নানা নামে দীপাবলি

কালীক্ষেত্র রূপে পরিচিত শহর কলকাতা ও বাংলায় দীপাবলি মানেই কালী পুজো। কিন্তু দেশের অন্য রাজ্যে দীপাবলি সময় অন্য উৎসব পালন করা হয়। বহু প্রাচীনকাল থেকে এই বিশেষ কিছু রীতি মেনে নানা উৎসব পালন করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনি কিছু অজানা উৎসব সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে নীচের নিবন্ধে।

Shutterstock_10990918i
পঞ্জাব- পঞ্জাবে হিন্দুদের দীপাবলি উৎসব যখন পালন করা হয় ঠিক তখন শিখরা 'বন্দি ছোড় দিবস' পালন করে। মোঘল আমলে সম্রাট জাহাঙ্গীর গুরু নানককে জনপ্রিয়তা দেখে তাকে জেলে বন্দি করেছিলেন। তারপর তাকে যখন এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার খুশিতে শিখরা 'বন্দি ছোড় দিবস' পালন করেন। প্রতি বছর দীপাবলির মতো এই বিশেষ দিনেও বাজি ফাটিয়ে ও চারিদিকে আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়।

পূর্ব ভারত- পূর্ব ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব হল কালীপুজো। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশা সহ বেশকিছু রাজ্যে দীপাবলির সময়ে খুব জাঁকজমকভাবে কালীপুজো উদযাপন করা হয়।

গুজরাট- গুজরাট পঞ্চমহল এলাকার বেশ কিছু গ্ৰামে দীপাবলির সময়ে বাজি জ্বালিয়ে একে অপরের গায়ে ছোড়ার রীতি রয়েছে। বহু বছর ধরে এই রীতি মেনে চলেছেন সেখানকার মানুষরা। অন্যদিকে গুজরাটের নর্মদা ও বারুচ জেলায় দীপাবলির দিনে থেকে মোট ১৫ দিন একটি উৎসব পালন করা হয়। যেখানে ভেষজগুণ সম্পন্ন গাছ পোড়ানো হয়। সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস ভেষজ এই ধোঁয়ার সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মধ্যপ্রদেশ- দীপাবলির সময়ে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িন জেলার বহু গ্ৰামে গোবর্ধন পুজো উদযাপন করা হয়। এই সময় গ্রামবাসীরা তাদের বাছুরকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে তার পুজো করা হয়। তার আগে পাঁচ দিন উপবাস থাকার পর এই নিয়ম পালন করতে হয়। বলা হয় দেবতাদের খুশি করতে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

হিমাচল প্রদেশ- এই রাজ্যের ধামি নামক এলাকায় দীপাবলির সময় 'পাথর কা মেলা' পালন করা হয়। দুটি দল একে অপরের উপর পাথর ছোড়ে আর সেই পাথরের আঘাতে যারা জখম হন তাদের রক্ত দিয়ে মা কালীর মূর্তির তিলক আঁকা হয়।

ছত্তিশগড়- এই রাজ্যের বস্তার অঞ্চলের আদিবাসীরা দীপাবলিকে 'দিয়ারি' রূপে উদযাপন করেন। 'দিয়ারি' উৎসবের শুরু হয়ে ভগবান নারায়ণের মূর্তির সঙ্গে শস্যের বস্তার বিবাহ দিয়ে। এখানে চাষ করা শস্যকে মা লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়। অন্যদিকে গ্ৰামের গবাদিপশুর মালিকদের সুর দিয়ে সম্মানিত করা হয়। গবাদিপশুকেও ফুল দিয়ে সাজিয়ে তাদের পুজো করা হয়।

ওড়িশা- দীপাবলির সময়ে ওড়িশায় কৌরিয়া কাঠি উদযাপন করে। এই সময়ে তাদের পূর্ব পুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতে পাট গাছের ডাল-পালা পোড়ানো হয়।

মহারাষ্ট্র- দীপাবলির সময়ে মহারাষ্ট্রে ধনত্রয়োদশী পালন করা হয়। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দীর্ঘ আয়ুর কামনায় যমরাজের পুজো করা হয়। যমরাজের সম্মানের বিশেষ ভাবে মাখা ময়দা পোড়ানো হয়।

গোয়া- দীপাবলির সময়ে গোয়ার রাস্তায় রাস্তায় নরকাশুরের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রাচীনকালে গোয়ার রাজা ছিল অত্যাচারী নরকাশুর। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে বধ করেছিল। তাই প্রতি বছর তার কুশপুতুল পোড়ানো হয় গোয়ায়।

কর্ণাটক- দীপাবলির প্রথম দিনেই কর্ণাটকে তেল দিয়ে স্নান করেন বহু মানুষ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে হত্যা করার পর গায়ে লেগে থাকে রক্ত ধোয়ার জন্য তেল স্নান করেছিলেন। সেই জন্য এই সময়ে তেল স্নান করেন কর্ণাটকের বহু মানুষ। এছাড়াও এই সময়ে জুয়া খেলার চল রয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...