের হার না মানা অলরাউন্ডার

যুবরাজ, কাইফের আগে বডি ছুঁড়ে ফিল্ডিং করার লোক ভারতীয় দলে ছিল না বললেই চলে। জাদেজা, আজহার এদের ফিল্ডিং যথেষ্ট ভালো ছিল কিন্তু আফসোস থাকত আমাদের জন্টির ধাঁচের কোনও ফিল্ডার নেই কেন! আফসোস মিটিয়েছিলেন রবিন সিং। যুবরাজ, ধোনি যুগের আগে ম্যাচ ফিনিশার তো ছিলেন ওই রবিন সিংই। কত হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন। অসংখ্য ক্যামিও ইনিংস যা ম্যাচের ভাগ্য ভারতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পার্টনারশিপ ভাঙছে না। রবিনের ডাক পড়ত, ও কাজে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি।

 

টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। মাত্র একটা টেস্ট খেলেছিলেন। পরিসংখ্যান বলছে, একদিনের ক্রিকেট হাফ সেঞ্চুরি ৯টা, ১টা সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ১০০। তাতে কী? আপনার ব্যাট থেকে মহামূল্যবান সময়ে যদি খান পঁচিশ তিরিশ রান ম্যাচটা আপনার দলের দিকে নিয়ে যায় তাহলে চুলোয় যাক পরিসংখ্যান। ম্যাচ উইনার, ফিনিশার, দুরন্ত ফিল্ডার, পার্টনারশিপ ব্রেকার। এই সবগুলো কথা রবিন সিং এর জন্যই প্রযোজ্য।

robinsingh1

পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনালে ভারতের বিশ্ব রেকর্ড করা ৩১৪ তাড়া করে জয়। সৌরভের গাঙ্গুলির ১২৪-এর সঙ্গে রবিনের ৮২ রানের অনবদ্য ইনিংসকে ভুলে গেলে চলবে না। সৌরভের সঙ্গে ওই পার্টনারশিপ না হলে ভারত ম্যাচ জেতার জায়গাতেই আসত না। শুধু এটা না, জাদেজার সাথে পার্টনারশিপে অসংখ্য বার কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বের করে এনেছেন। কাউকে না পেলে রবিন একই ম্যাচ বার করতেন। ১৮ বলে ৩০ রানের অসংখ্য ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। অনেক বয়সে স্থায়ীভাবে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে মাঠে নামলেই বোঝা যেত এই খেলোয়াড়টি স্পেশ্যাল।

 

বোলিং এর কথায় আসা যাক। পার্টনারশিপ ব্রেক-এর এক নম্বর লোক। ছোট রান আপ, উইকেট টু উইকেট বল, মাঝে মাঝে হালকা স্যুইং। তাতেই বাজিমাত। ফিল্ডিং? তখন তো সেই হাত দেখানো কভার করার ইঙ্গিত দেওয়া ফিল্ডিং ভারতের। মাঝে মাঝে কয়েকটা ঝলক আসত। রবিন সিং পুরো বিষয়টা পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। দশটা রান বাঁচলে সচিনকে একটু কম চাপে পড়তে হয় আর কি। ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের তালিকায় তিনি পয়লা নম্বরে থাকবেন তা বলাই যায়।

robinsingh2

ত্রিনিদাদের প্রিন্সেস টাউনে ইন্দো-ত্রিনিদাদিয়ান ও টোবাগোনিয়ান পরিবারে রবিন সিংয়ের জন্ম। তাদের পূর্বপুরুষ রাজস্থানের আজমীরের। ১৯ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালে তিনি ভারতে স্থানান্তরিত হন এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ সময়ে ক্লাব ও কলেজ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন।


তামিলনাড়ুর ১৯৮৮ সালের রঞ্জি ট্রফি জয়ে বড় ভূমিকা ছিল রবিন সিংয়ের। ভারতীয় দলে জায়গা না পেয়ে বিদেশে গিয়ে কেরিয়ার গড়েছেন বহু ক্রিকেটার। একই হতে পারত রবিন সিংয়ের সঙ্গেও। লবির শিকার হয়েছিলেন। না হলে তার মতো ক্রিকেটার ১৯৮৯ সালে দলে এসেও একটাও ম্যাচ না পেয়ে পুরো সাত বছর দলের বাইরে থেকে যায়! রবিন সিং হাল না ছাড়ার দলের খেলোয়াড়। বাইরে না গিয়ে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পাসপোর্ট ত্যাগ করে ভারতেই থেকে যান। সুযোগ দিতে বাধ্য হয় আজহারের লবিও। কম সময়ে যা করেছেন তা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সোনা হয়ে রয়েছে।

robinsingh3

ক্রিকেট ছাড়ার পরে কোচিং করতে শুরু করেন। তার কোচিংয়েই হংকং ২০০৪ সালের এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে। ২০০৬ সালে ভারত 'এ' ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে মনোনীত হন। গৌতম গম্ভীর, রবিন উথাপ্পা’র মতো ক্রিকেটারদের সাপ্লাই লাইন ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ভারত জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ হন। 'এ' দলে অক্টোবর ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ফিল্ডিং কোচ হিসাবে। কোচ হিসেবে কাজ করছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং ইউনাইটেড আরব এমিরেটসের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...