দীর্ঘ এগারো বছরের প্রতীক্ষার পর আবারও তরুন মজুমদার। ২০০৭-এ ‘চাঁদের বাড়ি’, ২০১৮-তে ‘ভালবাসার বাড়ি’। দুই বাড়ির গল্পই সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত’র। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ছবিজীবনে নিজের গল্পের চিত্রনাট্যে বেশ কিছু ছবি করলেও, মূলত সাহিত্যনির্ভর ছবি করতেই তনুবাবু বেশি পছন্দ করেন। তাঁর ছবিতে থাকে আদ্যন্ত বাঙালিয়ানা, বাঙালির মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না-রোমান্স-রোমান্টিকতা। যৌথজীবনে বেঁচে থাকার স্বাদ। আর গল্পপ্রিয় বাঙালির জন্য থাকে একটি নিটোল গল্প।
সেই গল্পের সূত্র ধরেই ‘ভালবাসার বাড়ি’-তে আমরা ঢুকে পড়ি স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে কায়ক্লেশে অর্থকষ্টে বেঁচে থাকা কারখানার কর্মী বছর পঞ্চান্নর ভবেশের জীবনে। কিন্তু হঠাৎ করে সেই কাজও তার চলে যায়। তখন গান শিখিয়ে, ট্র্যাভেল এজেন্সীতে চাকরি করে বড় মেয়ে বুলি সংসারটাকে সাপোর্ট দিতে চেষ্টা করে। ট্র্যাভেল এজেন্সীতে কল্যাণের সঙ্গে আলাপ হয়। প্রেম আসে। বাড়ি থেকে সর্বস্বপণ করেও বড়লোকের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে মেয়ের সুখ কেনার চেষ্টা চলে। বাবার সঙ্গে বুলির বোঝাবুঝি শুরু হয়। শেষে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির অবসানে ছবির সুখ সমাপ্তি ঘটে।
গল্পের এই চেনা স্ট্রাকচারের মধ্যেই এবার পেলাম এক অন্য তনুবাবুকে। এ-ছবিতে একই সঙ্গে যেমন আছে সব হারানো মানুষের যৌথ লড়াইয়ের কথা, শ্রেনী সংগ্রামের কথা, ফ্ল্যাট কালচারেও মানুষের পাশে মানুষের এসে দাঁড়ানোর কথা, খালপাড়ের লোকের মানবতার কথা, নারী স্বাধীনতার কথা; তেমনি আছে দুটি মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়ের মিষ্টি প্রেমের কথাও। এ-ছবির সবচেয়ে বড় সম্পদ ঋতুপর্ণা, প্রতীক, বিভাস চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদারসহ সকলের দুর্দান্ত অভিনয়। সাতাশি বছরের তনুবাবুর এই ছবির অঙ্গে অঙ্গে তারুণ্য, সেই তারুণ্যের স্বাদ পেতে ছবিটা একবার দেখতেই হয়।