দেবী দুর্গা বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত। কুমোরটুলিতে জোরকদমে চলছে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ। করোনার ৪ বছর পর কুমোরটুলিতে দেখা দিয়েছে নতুন আলো। প্রতিমাশিল্পীরা চূড়ান্ত ব্যস্ত প্রতিমা নির্মাণে।
দুর্গা পুজো আসতে বেশ দেরি আছে, কিন্তু তার আগেই কুমোরটুলিতে বেজে উঠেছে পুজোর বাদ্যি। কুমোরটুলির মেটে ঘরের স্টুডিয়ো থেকে দেবী পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে।
বাঙালি এখন সব জায়গায়, সেটা প্যারিস হোক বা দুবাই, বাঙালিরা ছড়িয়ে আছে বিশ্বের নানা প্রান্তে।
বাঙালিরা জোট বেঁধে দুর্গা পুজো করছেন বিদেশে বছরের পর বছর। কুমোরটুলিতে তৈরী প্রতিমা যায় সেই সব পুজোতে। তাই শিল্পীদের প্রতিমা প্রস্তুত করতে হয় অনেক আগে থেকেই। এখন ফাইবার গ্লাসের তৈরি ঠাকুরই বিদেশ যায়। আগে মাটির তৈরি প্রতিমা যেত, কিন্তু দীর্ঘযাত্রায় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চাই হাল্কা অথচ মজবুত ফাইবারের প্রতিমা। উচ্চতা ৮ থেকে ৯ ফুট। প্রতিমা তৈরি করে প্যাক করে দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব থাকে শিল্পীর, তারপর বাকি দায়িত্ব থাকে শিপমেন্ট সংস্থাগুলির হাতে।
কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা যায় কলকাতা বন্দরে এবং সেখান থেকে নিজেদের গন্তব্যে। জাহাজে আমেরিকায় পাড়ি দিতে সময় লাগে অন্তত দুই থেকে তিন মাস। ইউরোপের দেশগুলিতে দেড় থেকে এক মাসে পৌঁছে যায় ঠাকুর।
প্রবাসীদের ইচ্ছে অনুযায়ী ঠিক হয় ঠাকুরের উচ্চতা, একচালা, আবার কখনও পাঁচ চালার ঠাকুরও তৈরি হয়। চাহিদা বেশীরভাগ সাবেকি প্রতিমার। মাটির প্রতিমার চেয়ে ফাইবারের প্রতিমা তৈরি করতে সময়ও লাগে বেশি। সরঞ্জামের দাম থেকে মজুরি, খরচ সবই পড়ে অনেক বেশি। ২০২২ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হতে না হতেই ২০২৩ এর ঠাকুর যেগুলি বিদেশ যাবে তার বায়না শুরু হয়ে যায়।
কুমুরটুলি শিল্পীদের কাছে আলাদা করে কোন পুজোর সময় হয়ে না, সারা বছর কিছু না কিছু পুজোর কাজ হতেই থাকে। কুমোরটুলির শিল্পী কৌশিক ঘোষের তৈরি ৩০টির বেশী দুর্গা প্রতিমা এবারে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। তার মধ্যে ১৬-১৭ টি চলে গেছে।
বিখ্যাত শিল্পী মিন্টু পালের তৈরি ৮টি দুর্গা প্রতিমা যাচ্ছে বিদেশে। এরই মধ্যে দুটি প্রতিমা চলে গেছে আমেরিকাতে, জার্মানির প্রতিমা এখন রঙ হচ্ছে। শুধু দুর্গা নয়, প্রস্তুত হচ্ছে দুটি কালী মূর্তিও বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য। আর এক শিল্পী সুবল পাল, তাঁর ফাইবারের দুর্গা প্রতিমা প্রতিবার বিদেশে পাড়ি দেয়। এবারও ৪টি দুর্গা গেছে ফ্রান্সে, কয়েকটি এখন আমেরিকার পথে। এখনও তিনি তৈরি করছেন ৫-৬টি প্রতিমা যেগুলোর সামনের মাসেই শিপমেন্ট হবে। শিল্পীরা জানিয়েছেন, এখনও অর্ডার আসতে পারে কারণ অনেক সময় আছে তাঁদের কাছে।
একইসঙ্গে বাংলার পুজোর জন্য কুমোরটুলির ঘরে ঘরে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কাঠামো পুজো, মাটি তোলা, প্রতিমা গড়া, তারপর প্রতিমায় রং পড়বে, ভিড় বাড়বে কুমোরটুলির সরু গলিটাতে। দুর্গা পুজো প্রতিবছর উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে। কুমোরটুলিতেও বাড়ছে প্রতিমা তৈরীর সংখ্যা। শুধু বিদেশ নয়, রাজ্যের বাইরে বাড়ছে কুমোরটুলির প্রতিমার চাহিদা।