হিন্দু শাস্ত্র মতে, দেবতাদের বাসস্থান হল ঋষিকেশ। বহু প্রাচীন এই তীর্থস্থানের রয়েছে অনেক ইতিহাস। হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর একটি নাম হল ঋষিকেশ। তার নাম থেকেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে মহান হিন্দু সাধক রাইভ্যায়া ঋষি এই স্থানে পবিত্র গঙ্গা নদীর তীরে দীর্ঘকাল তপস্যা করেছিলেন। ভগবান বিষ্ণুর সত্যযুগে হায়াগ্রীভা রূপ ধারণ করে মধু ও কৈতভ নামক রাক্ষসকে হত্যা করেছিলেন। কথায় আছে, রাক্ষসদের সঙ্গে ভগবান বিষ্ণুর যুদ্ধটি ৫০০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। তারপর তাদের হত্যা করার পর, ভগবান তপস্যা করতে বনে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি রাইভ্যায়া ঋষিকে ধ্যানরত অবস্থায় দেখেছিলেন। স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, যে রাইভ্যায়া ঋষির তপস্যা দেখে ভগবান বিষ্ণু হৃষিকেশের অবতারে তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তখন থেকেই অঞ্চলটি ঋষিকেশ নামে পরিচিত। ষষ্ঠ শতাব্দীর সময় আদি শঙ্করাচার্য এই অঞ্চলে বেশ কিছু মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে সেগুলি হিন্দু ভক্তদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান রূপে পরিচিত।
তবে শুধু মাত্র তীর্থস্থান নয়, পর্যটকদের সেরা ভ্রমণকেন্দ্রগুলির তালিকাতেও নাম রয়েছে ঋষিকেশের। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে হিন্দুদের পবিত্র গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। পাহাড়ে ঘেরা ঋষিকেশ শহরের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই নদী। তাই এই স্থানে নদীর জল প্রবাহিত হওয়ার শব্দ ও মন্দিরের আরতির সুর মুগ্ধ করে দেয় বহু পর্যটকদের। এখানে পর্যটকদের জন্যে ওয়াটার রাফটিং, ট্রেকিং, ক্লিফ-জাম্পিং, রিভার ক্রসিং, রক ক্লাইম্বিং, জিপ-লাইনিং এবং বাঞ্জি জাম্পিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও পর্যটকদের জন্যে ত্রিবেণী ঘাট, লক্ষণ ঝুলা, রাম ঝুলা, শিবপুরী, প্রমোথ নিকেতন আশ্রম, তেরা মানজিল মন্দিরের মতো দর্শণীয় স্থান রয়েছে। প্রতি বছর দিওয়ালি, হোলি ছাড়াও যোগা দিবস, কায়াক উৎসব, বসন্তপঞ্চমী ও দশেরা উৎসবের সময় প্রচুর পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা যায় ঋষিকেশে। এক দিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অন্যদিকে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির ছোয়া পাওয়া যায় এখানে।
উত্তর ভারতীয় খাবার যেমন ভাত, ডাল, রুটি, পরোটা, পনির, কোফতার পাশাপাশি মেক্সিকান, চাইনিজ, ইটালিয়ান, আমেরিকান খাবার পাওয়া যায় এখানকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। কিন্তু আমিষ জাতীয় খাবার ও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের অবস্থিত ঋষিকেশ শহরটির কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ১,৭৪৮ কিলোমিটার। রেল পথ ও আকাশ পথে এখানে আসার যাবে। তবে বিমানে কলকাতা থেকে চন্ডীগড় আসতে হবে প্রথমে। তারপর সেখান থেকে সড়ক পথে ঋষিকেশ আসতে হবে।